‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
৯১ তম পর্বে যা যা থাকছে:
১. ঢাকায় তরুণদের নিয়ে যা বললেন চীনা বিশেষজ্ঞ
২. ৭৫ বছরে শিক্ষা ক্ষেত্রে দারুণ সাফল্য অর্জন চীনের
৩. কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা বাড়াবে চীন
১. ঢাকায় তরুণদের নিয়ে যা বললেন চীনা বিশেষজ্ঞ
‘চীন-বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে পারস্পরিক শিক্ষা।’ এই থিমে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকায় সেন্টার ফর চায়না স্টাডিজ এই ইভেন্টের আয়োজন করে। থাকছে আমার করা প্রতিবেদন।
‘আমি তরুণদের পছন্দ করি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু শিক্ষকতা করি। যখন, যেখানেই তরুণ-তরুণীরা আছে, সেখানেই গতিশীলতা ও হাসি আছে। ‘ তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার , তারা অনুপ্রেরণাদায়ক এবং তারা আগামীর জন্য অপেক্ষমান।
তাদের মন আরও বেশি সুন্দর খুঁজে, পরিচ্ছন্নতা এবং সুন্দর স্বপ্ন অন্বেষণ করে। তাদের স্বপ্ন খুব সুন্দর। তারা তাদের লক্ষ্য উপলব্ধি করতে পারে। আমি আশা করি, তরুণ প্রজন্ম তাদের সুন্দর স্বপ্ন এবং সম্ভাবনাকে একসঙ্গে করে সামনে এগিয়ে যাবে।’
তরুণ প্রজন্ম নিয়ে এমনটিই বলছিলেন চীনের শাংহাই আন্তর্জাতিক বিষয়ক সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক এবং চীনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইয়াং চিয়ে মিয়ান।
সম্প্রতি তিনদিনের জন্য ঢাকা সফরে এসে সিএমজি বাংলাকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
চীন ও বাংলাদেশ একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারে এমন বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র রয়েছে বলেও জানান এই বিশেষজ্ঞ। দুই দেশ এখন তরুণ প্রজন্মকে পরিচর্যা করার ওপর বেশ ভালো জোর দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
চীনা এই গবেষক মনে করেন, দুই দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর চায়না স্টাডিজের চীনা পরিচালক, বাংলাদেশি পরিচালক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে তরুণ শিক্ষার্থীরা সিএমজি বাংলাকে জানান, এই ধরণের আয়োজন খুবই যুগোপযোগী এবং এর ধারাবাহিকতা থাকলে তরুণদের অনেক কিছু জানার সুযোগ তৈরি হবে।
চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচন এবং পারস্পরিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় এই আলোচনায়। এতে দারিদ্র্য বিমোচন যে কোনও সরকারের জন্য একটি অগ্রাধিকার হওয়া উচিত বলেও উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
২. ৭৫ বছরে শিক্ষা ক্ষেত্রে দারুণ সাফল্য অর্জন চীনের
চীনের শিক্ষা ব্যবস্থা, যা এখন বিশ্বের বৃহত্তম এবং যুক্তিযুক্তভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী। গত ৭৫ বছরে এই খাতের বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। তবে এই উল্লেখযোগ্য ফলাফল অর্জনে অসংখ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে চীনকে।
সম্প্রতি দেশটির সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কাওখাও, জাতীয় কলেজের প্রবেশিকা পরীক্ষা, এই বিবর্তনেরই অন্যতন উদাহরণ। চলতি বছর১ কোটি ৩৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে।
পঁচাত্তর বছর আগে, এই চিত্রটি ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাক্ষরতা অনেকের কাছে একটি দুর্লভ স্বপ্নের মতো ছিলো। ১৯৪৯ সালে, চীনের তৎকালীন ৫৪ কোটি জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই নিরক্ষর ছিলো।
১৯৫০ সাল থেকে মূলত চীনে নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়, যা পরিবর্তীতে দেশটির শিক্ষার চিত্রপট পরিবর্তন করে।
সারা দেশে প্রতিষ্ঠা করা হয় শ্রেণীকক্ষ। তিনটি বড় সাক্ষরতা প্রচারাভিযানের মাধ্যমে প্রায় ৩ কোটি মানুষকে এক দশকের মধ্যে পড়তে এবং লিখতে শেখানো হয়।
১৯৬৫ সালের মধ্যে প্রায় ১০ কোটি মানুষ সাক্ষরতা অর্জন করে। মৌলিক সাক্ষরতার বাইরে, তরুণদের জন্য শিক্ষাকে শক্তিশালী করা একটি অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে।
গবেষণাসূত্র থেকে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইনের প্রবর্তন নিশ্চিত করা হয়। এতে সমস্ত স্কুল-বয়সী শিশুরা ছয় বছর প্রাথমিক এবং তিন বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়।
১৯৮৯ সাল থেকে হোপ নামে একটি প্রকল্প প্রায় ২১ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি করে। ফলে ৬ দশমিক ৯ মিলিয়নেরও বেশি গ্রামীণ শিশু উপকৃত হয়।
বার্ষিক শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে, ২০২৩ সালে প্রায় ৬ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে পৌঁছায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া হয়।
২০১৯ সালে "চীনের শিক্ষার আধুনিকীকরণ: ২০৩৫" উদ্যোগটি চালু করা হয়, যার লক্ষ্য চীনকে একটি বৈশ্বিক শিক্ষার পাওয়ার হাউজ হিসেবে তৈরি করা।
বর্তমানে শহুরে-গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যবধান দূর করতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ আই এবং বিগ ডেটা টেইলারিংসহ বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
চীনের শিক্ষা ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে তাদের প্রাথমিক পর্যায়ের লড়াই থেকে শুরু করে আজকের উন্নত ভার্চুয়াল ক্লাসরুম পর্যন্ত, চীনের শিক্ষাযাত্রা সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি শক্ত ভিত্তি স্থাপন করেছে।
ধাপে ধাপে, চীন ২০৩৫ সালের মধ্যে একটি বৈশ্বিক শিক্ষা পাওয়ার হাউস হওয়ার স্বপ্নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলেও মনে করেন তারা।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
৩. কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা বাড়াবে চীন
কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য জাতীয় বৃত্তি এবং আর্থিক সহায়তা বাড়াবে চীন। গেল সপ্তাহে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানায়। চীনের অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী কুও থিংথিং বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, জাতীয় বৃত্তির জন্য কোটা দ্বিগুণ করার পাশাপাশি মেধাবীদের জন্য বৃত্তির পরিমাণও বাড়াবে চীন। সেইসঙ্গে বাড়ানো হবে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তার পরিমাণ।
উপমন্ত্রী জানান, স্নাতক ও জুনিয়র কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য জাতীয় বৃত্তির পরিমাণ বছরে ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার ইউয়ান করা হবে এবং উৎসাহ বৃত্তি ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৬ হাজার ইউয়ান করা হবে। কুওর মতে, প্রত্যেক স্নাতক ও জুনিয়র কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য ২০২৪ সালের শরৎ সেমিস্টার থেকে জাতীয় অনুদান বাৎসরিক ৩ হাজার ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার ৭০০ ইউয়ান করা হবে। এ ছাড়া, আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও জুনিয়র কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য ঋণের পরিমাণও ১৬ হাজার থেকে ২০ হাজার ইউয়ান করা হবে বলে জানালেন উপমন্ত্রী।
প্রতিবেদক : ফয়সল আবদুল্লাহ
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী