তা পিয়ে পাহাড়ী গ্রামাঞ্চলে নতুন ঘটনা
2024-10-25 15:17:08

চীনের তা পিয়ে পর্বতমালার উত্তর-পশ্চিম পাদদেশে অবস্থিত তোং ইউয়ে গ্রাম। দশ বছরেরও বেশি আগে, এই গ্রাম একটি জাতীয় স্তরের দারিদ্র্য-পীড়িত গ্রাম ছিল, যার জনসংখ্যা ২ হাজার জনের কিছু বেশি। তাদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ দরিদ্র পরিবার নিবন্ধিত ছিল। ইয়াং ছাং টাই তাদের মধ্যে একজন। এখনও সেই দিনগুলোর কথা তাঁর মনে পড়ে। তিনি বলেন, “আমি একটি গাড়ি দুর্ঘটনার কারণে দরিদ্র হয়েছি। গ্রামের অন্যান্য দরিদ্র পরিবারের বেশিরভাগও বয়স্ক বা প্রতিবন্ধী। যখন মিটিংয়ে যাই, তখন আমি সবসময় পিছনে বসে থাকতাম। আমি কারো দিকে তাকানোর সাহস করিনি।”

লক্ষ্যযুক্ত দারিদ্র্য বিমোচনের নীতি বাস্তবায়নের পর থেকে, ইয়াং ছাং টাই গ্রামের ‘দুটি কমিটি’ এবং কর্মীদের সাহায্যে সঠিক শিল্প উন্নয়নের পথ খুঁজে পান। ২০১৫ সালে তিনি শুধু দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসেননি, তিনি অন্যান্য গ্রামবাসীদেরও তাদের আয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছেন। ২০১৯ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তোং ইউয়ে গ্রামে পরিদর্শন করেন। ইয়াং চাং টাই ও স্বচ্ছল হওয়া অন্য ৫ ব্যক্তি মুখোমুখী বসে সি চিন পিংকে তাদের সাফল্যের গল্প শোনান।

সাধারণ সম্পাদকের কথাগুলো তোং ইউয়ে গ্রামের মানুষকে দারুণ অনুপ্রেরণা দিয়েছে। আজ, তোং ইউয়ে গ্রামের শুধু একটি সুন্দর পরিবেশ নয়, বরং সমৃদ্ধ শিল্পও রয়েছে। গ্রামবাসীরা বাড়ির পাশেই সারা দেশে উচ্চমানের চাল, ক্যামেলিয়ার তেল, লবণাক্ত হাঁসের ডিম এবং অন্যান্য কৃষি ও সাইডলাইন পণ্য অনলাইনে বিক্রি করতে পারছেন। তোং ইউয়ে গ্রামের সিপিসি’র সম্পাদক ইয়াং ছাং চিয়া গত কয়েক বছরের পরিবর্তনগুলো স্মরণ করে গর্বিতভাবে বলেন, “এখন যখন গ্রামের লোকেরা বাইরে যায়, তখন তারা তাদের মাথা উঁচু করে নিজেকে তোং ইউয়ে গ্রামের মানুষ বলেন। তাদের কণ্ঠস্বর আরও বলিষ্ঠ হয়েছ।”

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তোং ইউয়ে গ্রামে পরিদর্শনের সময় স্থানীয় বৈশিষ্ট্যযুক্ত দারিদ্র্য বিমোচন শিল্পগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন।

যদিও সে সময় থেকে পাঁচ বছর কেটে গেছে, তবুও ইয়াং ছাং টাই এখনও স্পষ্টভাবে সে সময়ের কথা মনে রেখেছেন, সাধারণ সম্পাদক কীভাবে গ্রামবাসীদের আয় এবং জীবন সম্পর্কে যত্নশীল ছিলেন এবং তিনি কীভাবে সাধারণ সম্পাদককে রিপোর্ট করেছিলেন। তিনি বলেন, “সাধারণ সম্পাদকের প্রতিটি শব্দ আমাদের জনগণের হৃদয়ের কথা।”

“আমি একজন কৃষক, এবং আমার ম্যান্ডারিনে কিছুটা আঞ্চলিক টান আছে, তাই রিপোর্ট করার সময় আমি যতটা সম্ভব স্পষ্টভাবে কথা বলতে চেয়েছিলাম এবং ধীরে ধীরে কথা বলতে চেয়েছিলাম।” শুরুর দিকে ইয়াং ছাং টাই স্বাভাবিকভাবেই একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সাধারণ সম্পাদকের দয়ালু চোখের আলো দেখে তিনি ধীরে ধীরে স্থির হন। তিনি কীভাবে গ্রামের ‘দুটি কমিটি’ এবং গ্রামের কাজের দলের সহায়তায় শিল্প বিকাশের দিকনির্দেশনা পান এবং কীভাবে সি ফাং চিং পারিবারিক খামার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সে সব গল্প বলেছেন।

তিনি আরও বলেন, “২০১৭ সালে, সি ফাং চিং পারিবারিক খামার একটি পার্টির শাখা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আমি শাখা সম্পাদক হয়েছি।” ইয়াং ছাং টাই তখনও মনে আছে যে তিনি এই কথা বলার সময় কিছুটা উত্তেজিত ছিলেন, "আমি সাধারণ সম্পাদককে উচ্চস্বরে রিপোর্ট করে বলেছি, একজন দলীয় সদস্য হিসাবে আমার দারিদ্র্য বিমোচনে আমার নেতৃত্ব দেওয়া উচিত, দলের শাখা সম্পাদক হিসেবে আমার আরও বেশি গ্রামবাসীকে একসঙ্গে ধনী হওয়ার জন্য নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।”

পার্টি গঠনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা আরও ভালভাবে পালন করার জন্য, তোং ইউয়ে গ্রাম পার্টি সদস্যদের ধনী নেতা হতে এবং জনসাধারণকে একসাথে তাদের আয় বাড়াতে উত্সাহিত করে। ২০১৯ সালে ইয়াং ছাং টাই’র সি ফাং চিং পারিবারিক খামার কর্মীদের বেতন বাবদ ৫ লাখ ইউয়ান ব্যয় করেছে। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ১৩ লাখ ইউয়ান ছাড়িয়েছে।

দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, তোং ইউয়ে গ্রাম ভবিষ্যতে কোন পথে যাবে? এ ক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদক জোর দিয়ে বলেছেন, শুধু বাইরে থেকে রক্ত দিলে চলবে না, ভেতরেও রক্তা তৈরির প্রচেষ্টা চালাতে হবে। দারিদ্র্যমুক্তকরণের পরে, জীবন অবশ্যই আরও উন্নীত হবে। একটি সুখী এবং উন্নত জীবনের সাধনা একটি চলমান প্রক্রিয়া।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তোং ইউয়ে গ্রাম ‘সিপিসি’র শাখা যোগ নতুন কৃষি ব্যবসায়িক সত্তা যোগ কৃষক’ মডেলের মাধ্যমে গ্রামবাসীদের তাদের আয় বাড়াতে এবং ধনী হতে পরিচালনা করেছে।

দরিদ্র থেকে ধনী হন, আবার ধনী হওয়ার পরিচালনাকারী হয়েছেন ইয়াং ছাং টাই। গত পাঁচ বছরে তার সেসব নতুন পরিবর্তন হয়েছে। ভবিষ্যত উন্নয়নের বিষয়ে ইয়াং ছাং টাই এর একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। তিনি বলেন, “সাধারণ সম্পাদক আমাদেরকে একটি সুখী এবং উন্নত জীবন অনুসরণ করতে উত্সাহিত করেন। আমার জন্য যে কাজ করতে হবে, সেটি হলো শিল্পকে ভালভাবে বিকাশ করা এবং অনুশীলনের মধ্যে নতুন মডেলগুলো অন্বেষণ করতে থাকা, যাতে আরও বেশি গ্রামবাসী ধনী হতে পারে।”

(রুবি/হাশিম/লাবণ্য)