প্যারিস অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণজয়ী চীনা ক্রীড়াবিদদের কথা
2024-10-21 15:30:09

চলতি বছরের আগস্ট মাসে প্যারিসে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস আয়োজিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বব্যাপী এর আকর্ষণ ছিল অনেক বেশি। গেমস শেষ হয়েছে, তবে অলিম্পিক চেতনা সারা বিশ্বে রয়ে গেছে। সম্প্রতি প্যারিস অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণপদকজয়ী চীনা খেলোয়াড়রা চীনের বিভিন্ন এলাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তাঁদের বড় হওয়া ও ক্রীড়া-প্রশিক্ষণের গল্প শেয়ার করেন। তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের সাহসের সাথে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া এবং নিজেদের স্বপ্নের বাস্তবায়নে চেষ্টা করায় উত্সাহ দেন। চীনা ছেলেমেয়েরা অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নদের গল্প শুনে বেশ মুগ্ধ হয়, হয় উত্সাহিত। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা চীনা অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নদের গল্প তুলে ধরবো।

সম্প্রতি চীনের হুপেই প্রদেশের ক্রীড়া ব্যুরোর উদ্যোগে অলিম্পিক গেমসের চেতনা প্রচারসংক্রান্ত এক বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। প্যারিস অলিম্পিক গেমসের নারী টেনিস চ্যাম্পিয়ন চেং ছিন ওয়েন এবং নারীদের ডাইভিংয়ে সিঙ্ক্রোনাইজড ৩ মিটার স্প্রিংবোর্ড চ্যাম্পিয়ন ছাং ইয়া নি, মহিলাদের কায়াকিং ফ্ল্যাট ওয়াটার ৫০০ মিটার ডাবল রোয়িং চ্যাম্পিয়ন সুন মেং ইয়া হুয়াচং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সামনে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও গল্প শেয়ার করেন।

নারী টেনিস চ্যাম্পিয়ন চেং ছিন ওয়েন বলেন, ছোটবেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন তিনি। ১২৮ বছরের অলিম্পিক গেমসের ইতিহাসে তিনিই প্রথমবারের মতো এশিয়ান খেলোয়াড় হিসেবে মহিলা টেনিসের এককে অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হন। এটি ছিল অতুলনীয় সাফল্য। বহু বছর ধরে তিনি কঠোর সাধনা করেছেন, পরিশ্রম করেছেন, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, চর্চা করেছেন। এবং অবশেষে সাফল্য পেয়েছেন।

স্বপ্নের বাস্তবায়ন সম্পর্কে চেং বলেন, সবার উচিত সাহসের সাথে স্বপ্ন বাস্তবায়নে চেষ্টা করা। কেবল স্বপ্ন দেখলেই, সঠিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সম্ভব। তবে, স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সমস্যা, বিভ্রান্তি, সন্দেহ, অশ্রু ও ব্যর্থতা সহ্য করতে হবে। কারণ, বহুবার ব্যর্থ হবার পরই কেবল সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। তাই, ব্যর্থতার অভিজ্ঞতাও খারাপ না। যখন বিশ্বের শীর্ষস্থানে দাঁড়িয়ে অতীতের অভিজ্ঞতা স্মরণ করা যাবে, তখন মনে শান্তি ও সান্ত্বনা পাওয়া যাবে। চলার পথের কষ্ট ও পরিশ্রম জীবনের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা। তার নিজের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য।

জানা গেছে, ২০২৩ সালে হুয়াচং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া একাডেমির ক্রীড়া প্রশিক্ষণ বিভাগের অনার্স শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হন চেং ছিন ওয়েন। খেলোয়াড় সুন মেং ইয়া ২০২২ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। নারীদের ডাইভিংয়ে চ্যাম্পিয়ন ছাং ইয়া নি ২০২০ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

অন্যদিকে, প্যারিস অলিম্পিক গেমসের টেবিল টেনিস মিক্সড ডাবলস চ্যাম্পিয়ন ওয়াং ছু ছিন এবং সুন ইং শা বেইজিংয়ের হাইতিয়ান এলাকার চংকুয়ানছুন ৩ নম্বর প্রাথমিক স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সাথে নিজেদের মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তাঁরা ‘অস্থায়ী ক্রীড়া শিক্ষক’ হিসেবে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সামনে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য বিভিন্ন করণীয় তুলে ধরেন।

বস্তুত, ছোটোবেলায় ওয়াং ছু ছিন এবং সুন ইং শা টেবিল টেনিস বা পিংপং খেলার পেশাদার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ধীরে ধীরে তাঁরা জাতীয় দলের খেলোয়াড় হিসেবে চীনের পক্ষ থেকে অলিম্পিক গেমসে যোগ দেওয়ার সুযোগ পান। তাঁদের গল্পের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা বুঝতে পেরেছে যে, একজন পেশাদার খেলোয়াড় হতে চাইলে, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যে-কোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলে নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে হবে; যে-কোনো ব্যর্থতাকে ভয় করা চলবে না, সাহসের সাথে স্বপ্নের বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

অলিম্পিক গেমসে পিংপং খেলার মজাদার মুহূর্ত দেখানোর জন্য দু’জন খেলোয়াড় এ বিশেষ ক্রীড়া ক্লাসে পিংপং বল সার্ভ করার পদ্ধতি শেখান। তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের সাথে পিংপং খেলেন এবং ছাত্রছাত্রীদের র‍্যাকেট নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি বুঝিয়ে দেন। তাঁদের মজাদার শেখার পদ্ধতি ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপকভাবে আকর্ষণ করে। ক্লাস শেষ করার পর, ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বিশেষ উপহার পেয়েছেন ওয়াং ছু ছিন এবং সুন ইং শা। তাঁরা চীনা ক্যালিগ্রাফি দিয়ে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছে; আশা প্রকাশ করেছেন যে, ভবিষ্যতে এই দু’জন খেলোয়াড় আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্টে চীনের জন্য আরও বেশি স্বর্ণপদক অর্জন করবেন।

চীনের থিয়ানচিন মহানগরের নানখাই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামে প্যারিস অলিম্পিক গেমসের চীনা চ্যাম্পিয়নদের স্বাগত জানিয়ে সরগরম ও আনন্দদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্যারিস অলিম্পিক গেমসের পিংপং নারী একক চ্যাম্পিয়ন ও পিংপং নারী গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ছেন মেং শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করেন। তাঁরা বলেন, ‘পড়াশোনার পথে নানান সমস্যা বা কষ্টের মধ্যেও, তোমাদেরকে সাহসের সাথে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’

প্যারিস অলিম্পিক গেমসে পুরুষ ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল চ্যাম্পিয়ন এবং পুরুষ ৪ গুণীতক ১০০ মিটার মিডলে রিলে চ্যাম্পিয়ন পান চান ল্য ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। যখন তিনি সবার সাথে দেখা করেন, তখন শিক্ষার্থীরা চিত্কার করে তাকে স্বাগত জানায়।

পান সবাইকে বলেন, ১০০ বছর আগে নানখাই বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক চাং পো লিং চীনাদের অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণ নিয়ে ৩টি প্রশ্ন করেছিলেন, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চীনাদের উত্সাহ দিয়েছে। পান আরও বলেন, শত বছর পর চীনা যুবক-যুবতীরা আত্মবিশ্বাসের সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের সাথে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ও হচ্ছে!

(সুবর্ণা/আলিম/রুবি)