এবারের পর্ব
১.মহাকাশে চীনের তৃতীয় নারী নভোচারী ওয়াং হাও চ্য
২. হোম স্টে ব্যবসায় সাফল্য দেখছেন লি লি
৩. শিল্পী আন নিয়ানছুর অনন্য ভুবন
নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন।
আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর সাফল্য, সমস্যা, সম্ভাবনা ও এগিয়ে যাওয়ার পথ চলা নিয়ে। আমরা কথা বলি মানুষের অধিকার নিয়ে।
আজকের অনুষ্ঠানে রয়েছে চীনের মহাকাশ মিশন শেনচৌ ১৯ এর নারী নভোচারী ওয়াং হাও চ্য এর কথা, রয়েছে হোম স্টে ব্যবসায় নারীর সাফল্য লাভের গল্প এবং তরুণী শিল্পী আন নিয়ানছুর অনন্য ভুবনের কথা।
মহাকাশে চীনের তৃতীয় নারী নভোচারী ওয়াং হাও চ্য
চীনের নারীদের দৌড় আকাশ ছোঁয়া । সব ধরণের পেশায় সমানভাবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তারা। সম্প্রতি দেশটির মহাকাশ মিশনে চীনের তৃতীয় নারী নভোচারী হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন ওয়াং হাও চ্য। আজকে শুনবো অদম্য ছুটে চলা এই নারীর গল্প নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন। শোনাবেন আফরিন মিম।
৩৪ বছর বয়সী ওয়াং হাও চ্য । শেনচৌ ১৯ নভোযানের যাত্রায় তৃতীয় নারী নভোচারী। পাশাপাশি তিনিই প্রথম প্রকৌশলী যিনি এই নভোচারীর দায়িত্ব পালন করছেন। মহাশূন্য বিজ্ঞান প্রযুক্তি গ্রুপ লিমিডেট কোম্পানির একজন মহাকাশযান প্রকৌশলী ছিলেন। বর্তমানে পিপলস লিবারেশন আর্মি অ্যাস্ট্রোনট ডিভিশনের সদস্য। ২০২০ সালে ওয়াং চীনা মহাকাশচারীদের তৃতীয় ব্যাচে নির্বাচিত হন।
ওয়াং মনে করেন রকেট ইঞ্জিন ডিজাইনার থেকে মহাকাশ ফ্লাইট প্রকৌশলী হিসেবে পরিবর্তিত হলেও, দেশের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি এবং আদর্শ অপরিবর্তিত রয়েছে এবং থাকবে।
তিনি বলেন, "রকেট তৈরি থেকে শুরু করে তাতে চড়া, মহাকাশ মিশনে সমর্থন করা থেকে নিজেই এতে অংশগ্রহণ করা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া, আমি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি,"।
ওয়াং ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানব মহাকাশযাত্রার সাফল্য তুলে ধরে বলেন, 'শেনচৌ ৫' এর উৎক্ষেপণ থেকে স্পেস স্টেশনের কার্যক্রম, চীনাদের মহাকাশে যাওয়া থেকে উচ্চ প্রযুক্তির মহাকাশ বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত সাফল্য, প্রতিটি সূক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা সকল মহাকাশ পেশাদারের বুদ্ধিমত্তা, অধ্যবসায় এবং নিষ্ঠা দেখতে পাই।‘
এবারের মিশনে মহাকাশ বিজ্ঞান পরীক্ষা এবং স্পেস স্টেশন ব্যবস্থাপনায় কাজ করবেন ওয়াং। মূলত স্পেস পরীক্ষার প্রকল্প, উপাদান ব্যবস্থাপনা এবং স্টেশন পরিচালনায় বিশেষ দায়িত্ব পালন করবেন এই নারী।
ওয়াং বলেন, এই মিশনে আমরা তিনজনই অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে একসঙ্গে কাজ করবো। এখানে কোনো নিখুঁত ব্যক্তি নেই, শুধু নিখুঁত দল। আমি বিশ্বাস করি, মিশন কমান্ডারের নির্দেশনায় এবং গ্রাউন্ড টিমের সহযোগিতায় আমাদের মিশন সফল হবে”।
এবারের মহাকাশ মিশনে দায়িত্ব পাওয়ায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছেন ওয়াং। ব্যক্তিগত মূল্যবোধকে দেশের প্রয়োজনের সঙ্গে মেলাতে পেরে খুশি এই নারী। এখন অপেক্ষা তার সফল হওয়ার।
শেনচৌ ১৯ ওয়াং হাও চ্যসহ দুই নভোচারী নিয়ে মহাকাশে যাত্রা শুরু করে ৩০ অক্টোবর ভোর ৪টা ২৭ মিনিটে। চীনের কানসু প্রদেশের চিউছুয়ান স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় এই মহাকাশযান।
এটি মহাশূন্য স্টেশনের প্রয়োগে চতুর্থবারের মানববাহী কার্যক্রম এবং চীনের মানববাহী নভোযানের ৩৩তম যাত্রা। এবারের মিশনের মূল কাজ শেনচৌ ১৮ নভোযানের ক্রুদের সঙ্গে দায়িত্ব বিনিময় করা, মহাশূন্য স্টেশনে প্রায় ছয় মাস থাকা এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, নভোযান থেকে বের হয়ে মালপরিবহন ক্যাবিনেটে যাওয়া-আসা, মহাশূন্য স্টেশনের ধ্বংসাবশেষ সুরক্ষা ডিভাইস স্থাপন করা এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তির শিক্ষা ক্লাস চালু করা।
চায়না ম্যান্ড স্পেস এজেন্সি জানায়, শেনচৌ ১৯ নভোচারীরা থিয়ানচৌ ৮ মালবাহী নভোযান এবং শেনচৌ ২০ নভোচারীদের সফরের অপেক্ষা করবেন। আগামী বছরের এপ্রিল মাসের শেষ দিকে বা মে মাসের শুরুতে তারা পৃথিবীতে ফিরে আসবেন।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া
হোম স্টে ব্যবসায় সাফল্য দেখছেন লি লি
চীনের অনেক নারী এখন পর্যটন ব্যবসায় সাফল্য অর্জন করেছেন। বিশেষ করে হোম স্টে ব্যবসা করে তারা গড়ে নিয়েছেন নিজেদের ক্যারিয়ার। চলুন শোনা যাক এমনি একটি রিসোর্ট শান হাই থিয়ানের কথা যেখানে অনেক নারী কর্মী কাজ করছেন। বলবেন হোসনে মোবারক সৌরভ
পূর্ব চীনের শানতোং প্রদেশ । এখানে ইয়েলো সির তীরে এক ছোট শহর রিচাও। এখানে একটি বড় রিসোর্ট এলাকা শান হাই থিয়ান। চীনা ভাষায় যার অর্থ পাহাড়, সাগর ও আকাশ। পাহাড় ও সাগরের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যকে পুঁজি করে এখানে অনেকে ছোট ছোট হোমস্টে গড়ে তুলেছেন। এই সব হোমস্টেতে অনেক নারী চাকরি করছেন।
একটি হোম স্টে পরিচালনা করেন লি লি। তিনি নিজের বাসস্থানের সঙ্গেই এই হোম স্টে গড়ে তুলেছেন। শুধু পাহাড় ও সমুদ্র নয়, এখানে রয়েছে অনেক চা বাগান। লি লি তার হোম স্টেতে আসা পর্যটকদের জন্য বিশেষ কিছু ব্যবস্থা রেখেছেন। যেমন চা বাগানে ভ্রমণ, খোলা আকাশের নিচে ক্যাম্পিং ইত্যাদি। আরও রয়েছে স্থানীয় কুইজিন উপভোগের সুযোগ। হোম স্টেগুলোতে আসা পর্যটকরা নিজের রুচিমতো কাস্টমাইজড ফুড উপভোগ করতে পারেন।
লি লি তার হোমস্টের গ্রাহকদের জন্য স্থানীয় সংস্কৃতিকেও তুলে ধরেন। শানতোং প্রদেশের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানকার লোকজ সংস্কৃতি উপভোগ করার জন্যও এই হোম স্টেগুলোতে পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্থানীয় অনেক নারী এসব হোম স্টেগুলোতে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। ঘর গুছানো, খাবার তৈরি, কফির নকশা তৈরি সব বিষয়েই নারীরা তাদের গৃহস্থালি কাজের স্বাভাবিক দক্ষতাকে ব্যবহার করে হোমস্টের অতিথিদের ঘরোয়া আমেজ দিতে চেষ্টা করেন।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: আফরিন মিম
শিল্পী আন নিয়ানছুর অনন্য ভুবন
কুইচোও প্রদেশের এক তরুণী আন নিয়ানছু। তিনি কিভাবে চীনের সিচাং অঞ্চলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে অনন্য সব শিল্প সৃষ্টি করলেন শুনবো সেই গল্প।
আন নিয়ানছু একজন তরুনী শিল্পী। কুইচোও প্রদেশের কুইইয়াং শহরের বাসিন্দা তিনি।
কুইইয়াং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেন। ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো তিনি চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিচাং ভ্রমণ করেন। তিনি সিচাংয়ের রাজধানী লাসার প্রশাসনিক এলাকার অন্তর্ভুক্ত ছা গ্রামে বেড়াতে যান। এই গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করে। তিনি সিচাংয়ের মানুষদের আন্তরিকতা ও আতিথেয়তায় মুগ্ধ হন।
আন সিচাংয়ের সৌন্দর্যকে তার শিল্পকর্মে তুলে ধরার কথা ভাবেন। তিনি প্রথমে লাসার বিভিন্ন গেস্ট হাউজ ও রেস্টুরেন্টে সিচাংয়ের অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি আঁকেন।
২০২২ সালে তিনি বিভিন্ন ম্যুরাল তৈরি করা শুরু করেন। লাসার দাগজে জেলায় তিনি ম্যুরালের মাধ্যমে সিচাংয়ের সংস্কৃতি ও প্রকৃতি তুলে ধরা শুরু করেন। দুই মাসের প্রকল্পে ২০টি গৃহস্থালিতে ২০০০ বর্গ মিটার দেয়াল জুড়ে তিনি ম্যুরাল তৈরি করেন।
এই ম্যুরাল তৈরির ফলে পর্যটন ব্যবসাতেও প্রভাব পড়ে। অনেক পর্যটক এই ম্যুরালগুলো দেখার জন্য এই স্থান ভ্রমণ করেন।
ছা গ্রামের বিভিন্ন স্থানে তার ম্যুরাল রয়েছে। এই ম্যুরাল বিষয়ে কয়েকজন ইন্টারনেট ব্লগার প্রচার করেন। এর ফলে এই শিল্পকর্ম বিষয়ে অনেক মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়। অনেকে সিচাং বেড়াতে এসে ছা গ্রাম ভ্রমণ করেন শুধুমাত্র ম্যুরালের আকর্ষণে। অনেকে ছা গ্রামের নাম শোনেন এই ম্যুরালের সুবাদে।
এর ফলে এখানকার স্থানীয় পর্যটন শিল্প বিকশিত হয়েছে। আন নিয়ানছুর শিল্পকর্ম রয়েছে এমন গেস্ট হাউজ ও হোমস্টেগুলো ভালো ব্যবসা করছে।
আন নিয়ানছু তার শিল্প প্যাকেজের মাধ্যমে পুরো এরাকার সৌন্দর্য, সংস্কৃতি, আতিথেয়তা ও ভালোবাসাকে তুলে ধরেছেন।
আন নিয়ানছু বলেন, তিনি তার শিল্পকর্মের মাধ্যমে ছা গ্রামের মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চেষ্টা করেছেন। তিনি ছা গ্রামকে তার শিল্পকর্মে স্থায়ী করে রাখতে চান। তার ইচ্ছা সিচাংয়ের আরও অনেক গ্রামে এভাবে ম্যুরাল তৈরি করার। এর মাধ্যমে আধুনিক ও ঐতিহ্যবাহী সিচাংয়ের প্রকৃতি এবং মানুষের যে সহাবস্থান এবং সিচাংয়ের সংস্কৃতির যে অনন্য সম্পদ তা সকলের কাছে তুলে ধরবেন তিনি।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: আফরিন মিম
আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠান শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। আগামি অনুষ্ঠানে শোনার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ