‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
৯৩ তম পর্বে যা যা থাকছে:
১. বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের
২. সুচৌতে অনুষ্ঠিত বিশ্বখ্যাত সঙ্গীত উৎসব তরুণদের পদচারণায় মুখোর
৩. চীনে স্নাতকদের জন্য ৯ মাসে ১ কোটির বেশি নতুন চাকরি
১. বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের
একটি দেশের জনসংখ্যাকে রূপান্তর করতে হবে মানবসম্পদে, প্রয়োজন শিক্ষা। যে জ্ঞান একজন মানুষকে পরিপূর্ণ করে তোলে...নৈতিকতা আর মূল্যবোধে।
স্বাধীনতার পর শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে কয়েক ধাপে, তবে থেকেই গেছে তর্ক-বিতর্ক। যুগোপযোগী করতে বারবার সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব।
চলতি বছর ছাত্র জনতার জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের পর ফের জাগে আশার সঞ্চার। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল থেকে আসে- বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের নানা কথা।
উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বৃহৎ আকারের সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষ করে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু এবং বিষয়ভিত্তিক বৈষম্য দূর করার ওপর জোর দেন শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।
জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. এ. কে. এম রিয়াজুল হাসান জানান, প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক ২০২৫ শিক্ষাকার্যক্রমে ২০১২ সালের প্রণীত সিলেবাস অনুসরণ করে ২০২৬ এর জন্য তৈরী করা হবে নতুন কারিকুলাম।
শিক্ষার্থীদের তৈরি করতে শিক্ষকদের পুনর্গঠন সবচেয়ে বেশি জরুরি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এজন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং জীবনমান উন্নয়নে পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। এমনকি বোর্ড সার্টিফাইড শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা বৈষম্যবিরোধী হওয়া উচিৎ বলেও মনে করেন অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান।
এদিকে, প্রতিবেশি দেশ চীনের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির কথা জানতে চাইলে চীনে কর্মরত চীনের তালিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রাসেল জানান, ১৯৮০ সালের পর থেকে এই খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে দেশটির। তাঁরও রায় দক্ষ শিক্ষক তৈরীর পক্ষেই।
সম্প্রতি চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ১৯৫০ সাল থেকে মূলত চীনে নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়, যা পরিবর্তীতে দেশটির শিক্ষার চিত্রপট পালটে দেয়। গত ৭৫ বছরে দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। অথচ একসময় ৫৪ কোটি জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই ছিলো নিরক্ষর।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, দেশটির শিক্ষার মান উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে ২০১৯ সালে চালু করা হয়- "চীনের শিক্ষার আধুনিকীকরণ: ২০৩৫" উদ্যোগটি, লক্ষ্য চীনকে বৈশ্বিক শিক্ষার পাওয়ার হাউজ হিসেবে তৈরি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীনের আদলে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায়ও বড় ধরণের বদল আনা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে প্রয়োজন রাষ্ট্রের মহাপরিকল্পনা এবং শিক্ষাখাতে মোট জাতীয় উৎপাদনের কমপক্ষে শতকরা ৬ ভাগ ব্যয় নির্ধারণ।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
২. সুচৌতে অনুষ্ঠিত বিশ্বখ্যাত সঙ্গীত উৎসব তরুণদের পদচারণায় মুখোর
সাধারণত তরুণরা আধুনিক গানের কনসার্ট খুব পছন্দ করে। বিশেষ করে রক, পপ এবং অত্যাধুনিক মিউজিক ভিত্তিক গান তাদের বেশি পছন্দের তালিকায় থাকে। চীনা তরুণরাও এই ধরণের গানের আয়োজনে ঝুঁকছেন।
‘যখন পূর্বের সাথে পশ্চিমের দেখা হয়’ এই থিমে চীনের সুচৌয়ে মন্ট্রেক্স জ্যাজ ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি চিনচি লেকের পাশে বিশ্বখ্যাত এই সঙ্গীত উৎসবের আয়োজন করা হয়।
১০০ জন চীনা এবং বিদেশি সঙ্গীতশিল্পী তিন দিনের ইভেন্টে ২০টিরও বেশি পারফরমেন্স করেছেন। জ্যাজ, রক, ইলেকট্রনিক মিউজিক এবং পপ কভার করেন তারা। বিভিন্ন সঙ্গীত শৈলী দর্শক শ্রোতাদের ভীষণ আনন্দ দেয়।
এই আয়োজনে চীনা শ্রোতাদের অভিব্যক্তির কথা জানান মন্ট্রেক্স জ্যাজ আর্টিস্ট ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি জেনারেল ভিভিয়ান রিচনার রাউফ।
"চীনের একটি ছোট অংশ আবিষ্কার করা দারুণ ব্যাপার। কারণ তিন দিনের মধ্যে -- আমি অনেক কিছু দেখতে পাব না, তবে আমি সত্যিই দেখতে চাই যে চীনারা কীভাবে সংগীত উপভোগ করে। আমি দেখলাম, 'আর্থ, উইন্ড অ্যান্ড ফায়ার'-এর কনসার্টের সময় সবাই নাচছিলো। গানের মাধ্যমে আমরা একে অপরকে বুঝতে পারি। আবার কখনো কখনো গানের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ব্যবধান দূর হয়।’
"আর্থ, উইন্ড অ্যান্ড ফায়ার এক্সপেরিয়েন্স" আল ম্যাকে, বিশ্বের অন্যতম সেরা রিদম। এবারের আয়োজনে এটি শ্রোতাদের ভীষণ আনন্দ দেয়। এই উৎসব তৃতীয়বারের মতো চীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সুইস সঙ্গীত প্রবর্তক ক্লড নোবস, ২০১৩ সালে মারা যান। ১৯৬৭ সালে মন্ট্রেক্স জ্যাজ ফেস্টিভ্যাল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। পরবর্তীতে এটিকে সঙ্গীত প্রেমীদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক উত্সব এবং ইভেন্ট প্ল্যাটফর্ম হিসেবে তৈরি করা হয়।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
৩. চীনে স্নাতকদের জন্য ৯ মাসে ১ কোটির বেশি নতুন চাকরি
চীনের অর্থনীতি যত বাড়ছে তত বাড়ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। ২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসে দেশটিতে ১ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে এবং সামগ্রিক কর্মসংস্থান স্থিতিশীল রয়েছে। সম্প্রতি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে চীনের মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
চীন গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোয় নতুন কর্মী নিয়োগ করছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসা সেবা এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মতো কর্মসূচিতে ৪৩ হাজার কলেজ স্নাতককে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী