‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
৯০ তম পর্বে যা যা থাকছে:
১. চীনে কর্মসংস্থান বাড়াতে বিশেষ নির্দেশিকা জারি
২. মেধাবী চিকিৎসকদের বিকাশের সুযোগ দেয় শাংহাই
৩. চীনা সূচিশিল্পের উত্তরাধিকারী তরুণ ইয়ু চোংহান
১. চীনে কর্মসংস্থান বাড়াতে বিশেষ নির্দেশিকা জারি
সর্ব প্রথমে কর্মসংস্থান- এই কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে উচ্চ-মানের এবং যথেষ্ট পরিমাণ কর্মসংস্থানের জন্য একটি বিশেষ নির্দেশিকা জারি করেছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)কেন্দ্রীয় কমিটি এবং স্টেট কাউন্সিল।
সম্প্রতি জারিকৃত এই নির্দেশিকায় বলা হয়, ঐতিহ্যবাহী শিল্পের রূপান্তর ও আপগ্রেডিং, উদীয়মান শিল্পকে উত্সাহিত ও শক্তিশালীকরণ, ভবিষ্যতের শিল্পের বিকাশ এবং উন্নত উত্পাদন ক্লাস্টারগুলোর বিকাশকে বৃদ্ধি করাসহ আরও উচ্চ-মানের চাকরি তৈরির চেষ্টা করা উচিত।
নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, ডিজিটাল অর্থনীতিতে নতুন কর্মসংস্থানের স্থান সম্প্রসারণ, পরিবেশবান্ধব শিল্প সম্পর্কিত আরও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং রূপালী অর্থনীতির বিকাশের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের নতুন প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র গড়ে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
আজীবন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার উন্নতির মতো কাঠামোগত বেকারত্ব মোকাবিলার প্রচেষ্টার আহ্বানও জানানো হয়।
কর্মসংস্থানের জন্য টার্গেটেড এবং কার্যকরী পাবলিক সার্ভিস সিস্টেম এবং মূল গোষ্ঠীগুলোর জন্য কর্মসংস্থান সহায়তা প্রদানের সিস্টেমকে অপ্টিমাইজ করার আহ্বান জানানো হয়।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
২. মেধাবী চিকিৎসকদের বিকাশের সুযোগ দেয় শাংহাই
ওষুধ এবং চিকিৎসা পরিষেবায় বিশ্বমানের কেন্দ্র হিসেবে সুনাম তৈরিতে ২০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে সহযোগিতামূলক কাজ করছে শাংহাই। এরই অংশ হিসেবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিচ্ছে শাংহাই।
মঙ্গোলিয়ার একজন তরুণ ডাক্তার বাতসুলেন। শাংহাইয়ের রুইচিন হাসপাতালে কার্ডিয়াক সার্জারি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে উন্নত করোনারি চিকিৎসার কৌশল শিখছেন তিনি। জানালেন, এখানে পড়ে আরও নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারবেন তিনি। সঞ্চয় করতে পারবেন দারুণ সব অভিজ্ঞতা।
‘মঙ্গোলিয়ায় শুধু একটি কার্ডিয়াক সেন্টার আছে এবং আমরা সাধারণত প্রতি বছর ৩০০টি ওপেন হার্ট সার্জারি করি। রুইচিন হাসপাতালে, এ পরিমাণ সার্জারি এক মাসেই হয়।’
এই তরুণদের উদ্যম ও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবায় কীভাবে প্রভাব ফেলছে তা জানালেন রুইচিন হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট চাও ছিয়াং।
‘মঙ্গোলিয়ান ডাক্তাররাও কার্ডিওভাসকুলার ডিসিপ্লিনে সিস্টেম বিল্ডিংয়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন এবং অধ্যয়ন করছেন। দেশে ফিরে গিয়ে চাইলে তারা স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন করতে পারবেন।’
উজবেকিস্তানের ছাত্র বোসিতখোন কায়ুমভ স্নাতক শিক্ষার্থী হিসেবে শাংহাই ইউনিভার্সিটি অব ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিনে পড়ছেন। তিনি কাপিং ও ওয়ার্মিং সুই থেরাপিসহ আকুপাংচার এবং মক্সিবাস্টন- চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠছেন।
এই শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করার পর সার্ভিকাল এবং লোম্বার মেরুদণ্ডের রোগের চিকিৎসায় ঐতিহ্যগত চীনা এবং পশ্চিমা ওষুধের সমন্বয়ে একটি ক্লিনিক খোলার পরিকল্পনাও করছেন।
‘আমি ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা কৌশলগুলোকে উজবেকিস্তানে নিয়ে যেতে চাই, যাতে উজবেকিস্তানের জনগণও এ থেকে উপকৃত হয়।’
আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরে অভ্যন্তরীণসহ, আন্তর্জাতিক বাজারকেও পুরোপুরি কাজে লাগানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে শাংহাই। প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে তরুণদের।
স্বাস্থ্যসেবা, বীমা এবং পর্যটনের মতো একাধিক শিল্পের মাঝে আন্তঃক্ষমতায়নকে আরও ভালভাবে একত্রিত করবে শাংহাইয়ে এ উদ্যোগ। উচ্চস্তরের প্রযুক্তি এবং পরিষেবাগুলোকে একটি মেডিকেল ওয়ার্ল্ড হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতেও কাজ করছে শাংহাই।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদক: ফয়সল আবদুল্লাহ
৩. চীনা সূচিশিল্পের উত্তরাধিকারী তরুণ ইয়ু চোংহান
চীনে ঐতিহ্যগত ভাবে এমব্রয়ডারি বা সূচিকর্ম নারীদের হস্ত-শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তবে এবার পূর্ব চীনের চিয়াংসুতে ঘটেছে কিছুটা ব্যতিক্রম, নানথোং শহরের তরুণ একজন সূচিশিল্পী ইয়ু চোংহান। যিনি শেন এমব্রয়ডারির ঐতিহ্য ধারন করে সৃজনশীল কাজ করছেন।
"সু এমব্রয়ডারি" থেকে উদ্ভূত এই শেন এমব্রয়ডারি চীনের চারটি বিশেষ সূচিকর্ম শৈলীর একটি, যা পাঁচ প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।
ইয়ু চোংহান, ১৯৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন, সূচি শিল্পে দক্ষতা অর্জনে তার ১৭ বছরের অধ্যাবসায়। পারিবারিক ভাবেই তিনি শেন এমব্রয়ডারির চতুর্থ প্রজন্মের উত্তরাধিকারী চৌ উছেনের ছেলে।
শৈশব থেকেই শেন এমব্রয়ডারির পরিবেশে বড় হওয়ায় ইয়ু এই কারুশিল্পের প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন। তবে, তার মা প্রথম দিকে এটির বিরোধিতা করেন। ছেলেকে তিনি এই পেশায় দিতে রাজি ছিলেন না।
"যদিও আমি জানতাম যে সে এটি দ্রুত শিখতে পারবে তবু আমি চাইনি সে এমব্রয়ডারি শিখুক। কারণ আমি বিশ্বাস করতাম এই ক্ষেত্রে ছেলেদের আগ্রহী না হওয়াই ভালো।
"আমি গোপনে আমার ঘরে মায়ের কিছু কাজ নিয়ে খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করতাম। এভাবেই আমি সূচিকর্ম শিখেছি, আমার মায়ের থেকে।"
ইয়ু ২০০৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর, তার মায়ের আপত্তি সত্ত্বেও শেন এমব্রয়ডারির পদ্ধতি এবং কৌশলগুলোর দিকে মনোযোগী ছিলেন। ২০০৮ সালে এই তরুণের মা চৌ একটি স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করে প্রায় ৭০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেন। তবুও তাকে তার উত্তরাধীকারী খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়।
পরবর্তিতে মায়ের সমর্থনে ইয়ু সূচিকর্ম শিখতে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেন। পোশাক থেকে শুরু করে বড় ক্যানভাসে নিজের মৌলিক স্টাইল তৈরিতে অগ্রসর হন।
মা এবং ছেলের তৈরি শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ১৫ মিটার দীর্ঘ একটি সূচিকর্ম। যেখানে প্রাচীন সুচৌ শহরের দৃশ্যাবলী চিত্রিত হয়েছে। চৌ এর দল নির্মিত শেন এমব্রয়ডারির এটিই সেরা কাজ।
"যদি কাজটি মাত্র একজন ব্যক্তির মাধ্যমে এমব্রয়ডারি করা হতো তবে তার ২৩ বছর সময় লাগত। আমরা একটি দল হিসেবে কাজ করেছি। আমাদের দলে ১৬ জন লোক ছিল, যারা পালাক্রমে কাজ করে এবং এটি শেষ করতে আমাদের দেড় বছর লাগে"।
"সূচীকর্মটিতে ১২,০০০ এর বেশি অক্ষর এবং ২০০ টিরও বেশি দোকানের নকশা রয়েছে। প্রতিটি চরিত্রের ভ্রু, চোখ, নাক এবং মুখ সহ আলাদা মুখাবয়ব স্পষ্ট"।
ইয়ু বিশ্বাস করেন, একজন পুরুষ সূচিকার হিসেবে সৃজনশীলতার পূর্ণ বিকাশ, নতুন ধারা তৈরির সাহসিকতা এবং সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ।
শেন এমব্রয়ডারির একজন তরুণ উত্তরাধিকারী হিসেবে, ইয়ু এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তা করেন। সৃজনশীল থিম এবং বাজারের সম্ভাবনাগুলোকে সাহসের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করে দক্ষতাকে নতুন প্রাণশক্তি যোগানোর চেষ্টা করেন।
২০২৩ সালে নানথোং সাহিত্য ও শিল্প প্রতিযোগিতায় "ফ্ল্যামিঙ্গোস" শিরোনামে তার একটি শিল্পকর্ম চারু ও কারুশিল্প বিভাগে তৃতীয় পুরস্কার জিতে। যদিও এটি ইয়ুয়ের প্রিয় কাজগুলোর মধ্যে একটি, কিন্তু প্রাথমিকভাবে তার মায়ের এটি পছন্দ হয়নি।
‘প্রাথমিকভাবে আমার মা 'ফ্ল্যামিঙ্গোস' এর বিষয়বস্তুটি পছন্দ করেননি, তার মতে রঙগুলো বেশি উজ্জ্বল। আমি যুক্তি দিয়েছিলাম যে তরুণরা এই শিল্পকর্মের প্রশংসা করতে পারে, যেহেতু তরুণরা প্রাণবন্ত রঙ পছন্দ করে"।
এই ঐতিহ্যগত শিল্পকর্মের সঙ্গে আরও বেশি মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিতে ইয়ু নিজের এমব্রয়ডারি সৃষ্টির পাশাপাশি, তার মায়ের স্টুডিওতে যোগদান করেন।
প্রতিবেদক : নাসরুল্লাহ রাসু
সম্পাদক: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী