সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এশীয় দেশগুলোর "ব্রিকস" সহযোগিতা সংস্থায় যোগদানের প্রবণতা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা আন্তর্জাতিক কূটনীতির একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। এ মাসে, সিরিয়া ও শ্রীলঙ্কা পর্যায়ক্রমে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান এবং অন্যান্য দেশের ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করে ব্রিকস সহযোগিতা সংস্থায় যোগদানের জন্য আবেদন করেছে। এ ব্যাপারটা কেবল এ দেশগুলোর কূটনৈতিক অভিমুখীতাই প্রতিফলিত করে না, বরং বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামো সম্পর্কে তাদের গভীর চিন্তাভাবনাও প্রকাশ করে।
প্রথমত, এশীয় দেশগুলো "ব্রিকসের" কাছাকাছি যাওয়ার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে দেখায় যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের "ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল" মানে না। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীন-মার্কিন প্রতিযোগিতাকে একটি মূল সমস্যা হিসাবে বিবেচনা করে এবং এশীয় দেশগুলোকে এই কাঠামোর মধ্যে একটি পক্ষ বেছে নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক চাপ দেয়। যাইহোক, অনেক দেশ এই বিরোধী চিন্তাধারার সাথে একমত নয়, বিশেষ করে যেহেতু বেশিরভাগ দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বেশিরভাগ এশীয় দেশ নিরপেক্ষ থাকতে এবং স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে পছন্দ করে।
দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক স্বার্থ- এশিয়ার দেশগুলোকে "ব্রিকস" সংস্থায় যোগদানে উত্সাহিত করে। অনেক দেশ মার্কিন-নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে হতাশ, বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান জটিল বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে এশীয় দেশগুলো কীভাবে তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়ন অর্জন করবে তা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত "ইন্দো-প্যাসিফিক" দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করার পরিবর্তে, এই দেশগুলো আরও প্রত্যক্ষ অর্থনৈতিক সুবিধা পেতে "বেল্ট অ্যান্ড রোড" ইনিশিয়েটিভ এবং আঞ্চলিক সার্বিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব সম্পর্ক চুক্তি বা আরসিইপিতে অংশগ্রহণ করতে বেশি আগ্রহী। বিশ্বের বৃহত্তম অবাধ বাণিজ্যের অঞ্চল হিসাবে, আরসিইপি পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা আন্তঃ-আঞ্চলিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের সুবিধা প্রদান করে। এশিয়ার অনেক দেশ এই অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব শিল্প আপগ্রেডিং এবং অর্থনৈতিক রূপান্তরকে উন্নত করার আশা করছে।
এমন পরিস্থিতিতে, এই অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত তথাকথিত "ইন্দো-প্যাসিফিক" কৌশল থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে। যদিও সাতটি আসিয়ান দেশ "ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক কাঠামোতে" যোগ দিয়েছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাদের বেশি বাণিজ্যিক প্রবেশাধিকার দেয়নি। পাশাপাশি, এসব দেশ নিজেদের প্রান্তিক অঞ্চল বলে মনে করেছে। "বেল্ট অ্যান্ড রোড" ইনিশিয়েটিভের গঠিত বিশাল অর্থনৈতিক সুযোগের তুলনায়, "ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক কাঠামো" শুধুমাত্র একটি প্রতীকী উদ্যোগ বলে মনে হয়। এই হতাশা অনেক দেশকে আরও সমান এবং পারস্পরিক কল্যাণকর অর্থনৈতিক সম্পর্ক অর্জনের জন্য "ব্রিকস" দেশগুলোর সাথে সহযোগিতার জন্য আরও বেশি ঝুঁকেছে।
আজ, অনেক দেশ আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের কণ্ঠস্বর উন্নত করার এবং ব্রিকস, একটি নতুন বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় যোগদানের মাধ্যমে আবার প্রান্তিক হওয়া এড়ানোর আশা করছে। ব্রিকস সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠা নতুন বাজার দেশগুলোকে আরও সমান সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে, যাতে তারা যৌথভাবে বিশ্বের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে সক্ষম হয়।
বিশ্বায়নের গভীরতা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ক্রমেই জটিল হবার সঙ্গে সঙ্গে, একক শক্তির আধিপত্যের অবস্থান ধীরে ধীরে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ছে। ভবিষ্যতে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা শুধু অর্থনৈতিক খাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং রাজনৈতিক, নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য খাতেও তা প্রসারিত হবে। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ সহযোগিতা মডেল বৈশ্বিক শাসনে নতুন ধারণা ও সমাধান নিয়ে আসবে।
এই প্রেক্ষাপটে, এশীয় দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতা শুধুমাত্র বাহ্যিক চাপ মোকাবিলা করার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাদের নিজস্ব উন্নয়ন অর্জনেও একটি অনিবার্য পছন্দ। "ব্রিকস" সহযোগিতা সংস্থায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে, এই দেশগুলো কেবল তাদের আন্তর্জাতিক মর্যাদাই বাড়াবে না, বরং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কাঠামোয় আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে এশিয়ার দেশগুলোর কণ্ঠস্বর আরও জোরালো হবে এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে তাদের অংশগ্রহণ ও প্রভাব ক্রমাগত বাড়বে।
(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)