চলতি প্রসঙ্গ: চীন-আসিয়ান অভিন্ন কল্যাণের কমিউনিটি গঠন নতুন পর্যায়ে উন্নীত
2024-10-14 17:32:43

৪৪ ও ৪৫তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন এবং পূর্ব এশিয়া সহযোগিতা নেতাদের সিরিজ বৈঠক লাওসের রাজধানী ভিয়েনতিয়েনে শেষ হয়েছে। এই শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আসিয়ান: যোগাযোগ ও স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করা’। শীর্ষ সম্মেলনের সময়, আসিয়ান দেশগুলো ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের সাথে তার একীকরণকে শক্তিশালী করার জন্য একাধিক নতুন পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছে। শীর্ষ সম্মেলনে  চীনের সাথে সহযোগিতার বিষয়ে ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জিত হয়েছে, যা চীন-আসিয়ান সহযোগিতাকে একটি নতুন পদক্ষেপ নিতে এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।

এই শীর্ষ সম্মেলনে, আসিয়ান দেশগুলো আসিয়ান কমিউনিটি গঠন উন্নীত করার লক্ষ্যে সহযোগিতামূলক উদ্যোগের ধারাবাহিক প্রস্তাব করেছে। ‘একটি ল্যান্ড-লকড অঞ্চলকে একটি স্থল-সংযুক্ত অঞ্চলে পরিবর্তন করা’ কৌশল অনুসারে, আসিয়ানের বর্তমান সভাপতি দেশ লাওস, চীন-লাওস রেলপথকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রেলযোগাযোগ কেন্দ্রস্থল হিসেবে রূপান্তরিত করার আশা করছে, যাতে আঞ্চলিক লজিস্টিক দক্ষতা এবং অর্থনৈতিক জীবনীশক্তি বাড়ানো যায়।

এই শীর্ষ সম্মেলনে অর্জিত ফলাফলগুলো আঞ্চলিক সংযোগ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মতো ক্ষেত্রে আসিয়ানের অব্যাহত প্রচেষ্টা প্রদর্শন করে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, সাপ্লাই চেইন সহযোগিতার এগিয়ে নেয়া, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিকাশের মতো ক্ষেত্রগুলোকে কেন্দ্র করে অনেক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো শুধুমাত্র আসিয়ানকে একটি বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে তা নয়, বরং আসিয়ান কমিউনিটি ভিশন ২০২৫ স্তবায়নের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি স্থাপন করবে।

আসিয়ান দেশগুলো আশা করে যে, তাদের উন্নয়ন শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং স্থায়িত্বের নীতির উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত এবং কখনই বহিরাগত শক্তির হস্তক্ষেপের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। শীর্ষ সম্মেলনের আগে এবং পরে, কিছু অপ্রাসঙ্গিক কথা উত্থাপিত হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, কিছু জাপানি রাজনীতিবিদ ‘ন্যাটোর এশীয় সংস্করণে’র ধারণাটি প্রস্তাব করেছিলেন যা আসিয়ান দেশগুলোর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এবং ফিলিপাইন দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যু ব্যবহার করে আঞ্চলিক সংঘর্ষকে তীব্র করার প্রয়াস করেছে। এই বিষয়ে, মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান স্পষ্ট করে বলেছেন: “আসিয়ানের ন্যাটোর প্রয়োজন নেই।” আসিয়ান দেশগুলোর অভিন্ন মত হল শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য এবং সমতা এবং পারস্পরিক সুবিধার বহুপক্ষীয় অধিষ্ঠান দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করা। আঞ্চলিক শান্তিপূর্ণ উন্নয়নে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ গ্রহণ করা থেকে বহিরাগত শক্তিগুলোকে প্রতিরোধ করতে এবং একটি জটিল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে আসিয়ান স্বাধীনভাবে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি রক্ষা করতে পারে তা নিশ্চিত করতে আসিয়ান দেশগুলোকে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে।

শীর্ষ সম্মেলনের সাথে একযোগে অনুষ্ঠিত ২৭তম চীন-আসিয়ান (১০+১) নেতাদের বৈঠকে, চীন এবং আসিয়ান টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক জালিয়াতি এবং অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে যৌথ লড়াই, মানুষে মানুষে এবং সংস্কৃতিতে বিনিময় ও সহযোগিতা আরও গভীর করা, স্মার্ট কৃষি উন্নয়ন এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল পরিবেশগত সহযোগিতা এবং অন্যান্য যৌথ ঘোষণাসহ অনেকগুলো ফলাফলে পৌঁছেছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ফলাফল হল চীন এবং দশটি আসিয়ান দেশের নেতারা যৌথভাবে চীন-আসিয়ান মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের সংস্করণ ৩.০-এ আলোচনার উপসংহার ঘোষণা করেছে এবং ‘চীন-আসিয়ান চুক্তি আপগ্রেডিং বিষয়ে আলোচনার সমাপ্তির যৌথ বিবৃতি’ জারি করেছে।

উভয়পক্ষই জোর দিয়েছে যে সংস্করণ ৩.০ বিদ্যমান চীন-আসিয়ান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং আঞ্চলিক সার্বিক  অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তির ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ মূল্য সংযোজন অর্জন করেছে। এতে ডিজিটাল অর্থনীতি, সবুজ অর্থনীতি, সাপ্লাই চেইন আন্তঃসংযোগ, মানদন্ড প্রযুক্তিগত প্রবিধান ও সামঞ্জস্য মূল্যায়ন পদ্ধতি, কাস্টমস পদ্ধতি এবং বাণিজ্য সুবিধা, স্বাস্থ্য ও ফাইটোস্যানিটারি ব্যবস্থা, প্রতিযোগিতা ও ভোক্তা সুরক্ষা, ক্ষুত্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোগ, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ইত্যাদি বিষয় রয়েছে। যার মাধ্যমে দু’পক্ষ নতুন শিল্প-বাণিজ্য উন্নয়ন ক্ষেত্রের উপকারিতামূলক সহযোগিতা, মানদণ্ড ও নিয়মকানুন ক্ষেত্রের আন্তঃসংযোগ, বাণিজ্য সহজীকরণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন জোরদার করা যায়। উভয়পক্ষ নিশ্চিত করেছে যে তারা আইনি পর্যালোচনা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে এবং ২০২৫ সালে আপগ্রেড প্রোটোকল স্বাক্ষরের প্রচার করবে। এটি চীন-আসিয়ান অভিন্ন কল্যাণের কমিউনিটির অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতার একটি নতুন স্তরের জন্য একটি নতুন পদক্ষেপ চিহ্নিত করে।

প্রাসঙ্গিক ঐকমত্য এবং ফলাফল আবারও প্রমাণ করে যে শান্তি কামনা করা এবং উন্নয়নের প্রচার করা আঞ্চলিক দেশগুলোর জরুরি আকাঙ্ক্ষা। অভিন্ন স্বার্থের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা এবং সঠিকভাবে মতপার্থক্য মোকাবেলা করা হলো চীন-আসিয়ান সহযোগিতার মূল্যবান অভিজ্ঞতা এবং তা সব পক্ষের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ী হতে পারে।

 (স্বর্ণা/হাশিম/লিলি)