‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৯২
এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
২। হেমন্তে অপরূপ কুপেই ওয়াটার টাউন
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৯২ তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কিছু মনোরম সেতুকে এককথায় বলা যায় শিল্প। চারপাশের প্রকৃতির সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করে স্থপতিরা সাজিয়েছেন এগুলো। বিস্ময়কর এসব স্থাপত্য দেখলে শিহরিত হবেন যে কেউ। এমন কিছু সেতু নিয়ে এবারের আয়োজন। ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের পর আজ রইলো এশিয়া মহাদেশের চীনের আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন কয়েকটি মনোমুগ্ধকর সেতু।
ধনুক আকৃতির ব্রিজ লুপু। এই যেন রঙধনু ছড়িয়ে গেছে শাংহাইয়ের হুয়াংপু নদীর ওপর! শুধু যানবাহন চলাচলের জন্যই নয়, সেতুটি চীনের অন্যতম একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবেও বিখ্যাত। যেহেতু এটি ৩২৮ ফুট উঁচু, তাই এর চারপাশের দৃশ্য পরিষ্কারভাবেই উপভোগ করা যায়। এজন্য পাড়ি দিতে হবে ৩০০টি সিঁড়ি! এই সিঁড়ি উঠা যাবে লিফট ও এসকেলেটরের মাধ্যমে। শাংহাইয়ের লুয়ান ও হুয়াংপু জেলা দুটি নাম মিলিয়ে এর নামকরণ হয়েছে। হুয়াংপু ও পুতং জেলা দুটির মাঝে সেতুবন্ধন করে দিয়েছে এই লুপু ব্রিজ।
এটি বানাতে খরচ হয়েছে ৩০ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার। ২০০৩ সালের ২৮ জুন জনসাধারণের জন্য চালু করা হয় এই সেতু। ২০০৮ সালে এটিকে আউটস্ট্যান্ডিং স্ট্রাকচার অ্যাওয়ার্ড দেয় ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর ব্রিজ অ্যান্ড স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং।
সড়কপথে সিতু নদী পার হওয়ার অবলম্বন এই সেতু। হুবেই প্রদেশের দুই পাহাড়ের মাঝে বন্ধন তৈরি করে দেওয়া এর উচ্চতা ১ হাজার ৬০০ ফুটের চেয়েও বেশি। সেতুটির ডিজাইনে ইংরেজি ‘এইচ’ বর্ণ চোখে পড়বেই। এটি মনে করিয়ে দেবে চীনের রূপকথার ‘গোল্ডেন গেট’ বা স্বর্গের দুয়ারের কথা! এই সেতুটি চালু হয় ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর। এটি বানাতে খরচ হয়েছে ১০ কোটি মার্কিন ডলার।
ছোংছিং রাজ্যে বয়ে চলছে উশান ইয়াংজি নদী। এর ওপরেই ২০০৫ সালে চালু হয়েছে এই সেতু। এর উচ্চতা ৪৩০ ফুট। বিশ্বের ১০টি দীর্ঘ সেতুর তালিকায় রয়েছে এটি। সবুজ পাহাড়ের একপাশে উজ্জ্বল লাল রঙের ধনুক আকৃতির সেতুটি সবারই মন কাড়ার মতো। একইসঙ্গে বিশ্বে এমন আকৃতির সবচেয়ে দীর্ঘ সেতুগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এটি তৈরি খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ মার্কিন ডলার।
· চীনের পেইপান রিভার কুয়ানসিং হাইওয়ে ব্রিজ
কুইচৌ প্রদেশের কাছে অবস্থিত এই সেতু চালু হয় ২০০৩ সালে। এরপর ২০০৫ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু সেতুর তালিকায় শীর্ষস্থানে ছিল এটি। এর উচ্চতা ১ হাজার ২০১ ফুট। খরস্রোতা পেইপান নদীর ওপরে গড়ে তোলা হয়েছে সেতুটি। আকাশছোঁয়া পাহাড়ের রূপ সেতুটিকে এনে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
চীনের পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে বিশাল সাপের মতো চলে গেছে এই সেতু। চেচিয়াং প্রদেশের চিয়াংসি ও নিংপো পৌরসভার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে এটি। ২০০৮ সালের ১ মে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় হাংচৌ বে ব্রিজ। সেখান দিয়ে যাতায়াতের সময় মেঘ ছুঁয়ে ফেলবেন এক নিমিষে! সাগরে স্থাপিত বিশ্বের দীর্ঘতম ১০ সেতুর তালিকায় রয়েছে এটি।
· চীনের চেংইয়াং উইন্ড অ্যান্ড রেইন ব্রিজ
কুয়াংসির সাংচিয়াং কাউন্টির এই সেতুর ভিন্ন নির্মাণশৈলী এককথায় নজরকাড়া। এর পুরোটাই ঢাকা। বাইরে ছোট ছোট গম্বুজের মতো আকৃতি। এটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে কাঠ ও পাথর। সেখানকার সংখ্যালঘু তং সম্প্রদায় নিজেরাই এসব উপকরণ জোগাড় করে ১৯১২ সালে বানিয়েছে সেতুটি।
আজও তা একইরকম আছে! ৩৩ ফুট উঁচু সেতুটি পার হওয়ার সময়ে চারপাশের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ না পারবেন না! পাশেই আছে চা বাগান, লিঙ্কসি নদীর দিগন্তরেখা ও সবুজ পাহাড়!
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া
২। হেমন্তে অপরূপ কুপেই ওয়াটার টাউন
চীনের রাজধানী বেইজিং এখন অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। প্রকৃতির শোভা দেখতে যেতে পারেন কুপেই ওয়াটার টাউনে। বেইজিং শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে মহাপ্রাচীরের চিনশানলিং এবং সিমাথাই অংশের কাছাকাছি এই দর্শনীয় স্থান অবস্থিত।
এখানে শরৎ-হেমন্তকালে অরণ্যের গাছগুলো লাল-হলুদ সোনালি রঙের পাতায় সেজে ওঠে। এই শোভা দেখতে চাইলে যেতে পারেন এই টুরিস্ট স্পটে। এখানে আরও রয়েছে মিং ও ছিং রাজবংশের সময়কার কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন।
ইয়াং উতি এনসেসট্রাল হল নামের একটি ভবন রয়েছে। এখানে যে সৈন্যরা একসময় গ্রেট ওয়ালে পাহারা দিতেন তাদের কথা রয়েছে। সেইসঙ্গে জেনারেল ইয়াং উতির জীবন সম্পর্কেও এখানে জানা যাবে।
একটি ছোট পাহাড়ের উপর রয়েছে কুপেই চার্চ। ইউয়ান থোং প্যাগোডা নামে একটি চমৎকার স্থাপনা রয়েছে।
এখানে সপ্তাহান্তের ছুটিতে দুই দিন সময় হাতে নিয়ে যেতে পারলে ভালো। এই রিসোর্টে রাতে থাকার চমৎকার ব্যবস্থা রয়েছে। নৌকাভ্রমণ, গ্রেট ওয়ালে আরোহণের মাধ্যমে আনন্দময় সময় কাটানো যায়। কারুকার্য করা প্রাচীন সেতু এবং উত্তরচীনের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ইট-পাথরের বসত বাড়ি রয়েছে এখানে যা অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন।
এখানে ইয়িংহুয়া একাডেমি রয়েছে। এই একাডেমিতে ঐতিহ্যবাহী চীনা হস্তলিপি বা ট্র্যাডিশনাল ক্যালিগ্রাফির চর্চা করা হয়। পর্যটকরা একাডেমির প্রাঙ্গণে গাছের ছায়ায় বসে চীনা চায়ের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন, সেই সঙ্গে চীনের ঐতিহ্যবাহী ক্যালিগ্রাফি দেখতে পারেন।
কুপেই ওয়াটার টাউনের জনবসতির মধ্য দিয়ে হেঁটে চীনের ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা অনুভব করতে পারবেন। সেইসঙ্গে চীনা খাবারের স্বাদও নিতে পারবেন পর্যটকরা। এখানে চীনাখাবারের বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট আছে যার মধ্যে হালাল খাবারও রয়েছে।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী