গত ২৪ অক্টোবর, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, রাশিয়ার কাজানে ‘ব্রিকস প্লাস’ নেতাদের সংলাপ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে তিনি “‘গ্লোবাল সাউথ’-এর শক্তি একত্রিত করা; একসাথে মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়া” শীর্ষক একটি ভাষণ দেন। বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভাষণে বিশ্বের সাধারণ প্রবণতা গভীরভাবে ফুটে উঠেছে এবং তিনি গ্লোবাল সাউথ সংহতি ও সহযোগিতা সম্পর্কে চীনের প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। ভাষণে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর যৌথভাবে আধুনিক হবার এবং একটি উন্নত বিশ্ব গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ধারাবাহিকভাবে বিগত ১২ বছর ধরে ব্রিকস দেশের নেতৃবৃন্দের সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে আসছেন। এবার তিনি প্রথমবারের মতো ‘ব্রিকস প্লাস’ সহযোগিতা প্রস্তাব পেশ করেন এবং ব্রিকস সহযোগিতার পক্ষে ধারাবাহিক প্রচার-প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সংলাপ সম্মেলনে তিনি বলেন, শান্তি বজায় রেখে সাধারণ নিরাপত্তা বাস্তবায়ন করা, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সাধারণ সমৃদ্ধি অর্জন করা, একসাথে সভ্যতার প্রচার করা, এবং বৈচিত্র্য ও সম্প্রীতির জন্য কাজ করা জরুরি।
পাকিস্তানের ইসলামাবাদ দক্ষিণ এশিয়া ও আন্তর্জাতিক গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালক মুহাম্মাদ হাসান খান বলেন, সংলাপে গ্লোবাল সাউথ সংহতি ও সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সি চিন পিং। তাঁর বক্তব্য অশান্ত বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতার উপাদান যুগিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সোমাদোদা ফিকনি বলেন, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভাষণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, চীন বহুপাক্ষিকতার প্রচার ও অভিন্ন উন্নয়নের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো চীন ও অন্যান্য দেশের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ব্রিকস সহযোগিতা পদ্ধতিতে যোগ দিতে আগ্রহী। এই পদ্ধতিতে যোগ দিয়ে উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন ও সমৃদ্ধি অর্জনে আগ্রহ দেখাচ্ছে অনেক দেশ।
আবুধাবিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নির্বাহী অফিসের চেয়ারম্যানের প্রাক্তন উপদেষ্টা ইব্রাহিম হাশিম বিশেষভাবে বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা উদ্যোগের দিকে মনোযোগ দেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্বে অস্থিতিশীলতার কারণগুলো দ্রুত বাড়ছে, ইউক্রেনের সংকট দীর্ঘায়িত হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে, এবং বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলের নিরাপত্তা গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। ব্রিকস-এর প্রধান সদস্যদেশ হিসেবে, চীন সক্রিয়ভাবে শান্তি আলোচনাকে উত্সাহিত করছে, ইউক্রেন সংকট নিয়ে ‘ফ্রেন্ডস অফ পিস’ গ্রুপ চালু করেছে, এবং সৌদি আরব-ইরান কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও ফিলিস্তিনের দলগুলোর পুনর্মিলনের জন্য ধারাবাহিক মধ্যস্থতা করেছে। চীন আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতায় অবদান রাখছে এবং অশান্ত বিশ্বে স্থিতিশীলতার উপাদান যোগ করে যাচ্ছে।
সিনিয়র লাও কূটনীতিক সিকুন বুনওয়েলে বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন উদ্যোগগুলো বেশি অনুভব করেছেন। তিনি বলেন, লাওস ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা লাওসের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে ও রাখছে। লাওস বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কার্গো পরিবহন, পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। তিনি মনে করেন, বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নের জন্য চীনা প্রজ্ঞা ও চীনা সমাধান হিসাবে, তিনটি প্রধান বৈশ্বিক উদ্যোগ মানবজাতির শান্তি ও উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক শক্তি যোগাবে।
বেলারুশের ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেসের ইন্সটিটিউট অফ ইকোনমিক্স-এর বেলারুশ-চীন ডেভেলপমেন্ট অ্যানালাইসিস সেন্টারের পরিচালক ইউরি শেরবাকভ বলেন, ‘“ব্রিকস প্লাস’ সহযোগিতা মডেল ‘গ্লোবাল সাউথ’ গ্রুপের উত্থানে নতুন প্রেরণা যোগ করেছে। ব্রিকস সম্প্রসারণের পর, বিরল ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন, ব্রিকসের আওতায়, আরও সক্রিয়ভাবে ও কার্যকরভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা চালানো যাবে; দেশগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সহযোগিতার মান ও স্তর আরও উন্নত করা যাবে; অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে আরও এগিয়ে নেওয়া যাবে; একটি আরও ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজে নতুন গতির সঞ্চার হবে; এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, ও অগ্রগতির পক্ষে কাজ করার মাধ্যমে, মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজে গড়ে তোলার কাজে আরও বেশি অবদান রাখা যাবে। (অনুপমা/আলিম/ছাই)