ন্যায়সঙ্গত, যৌথ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাকে উৎসাহিত করছে ব্রিকস: সিজিটিএন জরিপ
2024-10-22 17:26:52


কেউ লে “ব্রিকসের প্রতিনিধিত্ব করা উদীয়মান বাজারের দেশগুলোর সম্মিলিত উত্থান বিশ্ব মানচিত্রকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করছে।” চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, “ব্রিকস এই ইতিবাচক, স্থিতিশীল ও কল্যাণকর শক্তি পুষ্পিত উন্নয়ন হচ্ছে।”

অক্টোবর ২২: সম্প্রতি সিজিটিএন এবং চীনের রেনমিন ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে নিউ এয়েরা ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে ব্রিকস দেশগুলির ১৬৩৪ জন উত্তরদাতাদের মধ্যে একটি প্রশ্নপত্র জরিপ পরিচালনা করেছে। জরিপ থেকে দেখা গেছে, উত্তরদাতারা সাধারণত বিশ্বাস করেন যে দ্রুত-বর্ধমান ‘ব্রিকস শক্তি’ বিশ্বব্যাপী শাসন ব্যবস্থায় আরও বেশি গতি এনে দিচ্ছে এবং আরও ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিসঙ্গত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার নির্মাণকে উত্সাহিত করা অপরিহার্য।

আজকের বিশ্বে, বহুপাক্ষিকতা এবং একতরফাবাদ, ন্যায়বিচার এবং আধিপত্যের মধ্যে বিরোধগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে প্রকট হয়ে উঠেছে। কয়েকটি উন্নত দেশের আধিপত্যের চেহারা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, আরও একটি ন্যায্য এবং যুক্তিসঙ্গত নতুন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা নির্মাণ ব্রিকস দেশগুলোর একটি শক্তিশালী দাবি হয়ে উঠেছে। সমীক্ষায়, ৯৬.২% উত্তরদাতা বিশ্বাস করেন যে, সকল দেশের আন্তর্জাতিক বিষয়ে সমানভাবে অংশগ্রহণ করা উচিত এবং যৌথভাবে একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা উচিত। ৭২.৬% উত্তরদাতা মনে করেন বর্তমানে উন্নত দেশগুলোর নেতৃত্বে গঠিত আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা ও নিয়মগুলোর সংস্কার করা উচিত। এ ছাড়াও, ব্রিকস উত্তরদাতাদের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার মূল অংশ-জাতিসংঘের প্রতি উচ্চ আশা রয়েছে, ৮৩.৯% উত্তরদাতারা জাতিসংঘকে ‘গ্লোবাল সাউথে’র দেশগুলোর স্বার্থ এবং চাহিদার প্রতি আরও মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রশ্নে ‘আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রধান দিকগুলো যা জরুরিভাবে সংস্কারের প্রয়োজন’, ব্রিকস সদস্য দেশের উত্তরদাতারা আরও বৈচিত্র্যময় ও জরুরি প্রত্যাশা দেখিয়েছেন: উত্তরদাতাদের ৬৩.৬% আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরও স্বচ্ছতা চেয়েছেন। উত্তরদাতাদের ৬০.২% আন্তর্জাতিক বিষয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব ও কণ্ঠস্বর বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। ৫৬.৮% বিভিন্ন দেশকে আন্তর্জাতিক আইনের মর্যাদা সমুন্নত রাখার দাবি জানিয়েছে। উত্তরদাতাদের ৫৫.৯% অনুরোধ করেছেন যে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবং অন্যান্য বিশেষ সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সমন্বয়কে শক্তিশালী করবে। ৪৯.৬% যে কোনও দেশের বিরুদ্ধে অন্য দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার বিরোধিতা করে। ৪৮.৭% উত্তরদাতারা আন্তর্জাতিক সহায়তা, জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে ব্যবধান কমানোর আশা করেন। ৪৫.৮% উত্তরদাতারা বাণিজ্য বাধা এবং সুরক্ষাবাদী ব্যবস্থা হ্রাস করার আহ্বান জানিয়েছেন।

দীর্ঘকাল ধরে, শান্তি অনুসরণ করা, উন্নয়ন চাওয়া, সহযোগিতা প্রচার করা এবং জয়-জয় ফলাফল চাওয়া সর্বদাই ব্রিকস দেশগুলোর অভিন্ন আকাঙ্খা ও দায়িত্ব। ব্রিকসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা দেশ হিসেবে, চীনের উন্নয়ন ধারণা এবং আধুনিকীকরণের সাফল্য ব্রিকস সহযোগিতা প্রক্রিয়ায় দৃঢ় আস্থা ও প্রেরণা যোগাচ্ছে।

পরিসংখ্যান দেখায় যে, চীন এবং রাশিয়া, ভারত, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি মূল্য ২০০৯ সালে ৯৬০.২১ বিলিয়ন ইউয়ান থেকে ২০২৩ সালে ৪.৩২ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে বৃদ্ধি পায়, যার গড় বার্ষিক বৃদ্ধি ১১.৩%। এই বছর ব্রিকস সহযোগিতা প্রক্রিয়া সম্প্রসারণের পর, প্রথম তিন প্রান্তিকে অন্যান্য ব্রিকস দেশগুলোতে চীনের আমদানি ও রপ্তানি ছিল ৪.৬২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা গত বছরের তুলনায় ৫.১% বৃদ্ধি পেয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ব্রিকস দেশগুলোর উত্তরদাতারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার গভীরতা বিকাশ, সমস্ত দেশ ও বিশ্বের শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নন ও সমৃদ্ধির প্রচারে এবং যৌথভাবে বিশ্বব্যাপী সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে চীনের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের বিষয়ে ইতিবাচক কথা বলেছেন। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোতে চীনের অবদানের তালিকায় শীর্ষ পাঁচটি হল অবকাঠামো নির্মাণকে শক্তিশালী করা (৭৯.৭%), আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান (৭৭.১%), উন্নয়নের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া (৭৭.৫%), প্রতিভাকে শক্তিশালী করা (৭৫.৪%) এবং দারিদ্র্য বিমোচনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা (৭২.৯%)।

এ  ছাড়াও, চীনা-শৈলীর আধুনিকীকরণের উন্নন ধারণাটি ব্রিকস দেশগুলোর উত্তরদাতাদের জোরালো স্বীকৃতি পেয়েছে। ৮৯.৪% উত্তরদাতারা একমত যে উন্নয়ন হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রাথমিক কাজ। ৮৮.৬% উত্তরদাতারা “মানুষকে অগ্রাধিকার দেওয়া” উন্নয়ন ধারনাকে সমর্থন করে এবং বিশ্বাস করে যে সকল দেশের নিজি নিজ জনগণের জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা উচিত এবং জনগণের সুখ বৃদ্ধি করা উচিত। ৯৩.৬% উত্তরতাদারা ‘কর্ম পরিচালিত নীতি’ অনুসরণে সমর্থন করে এবং বাস্তব সহযোগিতা গভীরতর করে যৌথভাবে বিশ্ব উন্নয়ন বাস্তবায়নের আহ্বান জানায়। ৮৯.৮% উত্তরদাতা চীনের উদ্ভাবন-চালিত কৌশলের সাথে একমত হন এবং আশা করেন যে সমস্ত দেশ বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিপ্লবের নতুন দফা সুযোগগুলো ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকা শক্তি অন্বেষণ করার প্রত্যাশা করে।

(স্বর্ণা/হাশিম/লিলি)