মেকআপ ব্রাশ মেয়েদের কাছে সুপরিচিত একটি জিনিস। চীনের হ্যেনান প্রদেশের চৌখৌ শহরের লুই জেলা আগে ছিল একটি কৃষিপ্রধান এলাকা। কিন্তু মেকআপ ব্রাশ উত্পাদনের মাধ্যমে জেলাটি ধনী হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি লুই জেলার গল্প তুলে ধরবো।
লুই জেলায় ১৬০টিরও বেশি মেকআপ ব্রাশ কোম্পানি আছে। চীন থেকে যত মেকআপ ব্রাশ রপ্তানি হয়, তার ৯০ শতাংশই হয় এই জেলা থেকে। জেলাটি বছরে মেকআপ ব্রাশ বিক্রয় করে ১৩০০ কোটি ইউয়ানের।
ছিন ফাং হুয়া হলেন লুই জেলার চাংতিয়ান থানার একটি মেকআপ ব্রাশ কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক। তিনি বলেন, তাঁদের উত্পাদিত ব্রাশগুলোর ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। এ ছাড়া, তাঁদের ব্রাশ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চীনেও বিক্রয় হয়।
লুই জেলার প্রায় প্রতিটি পরিবার আগে ছাগল পালন করতেন। স্থানীয় বাসিন্দারা ছাগলের মাংস বিক্রয় করতেন। তবে এই ছাগলের চুল খুবই কম। এ দিয়ে কাশ্মীরী সোয়েটার বা কার্ডিগান তৈরি করা যায় না।
ঘটনাক্রমে, একজন স্থানীয় কৃষক আবিষ্কার করেন যে, এই ফেলে দেওয়া চুলগুলো লেজের চুলের কারখানায় বিক্রি করা যেতে পারে। দাম কম না। তখন থেকে অনেক স্থানীয় বাসিন্দা লেজের চুল প্রক্রিয়াকরণ কাজ শুরু করেন। ছিন’র পিতা একটি লেজের চুল প্রক্রিয়াকরণ কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
ছিন স্মরণ করে বলেন, আমি যখন ছোট, তখন আমার পরিবারের কারখানা খুবই ছোট ছিল। আমাদের গ্রামে এ ধরণের ছোট কারখানা প্রায় কয়েক ডজন ছিল। প্রায় প্রতি পরিবার এ ব্যবসা করতেন।
গত শতাব্দির ৯০-এর দশকে ৪৬ সহস্রাধিক স্থানীয় বাসিন্দা লেজের চুল প্রক্রিয়াকরণের কাজ করতেন। লুই জেলার ৪৬ হাজার জনেরও বেশি বাসিন্দা এ শিল্পে কাজ করতেন এবং বার্ষিক উত্পাদিত মূল্য ছিল ৩২০ কোটি ইউয়ান। তাঁদের উত্পাদিত পণ্য ২০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে রপ্তানি হতো।
স্থানীয় শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি, একক পণ্যের অসুবিধা এবং মূল প্রতিযোগিতার অভাব দেখা দিতে শুরু করে। লেজের চুল প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে লাভ ক্রমাগত সংকুচিত হতে থাকে। তখন থেকে লুই জেলার বাসিন্দারা বিদেশী মেকআপ ব্রাশ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ব্রাশ উত্পাদন শুরু করে।
এ সম্পর্কে ছিন বলেন, আগে আমরা ব্রাশের উপাদন উত্পাদন করতাম। বর্তমানে আমরা ব্রাশ তৈরী করি।
২০১৬ সালে বাইরে কাজ-করা বাসিন্দাদেরকে জন্মস্থানে ফিরিয়ে আনার জন্য লুই জেলা বিশেষ ব্যবস্থা নেয়। জেলাটিতে একটি বিশেষ মেকআপ শিল্প এলাকা নির্মিত হয় এবং প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উন্নয়ন তহবিল প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারখানা ভাড়ার ভর্তুকি দেওয়া হয়। ছিন’র পিতা নিজের মেকআপ ব্রাশ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে।
২০২২ সালে চীনা হালকা শিল্প ফেডারেশন লুই জেলাকে ‘চীনা মেকআপ ব্রাশ নগর’-এর মর্যাদা প্রদান করে।
শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি ছিন ফাং হুয়াসহ স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের ব্রান্ড গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। তাঁরা চীনা ব্রান্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে চান। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁর কোম্পানির ছয়টি ব্রান্ড আছে। ব্রাশ উত্পাদনের পাশাপাশি কোম্পানিটি ফালস আইলাশেসসহ বিভিন্ন মেকআপের পণ্য উত্পাদন করে।
উত্পাদন বাড়ানোর পাশাপাশি ছিন’র কোম্পানি পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে। বিদেশীরা দুই বা তিন মাসের মধ্যে ব্রাশ চেঞ্জ করেন। সেজন্য আমরা আরও বেশি পরিবেশবান্ধক উপাদান দিয়ে ব্রাশ তৈরীর চেষ্টা করি। বর্তমানে আমরা গমের খড় দিয়ে ব্রাশের হাতল তৈরী করি। এ ধরণের ব্রাশ বিদেশী বাজারগুলোয় জনপ্রিয়।
এখন পর্যন্ত লুই জেলার ৬০টিরও বেশি নিজস্ব ব্রান্ড আছে। বিউটি মেকআপ পেন ও এভিয়েশন ইন্সট্রুমেন্ট ব্রাশসহ ১৪টি বিভাগে এক শ’র বেশি পণ্য রয়েছে। এর মধ্যে ২১৪টি পেটেন্ট ও ৯০টিরও বেশি প্রযুক্তি পেটেন্ট আছে। এ ছাড়া, লুই জেলা প্রাদেশিক পর্যায়ের মেকআপ ব্রাশ মানদন্ড প্রণয়ন করেছে। বর্তমানে লুই জেলায় একটি ব্রাশের সম্পূর্ণ শিল্প-চেইন গড়ে তোলা হয়েছে। (ছাই/আলিম/ওয়াং হাইমান)