মানুষ ও প্রকৃতি ২০
2024-10-26 15:09:25

যা রয়েছে এবারের পর্বে

১. যুক্তরাষ্ট্রে দশ বছরের জন্য গিয়েছে দুই জায়ান্ট পান্ডা

২ টেকসই সংরক্ষণ পদ্ধতিতে শায়ানসি প্রদেশে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে

নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা  এমনভাবেই  দেখতে চাই  ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

সুপ্রিয় শ্রোতা, মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠানে থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।

আজকের অনুষ্ঠানে বলবো সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া দুই জায়ান্ট পান্ডার গল্প। আরও বলবো শায়ানসি প্রদেশে কিভাবে বন্য প্রাণীর সংখ্যা বাড়ছে সেই কথা।

যুক্তরাষ্ট্রে দশ বছরের জন্য গিয়েছে দুই জায়ান্ট পান্ডা

চীন থেকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে দুই জায়ান্ট পান্ডাকে। কিভাবে আর কেন তারা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছে সেই গল্প শুনবো প্রতিবেদনে।

চীন থেকে আসা  বিশেষ এক বিমান  নামলো যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির বিমান বন্দরে। সেই বিমানে রয়েছে দুই বিশেষ যাত্রী। তারা হলো পান্ডা জুটি পাও লি এবং ছিং পাও।

কেন আর কিভাবে তারা এখানে এসেছে? পাও লি এবং ছিং পাও দুজনেরই জন্ম দক্ষিণ পশ্চিম চীনের সিছুয়ান প্রদেশের জায়ান্ট পান্ডা প্রজনন ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে।

পুরুষ পান্ডা পাও লির নামের অর্থ সম্পদ এবং প্রাণবন্ত। তার জন্ম ২০২১ সালে। মেয়ে পান্ডা ছিং পাওর নামের অর্থ সবুজ ও সম্পদ। তার জন্ম একই সালে। সে পাও লির চেয়ে মাত্র একমাসের ছোট। দুটি পান্ডাই খুব হাসিখুশি স্বভাবের।তাদের দুজনের মধ্যে রয়েছে বেশ ভালো বন্ধুত্ব।

সম্প্রতি পাও লি এবং ছিং পাও চায়না কনজারভেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার ফর জায়ান্ট পান্ডাস (সিসিআরসিজিপি) এর তুচিয়াংইয়ান বেস থেকে রওনা হয়ে ছেংতু  শুয়াংলিউ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে। তারপরে তারা পরদিন ভোরে ওয়াশিংটন, ডিসি-র জাতীয় চিড়িয়াখানার উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ বিমানে চড়ে।

ফেডেক্স পানডা এক্সপ্রেস এর একটি বিশেষ বোয়িং ৭৭৭ বিমানে পরদিন স্থানীয় সময় সকাল দশটায়  ওয়াশিংটন পৌছায় পান্ডা যুগল।

এয়ারপোর্ট থেকে তাদের বিশেষ পরিবহনে পাঠানো হয়েছে স্মিথসোনিয়ানস ন্যাশনাল জু এবং কনজারভেশন বায়োলজি ইন্সটিটিউটে।

আন্তর্জাতিক জায়ান্ট পান্ডা সুরক্ষা সহযোগিতা প্রোগ্রামের আওতায় বছর দশেক এখানে থাকবে তারা।

এই নিয়ে চলতি বছর দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রে পান্ডা পাঠালো চীন। ২৭ জুন জায়ান্ট পান্ডা জুটি ইয়ুন ছুয়ান এবং সিন পাওকে ক্যালিফোর্নিয়ায় পাঠানো হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের নতুন পরিবেশের সাথে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করার জন্য সিসিআরজিপি দুইজন রক্ষক এবং একজন পশুচিকিত্সককে জাতীয় চিড়িয়াখানায় পাঠিয়েছে।

তাদের সঙ্গে মার্কিন পান্ডা বিশেষজ্ঞরা কাজ করবেন। চীন ও মার্কিন উভয়দেশের বিশেষজ্ঞরা স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল চিড়িয়াখানায় পান্ডা জুটির স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করার জন্য  যৌথভাবে কাজ করবেন।

জায়ান্ট পান্ডা বিশ্বের এক অনন্য প্রানী। চীন এদের আদি নিবাস। চীনের সিছুয়ান প্রদেশে বন্য পান্ডার প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অঞ্চল রয়েছে। সিছুয়ানে বেশি সংখ্যক বন্য পান্ডা রয়েছে। এছাড়া শায়ানসি এবং কানসু প্রদেশেও কিছু কিছু বন্য পান্ডার দেখা মেলে।

একসময় পরিবেশ ধ্বংসসহ বিভিন্ন কারণে বন্য অবস্থায় পান্ডার সংখ্যা কমে যায়। পান্ডাকে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে পান্ডার সংরক্ষণ এবং সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য কয়েূক দশক ধরেই চীনে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক কাজ চলছে। বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ কর্মীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে বন্য অবস্থায় পান্ডার সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। ২০২১ সালে চায়না কনজারভেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার ফর জায়ান্ট পান্ডা কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেন যে জায়ান্ট পান্ডা আর বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী নয়। বরং তাদের ভালনারেবল শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বছরের পর বছর সংরক্ষণ প্রচেষ্টার পর বন্য জায়ান্ট পান্ডার সংখ্যা ১৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। এই প্রজাতির সংরক্ষণের জন্য চীন আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা পেয়েছে। এমনকি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণে চীনকে বিশ্বে আদর্শ হিসেবে অনুসরণ করা হচ্ছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: মিম

প্রকৃতি সংবাদ

বর্তমানে সারা বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের নানা রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, যার প্রভাব আগামীর দিনগুলোতে আরও বাড়তে পারে।

একটি বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই আমাদের অনুষ্ঠান মানুষ ও প্রকৃতি।

 অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে শুনবো প্রকৃতি সংবাদ

টেকসই সংরক্ষণ পদ্ধতিতে শায়ানসি প্রদেশে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে

উত্তর পশ্চিম চীনের শায়ানসি প্রদেশের একটি প্রাকৃতিক সংরক্ষিত এলাকায় একাধিক বিরল প্রজাতির বন্য প্রাণীর সংখ্যা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।  

 শায়ানসি প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী সিআন সিটির প্রশাসনিক এলাকার মধ্যে চোওচি কাউন্টিতে বিশাল এলাকা নিয়ে প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অঞ্চল। এখানে প্রথম শ্রেণীর সুরক্ষার অধীনে থাকা স্নাব নোজড বানর, টাকিন এবং কস্তুরী মৃগ বা মাস্ক হরিণের মতো প্রাণীদের ছবি দেখা গেছে ইনফ্রা রেড ক্যামেরায়। এরফলে বোঝা যাচ্ছে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০১৩ সালে যখন প্রথম এখানে ইনফ্রারেড ক্যামেরা স্থাপন করা হয় তখনকার তুলনায় এখন অনেক বেশি পরিমাণে বিরল প্রজাতির প্রাণীদের দেখা মিলছে।

সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ম্যানেজমেন্ট স্টেশনের প্রধান হ্য ইয়ালোও বলেন, ‘আমরা পাঁচ বা ছয়টি টাকিন দেখেছি, অনেকগুলো স্নাবনোজড বানর দেখেছি। বানরদের পাঁচটি দলের দেখা পাওয়া গেছে যেখানে প্রতিটি দলে ১০টি করে বানর রয়েছে। দুটি কস্তুরী হরিণ এবং অনেকগুলো বন্য শূকর দেখেছি।’

বনের বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা করার জন্য ২৫ বছর আগে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এরফলে সব প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে চারটি প্রথম শ্রেণীর এবং ২০টি দ্বিতীয় শ্রেণীর সুরক্ষায় থাকা প্রাণীর সংখ্যা বেড়েছে। সম্প্রতি বন পুলিশ এবং চোওচি কাউন্টির বন কর্তৃপক্ষ এবং প্রাদেশিক বিরল বন্যপ্রাণী গবেষণা কেন্দ্রের কর্মীরা যৌথভাবে একটি চাইনিজ সেরো উদ্ধার করেছে। এই সেরোকে শিগগিরি অরণ্যে মুক্ত করা হবে।

প্রতিবেদন : শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: মিম

আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ