‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
৯২ তম পর্বে যা যা থাকছে:
১. স্নাতকদের কর্মসংস্থানের সুবিধার্থে চীন জুড়ে চাকরি মেলা অনুষ্ঠিত
২. টেনিস খেলায় উদ্দীপিত চীনা তরুণরা
১. স্নাতকদের কর্মসংস্থানের সুবিধার্থে চীন জুড়ে চাকরি মেলা অনুষ্ঠিত
কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান এবং কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ারের পথ সহজতর করার লক্ষ্যে চীনের বিভিন্ন প্রদেশে চাকরি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তরুণদের কর্মসংস্থান বাড়াতে এটি চলমান উদ্যোগেরই একটি অংশ।
বেইজিং, শাংহাই, কুয়াংচৌ এবং উহানের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগ ইভেন্ট শুরু করেছে হাইনান ফ্রি ট্রেড পোর্ট, যা তরুণ মেধাবীদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রতিভা নীতি এবং মূল শিল্প উন্নয়নের তথ্য প্রদান করে।
এই নিয়োগ ইভেন্টে উচ্চ-স্তরের গবেষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসা কর্মী এবং স্কুল শিক্ষক সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১৪ হাজারের বেশি চাকরির প্রস্তাব করা হয়। আর এসব মেলায় ৬শ’টি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।
ছাত্ররা স্বপ্ন পূরণের জন্য হাইনান ফ্রি ট্রেড পোর্টে আসতে পারে বলে জানান হাইনান ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ব্যুরোর পরিচালক থাং হুয়া।
গেল সপ্তাহে , দক্ষিণ চীনের কুয়ায়ংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের নানিং সিটি একটি চাকরি মেলার আয়োজন করে। এতে ১২ হাজারের মতো চাকরির প্রস্তাব করা হয়।
পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের জন্য মাসব্যাপী একটি নিয়োগ প্রচারণা শুরু হয়েছে। এতে ৩৭ হাজার চাকরির শূন্যপদ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রদেশ জুড়ে ৩০টি ক্যাম্পাসে এই চাকরি মেলার আয়োজন করা হয়।
এদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছোংছিং মিউনিসিপ্যালিটিতে কলেজ স্নাতকদের জন্য একটি চাকরি মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সারাদেশের ২০টি প্রধান শহর থেকে আসা ২ শতাধিক নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে।
সম্প্রতি ছোংছিং ক্রিয়েশন ভোকেশনাল কলেজে অনুষ্ঠিত এই মেলায় ৭ হাজার স্নাতকদের চাকরির সুযোগ দেয়া হয়। এই মেলায় হাজার হাজার তরুণ চাকরি প্রত্যাশীরা জড়ো হন।
কলেজে কর্মসংস্থান নির্দেশিকা পরিষেবা কেন্দ্রের পরিচালক হু ওয়েই জানান, "আমাদের এখানে ২০০টির বেশি সংস্থা অংশগ্রহণ করেছে। তারা গাড়ি বিষয়ক প্রযুক্তি, বুদ্ধিমান উত্পাদন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ক্ষেত্রগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছেন।’
ছাত্ররা এখানে এসে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানার পাশাপাশি তাদের পছন্দসই বিষয় সম্পর্কে নির্বাচনের সুযোগ পাচ্ছেন।
" আমি কম্পিউটার সায়েন্সে পড়েছি। এখানে বেশ কয়েকটি কোম্পানির পদ আছে যা আমার জন্য উপযুক্ত, এবং আমি এখানে পছন্দসই একটি পদ পেয়েছি। তাই আমার খুব ভালো লাগছে।’
মেলাটি অনেক তরুণ চাকরিপ্রার্থীকে চাকরির বাজার এবং তাদের প্রতিযোগিতার বিষয়ে আরও ভালোভাবে বোঝার সুযোগ দিয়েছে বলে জানান অংশগ্রহণকারীরা।
"আমি প্রধানত অনলাইনে তথ্য অনুসন্ধান করেছি কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। এখানে এসে দেখলাম আমার জন্য উপযুক্ত অনেক পদ আছে।’
ইভেন্টের শেষে, প্রায় ১ হাজার ৮০০ জন অংশগ্রহণকারীর প্রাথমিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হয়। স্থানীয় কর্মসংস্থান কর্তৃপক্ষ জানায়, স্নাতকদের কাজের সন্ধানে আরও সহায়তা করতে আগামী ১ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অতিরিক্ত চাকরি মেলার আয়োজন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
২. টেনিস খেলায় উদ্দীপিত চীনা তরুণরা
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জ্বলজ্বল করে চলেছেন চীনা টেনিস খেলোয়াড়রা। টেনিস জ্বর এখন গ্রাস করেছে চীনের তরুণ প্রজন্মকেও। দেশটিতে এখন অনেক তরুণ টেনিস শিখতে শুরু করেছেন, পেশাদার ক্যারিয়ার গড়তেও পাচ্ছেন উৎসাহ।
বেইজিংয়ের একটি টেনিস প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একদিন ভিড় করতে দেখা যায় কিশোর-কিশোরীদের। সেদিন তাদের কোচ জানালেন, নির্ধারিত সমস্ত প্রশিক্ষণ আগে থেকেই বুক করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্টের জনপ্রিয়তার কারণে তার প্রশিক্ষণও এখন জমজমাট।
‘আগস্টে চীনের টেনি তারকা চেং ছিনওয়েনের সোনাজয়ের পর থেকে, গত বছরের তুলনায় টেনিস শিখতে আসা তরুণের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। চাহিদা মেটাতে, আমরা আরও দুটি ক্যাম্পাস খুলেছি এবং দশ জনেরও বেশি নতুন কোচ নিয়োগ দিয়েছি।’
এই গ্রীষ্মে প্যারিস অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণ জিতেছেন চেং। তার কারণে চীনের টেনিস বাজার পেয়েছে শক্তিশালী প্রেরণা। সম্প্রতি বেইজিং-এ চায়না ওপেন টেনিস টুর্নামেন্টও জাগিয়ে তুলেছে উদ্দীপনার নতুন তরঙ্গ।
টেনিস প্রশিক্ষণার্থী বলেন, ‘আগে একই দিনে একটি ক্লাস বুক করা যেত। এখন একটি ছোট-গ্রুপ প্রশিক্ষণের জন্য দুই-তিন দিন আগে থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়।’
১৬ বছর বয়সী তং পেইয়েন ইতোমধ্যেই চীনের পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় হয়েছেন। টেনিসের দক্ষতার কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ফলোয়ার এখন এক লাখ ৪০ হাজারের বেশি। তং জানালেন, এখন অনেক তরুণ টেনিস খেলতে শিখছে এবং অনেকেই এ খেলায় পেশাদার ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখছে।
আরেক উদীয়মান তারকা ১৬ বছর বয়সী খং ওয়েই। চায়না ওপেনে চেংয়ের অন্যতম সঙ্গী ছিলেন তিনি। চায়না ওপেন জুনিয়র প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তিনি পেশাদারদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পেয়েছিলেন।
‘আজ আমি দারুণ অনুভব করছি। ভালো অনুশীলন করেছি। ম্যাচের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয় এবং কী করে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখতে হয় সেটা পেশাদার খেলোয়াড়দের কাছ থেকে শিখবো।’
খং বিশ্বাস করেন, একজন বড় মাপের পেশাদার খেলোয়াড় হতে কেবল প্রতিভা নয়, আরও বেশি কিছু প্রয়োজন। বিশেষ করে পদ্ধতিগত প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন তিনি।
এদিকে চীনে টেনিসের যে ভেনু এবং উচ্চপর্যায়ের আয়োজন দেখা যায় তা চীনের তরুণ খেলোয়াড়দের সফলতার পথ দেখাবে বলে বিশ্বাস করেন সার্বিয়ান টেনিস তারকা নোভাক জকোভিচ।
এবারের প্যারিস অলিম্পিকে সোনাজয়ী এ তারকা গ্র্যান্ড স্ল্যামসহ, অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফ্রেঞ্চ ওপেন, উইম্বলডন ও ইউএস ওপেনসহ ৯৯টি সিঙ্গেল টাইটেল জিতেছেন।
সার্বিয়ান টেনিস তারকা নোভাক জোকোভিচ বলেন, ‘আমি সবসময় চীনে এসে খেলা উপভোগ করি। ২০০৮ সালে এখানে প্রথম মাস্টার্স কাপ জিতেছি। শাংহাইয়ে রোলেক্স মাস্টার্স ১০০০ ইভেন্টের আরও চারটি শিরোপা জিতেছি। এই বছরও ট্রফির জন্য লড়াই করবো।’
ছেং ছিনওয়েন বা চাং চিচেনের মতো চীনা টেনিস খেলোয়াড়দের অগ্রগতির প্রসঙ্গে জোকোভিচ উল্লেখ করেছেন, চীনা খেলোয়াড়দের মধ্যে চেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই।
‘চীনা টেনিস খেলোয়াড়রা খুব মনোযোগী। তারা প্রশিক্ষণ নিতে চায়, তারা অনেক চেষ্টা করে। আমি নিশ্চিতভাবে আরও চাইনিজ খেলোয়াড় দেখতে চাই। তাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল।’
আইমিডিয়া রিসার্চের জরিপে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে বিশ্বে টেনিস কোর্টের সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চীন। ধারণা করা হচ্ছে চীনে টেনিস খেলোয়াড়ের সংখ্যা বছরের শেষ নাগাদ ২ কোটি ৩৮ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। যা বিশ্বের মোট খেলোয়াড়ের চার ভাগের এক ভাগ।
জোকোভিচ বলেছেন, বিশ্বের অন্যতম সুন্দর টেনিস স্টেডিয়ামগুলো চীনেই আছে। টানা কয়েক মাস ধরে উচ্চপর্যায়ের অনেক টুর্নামেন্ট হয়েছে চীনজুড়ে। এ ব্যাপারটিও চীনা খেলোয়াড়দের জন্য বড় অনুপ্রেরণার উৎস হবে বলে মনে করেন সার্বিয়ান টেনিস তারকা।
প্রতিবেদক : ফয়সল আবদুল্লাহ
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী