বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশের বাস চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংস্থা-আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোতে। চীনসহ এ অঞ্চলটি অপার বাজার সম্ভাবনা ধারন করে, যা মন্থর বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।
চীন-আসিয়ান সহযোগিতায় একটি নতুন মাইলফলক চীন-আসিয়ান মুক্ত বাণিজ্য এলাকার আপগ্রেড আলোচনার সংস্করণ ৩.০-এর উল্লেখযোগ্য সমাপ্তির বিষয়ে বৃহস্পতিবার ২৭তম চীন-আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াংয়ের ঘোষণা দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে।
ঘোষণাটি একটি বিশালাকার বাজারের যৌথ বিকাশের পথ প্রশস্ত করবে, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং সবুজ উন্নয়নের মতো ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতার সুযোগ উন্মোচন করবে এবং পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতির একীকরণকে চালিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চীনা প্রধানমন্ত্রী যেমন বলেছেন, চীন-আসিয়ান সম্পর্ক এশিয়ার জন্য সুদূরপ্রসারী তাত্পর্যসহ দ্বিপাক্ষিক সুযোগের বাইরে বিকশিত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব রয়েছে।
২০২১ সালে চালু হওয়ার পর থেকে, চীন-লাওস রেলওয়ে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছে, যাত্রীর সংখ্যা এবং প্রতি বছর মোট পণ্যসম্ভারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীন-লাওস রেলপথ আজ দীর্ঘ দূরত্ব ভ্রমণ করা লাওবাসীদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।
চীন-লাওস রেলওয়ের নির্মাণ চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য একটি বেঞ্চমার্ক প্রকল্প হয়ে উঠেছে। অন্যত্র, অন্যান্য গ্লোবাল সাউথ দেশগুলোর সংযোগ বাড়াতে সাহায্য করার ক্ষেত্রেও চীনের প্রচেষ্টা দৃশ্যমান।
ইন্দোনেশিয়ায়, জাকার্তা-বান্দুং হাই-স্পিড রেলওয়ে এ যাবত ৫ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহন করেছে এবং আগস্ট পর্যন্ত ১৫৭টি দেশ ও অঞ্চলের আড়াই লাখ যাত্রীকে পরিষেবা দিয়েছে। এই অঞ্চলের অসংখ্য আধুনিক বিমানবন্দর এবং সমুদ্র বন্দরগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন প্রাণশক্তি যোগ করেছে।
বিশ্বব্যাংকের একটি অনুমান অনুসারে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অধীনে পরিবহন প্রকল্পগুলো অর্থনৈতিক করিডোর বরাবর ভ্রমণের সময় ১২ শতাংশ কমাতে পারে, ২.৭ শতাংশ থেকে ৯.৭ শতাংশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে পারে, ৩.৪ শতাংশ পর্যন্ত আয় বাড়াতে পারে এবং ৭.৬ মিলিয়ন মানুষকে চরম দারিদ্র্যের বাইরে নিয়ে আসতে পারে।
থাইল্যান্ডে, থাই-চীনা রেয়ং শিল্প অঞ্চল থাইল্যান্ড এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে বিনিয়োগকারী চীনা উত্পাদন উদ্যোগগুলোর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
থাই-চাইনিজ রেয়ং ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিয়েলটি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির প্রেসিডেন্ট, শিল্প জোনের অপারেটর চাও বিন বলেন, পার্কটি কিছু শিল্প-নেতৃস্থানীয় চীনা কোম্পানিকে থাইল্যান্ডে বিনিয়োগ করতে আকৃষ্ট করেছে।
কম্বোডিয়ার রয়্যাল একাডেমির নীতি বিশ্লেষক সেউন স্যাম বলেছেন, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক গতিশীলতাকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে চীন এবং আসিয়ানের মধ্যে বন্ধন গুরুত্বপূর্ণ।
২৭তম চীন-আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং সবুজ উন্নয়নের মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনা তুলে ধরে চীনা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চীন প্রযুক্তিগত বিপ্লব এবং শিল্প পরিবর্তনের নতুন রাউন্ডের সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে আসিয়ানের সাথে যোগ দিতে চায়।
মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ডিজিটাল লাইফস্টাইল এবং চীন-আসিয়ান সাংস্কৃতিক বিনিময় সংক্রান্ত একটি সাম্প্রতিক সেমিনারে, অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন যে, ডিজিটাল সাংস্কৃতিক বিষয়বস্তু চীন ও এ অঞ্চলের মধ্যে জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধির একটি মূল উপাদান। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চায়না-আসিয়ান ইলেকট্রনিক স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রি উইকও চিত্রিত করেছে কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সম্প্রদায়গুলোর সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করছে।
মালয়েশিয়ায় চীনা দূতাবাসের চার্জ ডি'অ্যাফেয়ার্স চেং সুয়ে ফাং বলেছেন যে, ডিজিটাল রূপান্তর এবং চীন-আসিয়ান ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বের অগ্রগতির সাথে, উভয়পক্ষই ডিজিটাল অর্থনীতিতে সহযোগিতা করবে, আঞ্চলিক সংযোগকে একীভূত করার জন্য শক্তিশালী প্রেরণা যোগ করবে।
সবুজ উন্নয়নে, চীন এবং আসিয়ান ইতিমধ্যেই ব্যাপক ও ফলপ্রসূ সহযোগিতায় নিযুক্ত হয়েছে।
বিআরআই’র থাইল্যান্ড-চীন রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক উইরুন ফিচাইওংফাকডি বলেছেন, বৈদ্যুতিক যানবাহন, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে চীনের উন্নয়ন ফলাফল এবং অভিজ্ঞতাগুলো বিআরআইয়ের ফোকাসের মূল ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। চীন বিশ্বকে আরও পছন্দ এবং বৃদ্ধির গতি প্রদান করছে বলেও মনে করেন তিনি।
মাহমুদ হাশিম
সিএমজি বাংলা, বেইজিং।