পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বহুভাষিক ঐতিহাসিক উপকরণ এবং ঐতিহাসিক রচনা’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সেমিনার
2024-10-19 19:52:23

অক্টোবার ১৪: ‘ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বহুভাষিক ঐতিহাসিক উপকরণ এবং ঐতিহাসিক রচনা’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক একাডেমিক সেমিনার গত শনিবার পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিকিং ইউনিভার্সিটি ওরিয়েন্টাল লিটারেচার রিসার্চ সেন্টার, পিকিং ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ, পিকিং ইউনিভার্সিটির হিউম্যানিটিজ বিভাগ, এবং ইস্ট চায়না নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের যৌথ উদ্যোগ সেমিনারটি আয়োজিত হয়। দুদিনব্যাপী সেমিনারটি পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী ভাষার স্কুলের নতুন ভবনে সফলভাবে উদ্বোধন করা হয়। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বহুভাষিক এবং বহুসাংস্কৃতিক ঐতিহাসিক উপকরণ এবং ঐতিহাসিক রচনা অন্বেষণ করতে ৩০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং দেশ-বিদেশের সংবাদ মাধ্যমের ৬০ জনেরও বেশি বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিত ইয়ানইউয়ানে জড়ো হন।

পিকিং ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজের গবেষক চাং মিন ইউ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পিকিং ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেসের ডেপুটি ডিরেক্টর এবং ডিসিপ্লিন ডেভেলপমেন্ট অফিসের ডেপুটি ডিরেক্টর অধ্যাপক লিন ফেং মিন, পিকিং ইউনিভার্সিটির ওরিয়েন্টাল লিটারেচার রিসার্চ সেন্টার এবং স্কুল অফ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজেসের ডিন অধ্যাপক ছেন মিং, চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্সের ইনস্টিটিউট অফ অ্যানসিয়েন্ট হিস্ট্রি রিসার্চার ইনল্যান্ড ইউরেশিয়ান রিসার্চ সেন্টারের ডিরেক্টর অধ্যাপক লি চিন সিউ এবং ইস্ট চায়না নরমাল ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের উপ-পরিচালক চু মিং বক্তৃতা করেন।

*সভায় উপস্থিত বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিতদের একটি গ্রুপ ছবি

অধ্যাপক লিন ফেং মিন তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন যে, বহু-ভাষিক ও বহু-সাংস্কৃতিক মূল উৎসের উপকরণের ভিত্তিতে প্রচুর পরিমাণে কঠিন গবেষণা কাজ পরিচালনা করা, বিশেষ বিষয়ের গবেষণার উচ্চমান বিকাশ, বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে পারস্পরিক শিক্ষার ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে অনুসন্ধান করা এবং জাতীয় পর্যায়ের পরিকল্পনা তৈরী করার জন্য সহায়ক। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলটি প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন সভ্যতার আদান-প্রদানের স্থান। দেশী-বিদেশী গবেষকরা ইতোমধ্যে এই ক্ষেত্রের গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার বৈচিত্রময় উপকরণ অন্বেষণের জন্য বিভিন্ন বিষয়ের গবেষকদের বিদ্যমান ফলাফলগুলোর আরো সমানে নিয়ে যাওয়ার জন্য একসাথে কাজ করা উচিত।

অধ্যাপক ছেন মিং বলেছেন যে, এ বিষয়ের ইতিহাস ঐতিহ্যের দিকে ফিরে তাকালে, পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে পণ্ডিতরা স্কুলের অভ্যন্তরের ও বাইরের বিভিন্ন শাখার গবেষকদের সাথে একাডেমিক প্রকল্পগুলি পরিচালনা করার জন্য একসাথে কাজ করেছেন। যেমন ‘গ্রেন্ড থাং রাজবংশের পশ্চিমাঞ্চলের রেকর্ডস’ এবং ‘দ্য ট্রান্সমিশন অফ দ্য লো অফ রিটার্ন টু দ্য সাউথ চায়না সি’র জন্য টিকাভাষ্য দেওয়া ইত্যাদি। সমৃদ্ধ গবেষণা ফলাফল ভবিষ্যত প্রজন্মের স্কলারদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করেছে। এই সেমিনারটি ‘ঐতিহ্য বজায় রাখা, সততা বজায় রাখা এবং উদ্ভাবন অন্বেষন করা’র একটি প্রয়াস। নতুন যুগের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মূল উৎসের উপকরণ ও দলিলপত্র সংগ্রহ ও গবেষণার মাধ্যমে অগ্রগামী গবেষণা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি ভাল সুযোগ।

গবেষক লি চিন সিউ উল্লেখ করেছেন যে, বিভিন্ন সভ্যতা ভারত মহাসাগরের উপকূলে মিলিত ও একত্রিত হয়েছে, একটি বহুসংস্কৃতি নেটওয়ার্ক গঠন করেছে, যা হাজার হাজার বছর ধরে বিস্তৃত। এই সেমিনারের একটি বিস্তৃত দৃষ্টি রয়েছে এবং এতে ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, ধর্ম, ভাষাতত্ত্ব, মূর্তিবিদ্যা, ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক উন্নয়নগুলোকে একত্রিত করে। এটি শুধুমাত্র ঐতিহাসিক বিষয়গুলোর আলোচনাই নয়, ভবিষ্যতের গবেষণার দিকনির্দেশগুলোর জন্য একটি সম্ভাবনার অন্বেষণও বটে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পণ্ডিতদের মধ্যে বিনিময় এবং সহযোগিতা আরও সঠিক ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা প্রদান করতে এবং আরও ত্রিমাত্রিক ঐতিহাসিক চিত্র তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে।

অধ্যাপক জু মিং উল্লেখ করেছেন যে, ভারত মহাসাগর আমাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল অশান্ত এবং মহান শক্তি প্রতিযোগিতার একটি মূল মঞ্চে পরিণত হয়েছে। আজকের বিশ্ব দ্রুত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এবং আমাদের জরুরিভাবে জ্ঞান উত্পাদন ও ব্যাখ্যা করার দক্ষতার উন্নত করতে হবে। গবেষকদের উচিত বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে বাধা অতিক্রম করা, দেশগুলোকে একক দেশ হিসেবে দেখার দীর্ঘস্থায়ী উপলব্ধি ভেঙে দেওয়া, একাধিক কোণ ও স্তর থেকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে জানা এবং বোঝা।

উদ্বোধনী বক্তৃতা: অধ্যাপক লিন ফেং মিন (উপরের বাম), অধ্যাপক ছেন মিং (উপরের ডানদিকে), গবেষক লি চিন সিউ (নিম্ন বাম), অধ্যাপক জু মিং (নিচের ডানদিকে)।

মূল বক্তৃতাটি উপস্থাপন করেছেন চাইনিজ একাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অফ ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি-এর গবেষক লিউ চিয়ান, এবং কুয়াংতুং ইউনিভার্সিটি অফ ফরেন স্টাডিজের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচারের অধ্যাপক লিউ জি ছিয়াং। ব্রিটিশ একাডেমির ফ্যালোস, ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ও ইয়াং ওয়েন চিন এবং চায়না ওভারসিজ ট্রান্সপোর্টেশন হিস্ট্রি রিসার্চ এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং কুয়াংতুং একাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্সের গবেষক লি ছিং শিন মূল বক্তব্য প্রদান করেন।

অধ্যাপক ও ইয়াং ওয়েন চিন ‘আরবি সাহিত্যের কল্পনায় সিল্ক রোড—আরবি সাহিত্যের বহুভাষিক ইতিহাসের দিকে’ শীর্ষক একটি বক্তৃতা দেন। তিনি তুলনামূলক সাহিত্য এবং আরবি সাহিত্যের ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে শুরু করেছিলেন এবং ‘কালিলাই এবং ডিমেনা’, ‘এক হাজার এবং এক রাত’ এবং গজলের কবিতা তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে সিল্ক রোডের ইন্টারেক্টিভ চিত্রের মাধ্যমে, বহুভাষিক পদ্ধতির অর্থ, মূল্য, প্রয়োগ এবং সম্ভাবনা ব্যাখ্যা করেন।

গবেষক লি ছিং সিন ‘জারস থেকে সমুদ্র দেখা - 'কুয়াংতুং জারস’ আবিষ্কৃত ওয়েস্টার্ন প্যাসিফিক-ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক প্রত্নতত্ত্ব দ্বারা আবিষ্কৃত এবং পার্ল রিভার মোহনা উপসাগরীয় অঞ্চলে রপ্তানিকৃত চীনামাটির বাসন’ নিয়ে একটি বক্তৃতা দিয়েছেন। সমৃদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক এবং ডকুমেন্টারি উপকরণের মাধ্যমে, তিনি দক্ষিণ চীন সাগরের বাণিজ্যে কুয়াংচৌ বন্দরের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি ‘কুয়াংতুং জার’-এর প্রধান কার্যাবলী এবং ব্যবহারিক বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেন এবং জুচিয়াং নদী উপসাগরীয় এলাকা চীনামাটির বাসন রপ্তানির সঙ্গে সামুদ্রিক বাণিজ্য অর্থনীতির গভীর সংযোগ নিয়ে আলোচনা করেছেন।

প্রধান বক্তৃতা হোস্ট এবং উপস্থাপক: গবেষক লিউ চিয়ান (উপরের বাম), অধ্যাপক ও ইয়াং ওয়েন চিন (উপরের ডানে), অধ্যাপক লিউ জি ছিয়াং (নিম্ন বাম), গবেষক লি ছিং সিন(নীচ ডানদিকে)

সম্মেলনটি দুই দিন ধরে চলে এবং আটটি উপ-ফোরামে অংশগ্রহণকারীরা  বাণিজ্য, জাতিগত গোষ্ঠী, ধর্ম, রাজনীতি, জ্ঞান, প্রযুক্তি, ভূদৃশ্য ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

(স্বর্ণা/হাশিম/লিলি)