অক্টোবর ২৪: সম্প্রতি চায়নিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেস, চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, চায়না ম্যানড স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস যৌথভাবে, ‘চীনের মহাকাশ বিজ্ঞান: মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা (২০২৪-২০৫০)’ প্রকাশ করেছে। পরিকল্পনায় চীনের পাঁচটি বৈজ্ঞানিক বিষয় এবং ১৭টি অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়ন দিকনির্দেশনা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে চীন সাফল্য অর্জন করবে বলে আশা করা যায়। এর মধ্যে, ‘বাসযোগ্য গ্রহ’ ও পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব অন্বেষণ বিষয়টি অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান হচ্ছে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার কমান্ডিং হাইট। চাঁদ থেকে গ্রহ ও গ্রহাণু শনাক্তকরণ পর্যন্ত, চীনের গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান কার্যক্রমের আওতা ক্রমশ বাড়ছে; মহাকাশের অনেক গভীরে তাকাচ্ছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। ফলে, সৌরজগত ও মহাবিশ্বকে বুঝতে মানুষের সামনে আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
সম্প্রতি ইতালির মিলানে অনুষ্ঠিত ৭৫তম আন্তর্জাতিক মহাকাশচারী কংগ্রেসে, চীনের চন্দ্র অন্বেষণ প্রকল্প ছাংএ্য-৬ কর্তৃক চাঁদের দূরবর্তী অঞ্চল থেকে সংগৃহীত নমুনা প্রথমবারের মতো চীনের বাইরে প্রদর্শিত হয়। এটি বিভিন্ন দেশের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
চলতি বছরের ২৫ জুন চাঁদের অন্ধকার দিক তথা দূরবর্তী অঞ্চল থেকে ১৯৩৫.৩ গ্রাম নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে ফেরে ছাংএ্য-৬। এটিই হচ্ছে প্রথমবারের মতো মানবজাতির চাঁদের দূরবর্তী অঞ্চল থেকে নমুনা সংগ্রহ। চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর ইয়াং চিয়াওউ বলেন, বিজ্ঞানিরা এখন চন্দ্রের নমুনা যাচাই-বাছাই করছেন। ইতোমধ্যে নমুনার ভৌত, রাসায়নিক উপাদান, ও কাঠামোর প্রাথমিক শনাক্তকরণ সম্পন্ন হয়েছে। এ থেকে চাঁদের প্রাথমিক বিবর্তন ও চাঁদের দূরবর্তী আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপের তথ্য, নমুনা সংগ্রহের স্থানটিতে আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপের ইতিহাস রেকর্ড করা বেসাল্ট, এবং কিছু অন্যান্য এলাকা থেকে নন-ব্যাসল্ট উপকরণ আবিষ্কৃত হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালে ছাংএ্য-৭ এবং ২০২৮ সালের দিকে ছাংএ্য-৮ উৎক্ষেপণ করবে চীন। ছাংএ্য-৭ চন্দ্রের দক্ষিণ মেরুর পরিবেশ এবং সম্পদ অন্বেষণ করবে। ছাংএ্য-৮ চন্দ্রের সম্পদ চন্দ্রে ব্যবহারের প্রযুক্তিগত সম্ভাব্যতা যাচাই করবে। চন্দ্রে প্রস্তাবিত বৈজ্ঞানিক গবেষণাকেন্দ্রের ভিত্তিও স্থাপন করবে ছাংএ্য-৭ এবং ছাংএ্য-৮।
ইতোমধ্যেই চাঁদে গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। চীনের সাথে ১৭টি দেশ ও অঞ্চলের আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা-চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সামগ্রিক মিশনের যৌথ প্রদর্শন, আন্তর্জাতিক চন্দ্র বৈজ্ঞানিক গবেষণা স্টেশনগুলোর যৌথ নকশা, প্রকল্প প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, সামগ্রিক মিশন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, ও বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত ভাগাভাগি করতে চীন ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে ব্যাপক সহযোগিতা করবে।
চাঁদ মানুষের গভীর মহাকাশ অনুসন্ধানের সূচনাবিন্দু। চায়নিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের শিক্ষাবিদ ও চীনের চন্দ্র অনুসন্ধান প্রকল্পের প্রথম প্রধান বিজ্ঞানী ওউইয়াং চিইউয়ান একবার বলেছিলেন, চন্দ্র অন্বেষণ কেবল একটি সূচনাবিন্দু। আমরা আরও বিস্তৃত সৌরজগতের দিকে তাকিয়ে আছি। ভবিষ্যতে, মঙ্গল ও গ্রহাণুর মতো বহির্জাগতিক বস্তু অন্বেষণ, সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার মতো লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা হবে। তখন, তারার সমুদ্র অন্বেষণেও আত্মবিশ্বাস পাবে চীন। (অনুপমা/আলিম/ছাই)