অক্টোবর ২২: চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, ও ইথিওপিয়া ব্রিক্স-এ যোগ দেয়। এর মাধ্যমে ব্রিক্সের সদস্য বেড়েছে এবং ব্রিক্স সহযোগিতা-ব্যবস্থা নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
রাশিয়ার কাজানে ব্রিক্স সহযোগিতার আরেকটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত প্রত্যক্ষ করা যাবে। এটি হবে ব্রিক্সের আকার বাড়ার পর প্রথম শীর্ষসম্মেলন। ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দ এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার গ্লোবাল সাউথ নিউজ নেটওয়ার্কের সিইও অ্যাবি মাকো বলেন, ব্রিক্সের সদস্যসংখ্যা বেড়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব কী? আমার মনে হয়, প্রভাব অনেক। এবার রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠেয় সম্মেলন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্মেলনকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলো আন্তর্জাতিক সমাজের সামনে এই সহযোগিতার গুরুত্ব ও এই ব্যবস্থার মূল তাত্পর্য তুলে ধরবে। আমি অপেক্ষায় আছি।
ব্রাজিলের সাও পাওলো স্টেট ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অর্থনীতির অধ্যাপক মার্কেস পাইরেস বলেন, সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক হল, কীভাবে নতুন সদস্য গ্রহণ করার সাথে সাথে, ভবিষ্যতের কথাও বিবেচনা করা যায়। সম্মেলনের মাধ্যমে বিভিন্ন পক্ষ একে অপরকে ভালোভাবে জানবে এবং সদস্য বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে চিন্তাভাবনা করবে। এজন্য এটি সবার জন্য একটি পরীক্ষা হবে যে, ব্রিক্স সহযোগিতা ব্যবস্থা বিশ্ব দক্ষিণের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতাকে কীভাবে বিকশিত করতে পারে। বস্তুত, ব্রিক্স সহযোগিতা বিশ্বের জন্য আরও নিশ্চয়তা, স্থিতিশীলতা, ও ইতিবাচক শক্তি যোগ করতে পারে এবং এ সক্ষমতা ব্রিক্সের আছে।
বেইজিং নর্মাল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্র সহযোগিতা গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালক ওয়াং লেই বলেন, ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর শক্তি নিরাপত্তা সহযোগিতা, যৌথ অর্থপ্রদানের ব্যবস্থা, জরুরি রিজার্ভ ব্যবস্থা, এবং মুদ্রা ও আর্থিক খাত নিয়ে আরও বেশি গভীর আলোচনা চলবে।
এখন পর্যন্ত আরও ৩০টিরও বেশি দেশ ব্রিক্সে যোগদানের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন জমা দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী আরও বেশিসংখ্যক দেশ ব্রিক্স সহযোগিতায় অংশগ্রহণের দৃঢ় ইচ্ছা প্রকাশ করছে। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, ব্রিক্স দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ফলপ্রসূ হয়েছে ও হচ্ছে এবং সহযোগিতার পরিস্থিতিও ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। ব্রিক্স দেশগুলো বিশ্বব্যবস্থায় একটি প্রভাবশালী বহুপাক্ষিক সহযোগিতা-ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে, যা উদীয়মান বাজার দেশগুলোকে আকর্ষণ করছে।
ব্রিক্স সম্প্রসারণের পর, দশটি ব্রিক্সভুক্ত দেশ বিশ্বের জিডিপি-র প্রায় ৩০ শতাংশ, বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক, এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের এক-পঞ্চমাংশের অংশীদার। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্রিক্স দেশগুলোতে চীনের আমদানি ও রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ব্রিক্স সহযোগিতা-ব্যবস্থার অধীনে, ব্রাজিল থেকে আসা গরুর মাংস ও দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাভোকাডো চীনা বাজারে অবাধে প্রবেশ করতে পারছে; নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের জীবিকা প্রকল্পের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরও বেশি মানুষ বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানীয় জল পাচ্ছে। ব্রিক্স সহযোগিতার দৃশ্যমান এবং বাস্তব ফলাফল ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর আরও বেশি লোকের উপকার করছে।
চলতি বছরের জুন মাসে থাইল্যান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিক্স সহযোগিতা-ব্যবস্থায় যোগদানের জন্য আবেদন করে। এরপর জুলাই মাসে মালয়েশিয়াও ‘ব্রিক্স পরিবারে’ যোগদানের জন্য আবেদন করে। পাশাপাশি, পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ‘ব্রিক্সে’ যোগদানের জন্য আবেদন করেছে। সামগ্রিক চিত্র বিবেচনা করলে বোঝা যায় যে, বিশ্বমঞ্চে ব্রিক্সের আবেদন ও গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।
(অনুপমা/আলিম/ছাই)