চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে বেইজিংয়ের মহাগণভবনে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাবের সঙ্গে বৈঠক করেন। সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, চীন ফিনল্যান্ডের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার করতে, ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব প্রচার করতে এবং চীন-ফিনল্যান্ডের ভবিষ্যৎমুখী নতুন সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক উন্নত করতে চায়। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমরা এ বিষয়টিতে আলোকপাত করবো।
বৈঠকে সি চিন পিং, চীন-ফিনল্যান্ড সম্পর্কের উন্নয়নের উচ্চ মূল্যায়ন করেন। তিনি বলেন, ফিনল্যান্ড হল গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠাকারী প্রথম পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে একটি, এবং চীনের সঙ্গে আন্তঃসরকারি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরকারী প্রথম পশ্চিমা দেশ। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে চীন ও ফিনল্যান্ড সবসময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে, পরস্পরকে সম্মান ও বিশ্বাস করে এবং ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পার্থক্য অতিক্রম করে সমান বিনিময়ের উদাহরণ স্থাপন করেছে।
সি চিন পিং বলেন, বর্তমান বিশ্বের অভূতপূর্ব পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে, মানব সমাজ আরও বেশি ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে চীন-ফিনল্যান্ড ভবিষ্যৎমুখী নতুন সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্কের অনন্য মূল্য রয়েছে। চীন, ফিনল্যান্ডের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার করতে, ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব প্রচার করতে এবং চীন-ফিনল্যান্ডের ভবিষ্যৎমুখী নতুন সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক সামনে এগিয়ে নিতে চায়, দু’দেশ ও দু’দেশের জনগণের উপকার করবে এবং বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নে নতুন অবদান রাখবে।
সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, চীন-ফিনল্যান্ড সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদী, সুস্থ ও স্থিতিশীল উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, দু’দেশ সবসময় পরস্পরকে সম্মান করা, সমানভাবে আচরণ করে এবং পারস্পরিক মূল স্বার্থ ও প্রধান উদ্বেগের যত্ন নেয়। চীন-ফিনল্যান্ডের বাস্তব সহযোগিতা খুব আগে শুরু হয়, অনেক ফলাফলও অর্জিত হয়েছে এবং বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে অনুষ্ঠিত সিপিসি’র ২০তম কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন সার্বিকভাবে সংস্কার গভীরতর করা ও চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন উন্নয়নের জন্য পদ্ধতিগত ব্যবস্থা করেছে, যা চীন-ফিনল্যান্ড সহযোগিতা ও বৈশ্বিক উন্নয়নে নতুন চালিকাশক্তি ও সুযোগ এনে দেবে। চীন, ফিনল্যান্ডকে চীনের আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে, সবুজ রূপান্তর, তথ্য প্রযুক্তি, ডিজিটাল অর্থনীতি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, নতুন জ্বালানি ইত্যাদি উদীয়মান শিল্পে সহযোগিতা সম্প্রসারণ করতে এবং দু’দেশের কল্যাণমূলক সহযোগিতার নতুন কাঠামো গড়ে তুলতে স্বাগত জানায়। চীন, ফিনল্যান্ডের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময় আরও প্রসারিত করতে চায়, ফিনল্যান্ডকে একতরফা ভিসা-মুক্ত নীতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আরও বেশি ফিনিশ বন্ধুদেরকে ব্যবসা, পর্যটন ও অধ্যয়নের জন্য চীনে আসতে স্বাগত জানায়।
সি চিন পিং আরও বলেন, চীন ও ফিনল্যান্ড উভয়ই শান্তি, বহুপক্ষবাদ ও অবাধবাণিজ্যের পক্ষে। চীন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে ফিনল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা জোরদার করতে ইচ্ছুক, একইসঙ্গে বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা, সমান ও সুশৃঙ্খল বিশ্বের বহুমুখীতা এবং সহনশীল অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের জন্য কাজ করবে। আগামী বছর হল চীন ও ইইউ কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী। চীন আশা করে ফিনল্যান্ড চীন-ইইউ সম্পর্ক সুস্থ, স্থিতিশীল উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে, চীন-ফিনল্যান্ড সম্পর্ক, চীন-ইইউ সম্পর্কের অভিন্ন উন্নয়ন বাস্তবায়ন করবে।
বৈঠকে স্টাব বলেন, ২০০৯ সালে প্রথমবার চীনে সফর করার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বে বড় পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবর্তন হল চীন অকল্পনীয় উন্নয়ন সাধন করেছে।
স্টাব বলেন, ফিনল্যান্ড এক-চীন নীতি সমর্থন করে। আগামী বছর হল ফিনল্যান্ড-চীন কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী, এই উপলক্ষে চীনের সঙ্গে উচ্চ-পর্যায়ের যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ করতে, সাংস্কৃতিক বিনিময় সম্প্রসারণ করতে, বাণিজ্যিক বিনিময়, সবুজ জ্বলানি, টেকসই উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রের বাস্তব সহযোগিতা জোরদার করতে চায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ছোট বা বড় দেশ সবাই সমান- চীনের এ ধারনার প্রশংসা করে ফিনল্যান্ড। প্রেসিডেন্ট সি উত্থাপিত বৈশ্বিক উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে চীনের গঠনমূলক ভূমিকার প্রশংসা করে। ফিনল্যান্ড, চীনের সঙ্গে বহুপাক্ষিক যোগাযোগ ও সমন্বয় জোরদার করতে চায়, বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য অবদান রাখতে চায়। তিনি আরও বলেন, ইউরোপ ও চীনের অর্থনীতি ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত, ‘সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ও নতুন স্নায়ু যুদ্ধ’ যে কোনো পক্ষের স্বার্থের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। ফিনল্যান্ড ইইউ-চীন সম্পর্ক মসৃণ উন্নয়ন প্রচারে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক।
দু’পক্ষ ইউক্রেন ও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গভীরভাবে মতবিনিময় করেছে। সি চিন পিং চীনের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, চীন ফিনল্যান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে চায়।
বৈঠকের শেষে দুই নেতা শিক্ষা, জলসেচ, পরিবেশ সংরক্ষণ, বৃত্তাকার অর্থনীতি, কৃষি ও খাদ্য পণ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন। দু’পক্ষ ‘চীন-ফিনল্যান্ড ভবিষ্যতমুখী নতুন সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রচারের যৌথ পরিকল্পনা (২০২৫-২০২৯) প্রকাশ করেছে।
(তুহিনা/হাশিম/স্বর্ণা)