ছবিতে লম্বা এবং উদ্যমী মানুষটির নাম চাং জেং। তিনি ২০০৮ সালে একটি দাতব্য বাস্কেটবল প্রশিক্ষণ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতি গ্রীষ্মে শিশুদের বিনামূল্যে বাস্কেটবল খেলতে শেখান৷ গত ১৭ বছরে, চার হাজারেরও বেশি শিশু চাং জেং’র নির্দেশনায় তাদের জীবনের ‘প্রথম বাস্কেটবল পাঠ’ সম্পন্ন করেছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা চাং জেং’র গল্প শুনবো।
চীনের হ্য পেই প্রদেশের সিং টাই শহরের ডা হুও ছুয়ান পার্ক হল চাং জেং’র জনকল্যাণমূলক বাস্কেটবল প্রশিক্ষণের স্থান। যখনই প্রশিক্ষণ থাকে, বাস্কেটবল খেলার আনন্দ উপভোগের জন্য সমস্ত জায়গা থেকে শিশুরা এখানে জড়ো হয়।
ছাত্র চাং ই বলেন, সে গত বছর কোচ চাং’র সাথে অনুশীলন শুরু করেছে এবং অনুভব করেছে, কোচ চাং খুব ভালো। বাস্কেটবল খেলা শুধুমাত্র তাদের শারীরিক সুস্থতাই উন্নত করে তা নয়, বরং তাদের প্রতিক্রিয়া ক্ষমতা এবং প্রতিক্রিয়ার গতিও উন্নত করতে পারে।
প্রশিক্ষণের স্থানের সীমাবদ্ধতার কারণে, এখানে শিশুরা কেবলমাত্র বল পাস করা এবং ধরার মতো মৌলিক দক্ষতা অনুশীলন করতে পারে। অতএব, চাং জেং দাতব্য বাস্কেটবল প্রশিক্ষণ শিবির প্রধানত কিন্ডারগার্টেন থেকে প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের গ্রহণ করে।
প্রতি গ্রীষ্মে, দাতব্য বাস্কেটবল প্রশিক্ষণ শিবির সময়মতো খোলা হয়।
চাং জেং একজন পেশাদার বাস্কেটবল খেলোয়াড় এবং একজন বাস্কেটবল কোচও ছিলেন। ১৯৮৪ সালে কাজ করার জন্য সিং টাই শহরে ফিরে আসার পর, তিনি খুব কমই বাস্কেটবল নিয়ে কাজ করতেন। কিন্তু তিনি এখনও তাঁর পছন্দের বাস্কেটবল খেলাটি ছেড়ে দিতে পারেননি। ২০০৮ সালে, বেইজিং অলিম্পিকের কারণে একটি অভূতপূর্ব ফিটনেস উন্মাদনা শুরু হয়। সে সময় একটি জনকল্যাণমূলক বাস্কেটবল প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপনের পরিকল্পনা চাং জেং’র মনে জন্মায়।
বাস্কেটবল দলে যোগদান থেকে শুরু করে জাতীয় প্রতিযোগিতায় খেলা, প্রতিভা এবং ভালবাসা চাং জেং’র বাস্কেটবল ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু পরে তিনি গুরুতরভাবে আহত হন এবং একটি প্রশিক্ষণের সময় তার হাত ভেঙে যায়। এটির কারণে চাং জেং তার কর্মজীবন সময়ের আগে শেষ করতে হয়। ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকের কারণে জাতীয় ফিটনেসের তরঙ্গ শুরু হয় এবং চাং জেং আবারও তার প্রিয় বাস্কেটবলের সাথে যুক্ত হন।
চাং জেং বলেন, আমার বন্ধুরা বা যারা আমাকে চেনেন তারা বলেছেন যে, আপনি যেহেতু একজন পেশাদার ক্রীড়াবিদ, আপনি গ্রীষ্মের ছুটিতে বাচ্চাদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। ২০০৮ সাল থেকে আমিই একমাত্র কোচ হিসেবে এ কাজ শুরু করেছি। প্রথম দিকে এক ডজনেরও বেশি বাচ্চা ছিল।
মৌলিক ড্রিবলিং থেকে শুরু করে শ্যুটিং পর্যন্ত, চাং জেং ধৈর্য সহকারে প্রতিটি শিশুকে তার পেশাদার জ্ঞান এবং নিষ্ঠার মনোভাব দিয়ে গাইড করেন। ধীরে ধীরে অভিভাবকদের মধ্যে প্রশিক্ষণ শিবিরের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম বছরে দশটির বেশি শিশু ছিল। তবে দ্বিতীয় বছরে ১০০টিরও বেশি শিশু এবং তৃতীয় বছরে এ সংখ্যা বেড়ে ৩০০তে পৌঁছায়।
ছাত্র-অভিভাবক লি চি বলেন, প্রশিক্ষক চাং এবং অন্য প্রশিক্ষকরা বাচ্চাকে ধৈর্যের সাথে গাইড করেছেন। শিশুটি দ্রুত এই প্রশিক্ষণ শিবিরে মিশেছে।
শিশুদের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে চাং জেং শিক্ষার্থীদের বয়স এবং দক্ষতার স্তর অনুসারে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। শিশুদের দক্ষতা বাড়লে তারা উচ্চ শ্রেণীতে অগ্রসর হতে পারে ।
শিশুদের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে চাং জেং শিক্ষার্থীদের বয়স এবং দক্ষতার স্তর অনুসারে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। শিশুরা বল অনুসরণ করতে পারে এবং ভালো কথা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে শুধু অনেক শিক্ষার্থীই শিখতে আসে না, কিছু স্বেচ্ছাসেবকও যোগ দেয়। এদের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক, শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছে। কিন্তু তাদের সকলের একই ইচ্ছা আছে, তা হলো শিশুদের তাদের বাস্কেটবল স্বপ্ন উপলব্ধি করতে সাহায্য করা। দক্ষতা বাড়ার সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা উচ্চ শ্রেণিতে অগ্রসর হয়।
বছরের পর বছর, বাস্কেটবল প্রশিক্ষণে নতুন ছাত্রছাত্রীও যোগ দিতে থাকে এবং দাতব্য বাস্কেটবল প্রশিক্ষণ শিবিরের দলটি ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। এখানে, শিশুরা কেবল বাস্কেটবল দক্ষতায় উন্নতি করে না, প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলায় আধ্যাত্মিক বৃদ্ধিও অর্জন করেছে। একজন ব্যক্তির বাস্কেটবল স্বপ্ন আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতো, হাজার হাজার শিশুর স্বপ্ন এবং ভালবাসাকে প্রজ্জ্বলিত করেছে।