“বিশ্ব যখন অশান্তি এবং রূপান্তরের একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছে, তখন আমরা এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিকল্পের মুখোমুখি হচ্ছি, যা আমাদের ভবিষ্যৎকে রূপ দেবে৷ আমাদের কি বিশ্বকে গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলার অতল গহ্বরে তলিয়ে যেতে দেওয়া উচিত, নাকি আমরা এটিকে শান্তি ও উন্নয়নের পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব?”
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বুধবার রাশিয়ার কাজানে ১৬তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে তার বক্তৃতার সময় এই প্রশ্নটি উত্থাপন করেন এবং তিনি নিজেই এর উত্তর দিয়েছেন। শান্তি, উদ্ভাবন, সবুজ উন্নয়ন, বৈশ্বিক ন্যায়বিচার এবং মানুষে মানুষে ঘনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে, এমন একটি সংস্থা হিসেবে ব্রিকসকে গড়ে তোলার জন্য তিনি পাঁচটি মূল বিষয়ের প্রস্তাব করেন।
প্রেসিডেন্ট সি ব্রিকস দেশগুলোকে গ্লোবাল সাউথে সংহতি ও সহযোগিতা জোরদার করার জন্য এবং বৈশ্বিক শাসন সংস্কারের অগ্রগতির জন্য একটি প্রাথমিক চ্যানেল হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘের সংস্কার, আঞ্চলিক উত্তেজনা, আর্থিক নিরাপত্তা, বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং এআই’র মতো উদীয়মান প্রযুক্তিসহ বিস্তৃত বিষয় নিয়ে ব্রিকস নেতাদের আলোচনার মধ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট তাঁর দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য তুলে ধরেন।
আন্তর্জাতিক বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, সি’র ধারনাগুলো আজ বিশ্ব মানবতার মুখোমুখি সাধারণ চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবেলা করে, গ্লোবাল সাউথ সহযোগিতার জন্য একটি রোডম্যাপ এবং আধুনিকীকরণ অনুসরণকারী দেশগুলোর জন্য নতুন অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
ইথিওপিয়ান পলিসি স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের গবেষক বালেউ ডেমিসি ব্রিকস প্রক্রিয়ার তাৎপর্য তুলে ধরে উল্লেখ করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট সি’র বক্তৃতা ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যকে শক্তিশালী করতে এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া ও বিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। এটি ব্রিকস সহযোগিতার দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন নিশ্চিত করবে এবং উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে বলে মনে করেন তিনি।
বিগত ১৮ বছরে, চীন ব্রিকস সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে, জাতিসংঘ এবং আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সংস্কারের পক্ষে এবং গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বরকে প্রসারিত করার পক্ষে নিরলসভাবে কাজ করেছে।
বুধবার শীর্ষ সম্মেলনে, সি ঘোষণা করেন যে, চীন একটি চীন-ব্রিকস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়ন ও সহযোগিতা কেন্দ্র চালু করেছে এবং একটি ব্রিকস গভীর-সমুদ্র সম্পদ আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্র, ব্রিকস দেশগুলোতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে সহযোগিতার জন্য একটি চীন কেন্দ্রসহ আরো কিছু সংস্থা প্রতিষ্ঠা করবে।
তিনি সবুজ শিল্প, পরিচ্ছন্ন শক্তি এবং সবুজ খনির ক্ষেত্রে ব্রিকস দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা সম্প্রসারণের জন্য এবং সমগ্র শিল্প চেইনের মাধ্যমে সবুজ উন্নয়নকে উন্নীত করার জন্য চীনের সবুজ প্রযুক্তি ব্যবহার করার প্রতিশ্রুতি দেন।
এশিয়া প্যাসিফিক রিসার্চ সেন্টারের প্রেসিডেন্ট সের্গেই সানাকোয়েভ বলেছেন, সি’র প্রস্তাবিত উদ্যোগগুলো গ্লোবাল সাউথের সহযোগিতাকে আরও সমন্বিত এবং জোরদার করবে।
প্রেসিডেন্ট সি, তার বক্তৃতায় আরও উল্লেখ করেছেন যে যখন ক্ষমতার আন্তর্জাতিক ভারসাম্য পরিবর্তন হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী শাসন সংস্কার পিছিয়ে গেছে।
তিনি সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতা এবং ব্যাপক পরামর্শ, যৌথ অবদান এবং ভাগ করা সুবিধা দ্বারা চিহ্নিত একটি শাসন পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তিনি ক্রমবর্ধমান গ্লোবাল সাউথের প্রতি সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানান এবং বিশ্ব শাসনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব এবং কণ্ঠস্বর বাড়ানোর জন্য ব্রিকস সহযোগিতা প্রক্রিয়া সম্প্রসারণের আহ্বান জানান।
মিশরের বেনি সুয়েফ ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক নাদিয়া হেলমি বলেছেন যে, সি তার বক্তৃতায় যে সিরিজ প্রস্তাবনা ও উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেছেন তা ব্রিকস সহযোগিতা প্রক্রিয়াকে আন্তর্জাতিক বিষয়ে ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে এবং একটি শক্তিশালী ব্রিকস গঠনে নির্দেশনা দেবে। ব্রিকস দেশগুলোর গভীরতর সহযোগিতা এবং যৌথ প্রচেষ্টা বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থাকে আরও ন্যায্য এবং ন্যায়সঙ্গত দিকনির্দেশের দিকে উন্নীত করবে বলেও তিনি মনে করেন।
মাহমুদ হাশিম
সিএমজি বাংলা, বেইজিং।