এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। চীনে রহস্যময় পিরামিড পাহাড়
২। লিচিয়াং সিটির প্রাচীন নগরী
৩। টুকরো খবর
• ১৪৪ ঘণ্টা ভিসামুক্ত নীতিতে ভ্রমণ বেড়েছে চীনে
• জাতীয় দিবসের ছুটিতে পার্কে ভ্রমণ করেছে ১২১ মিলিয়ন দর্শনার্থী
• জাতীয় দিবসের ছুটিতে হংকং এসেছে প্রায় দশ লাখ পর্যটক
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৮৯ তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। চীনে রহস্যময় পিরামিড পাহাড়
মিসরের পিরামিডের খ্যাতি জগত জোড়া। কিন্তু মিসর ছাড়াও মেক্সিকো, সুদান ও চীনের মতো দেশেও রয়েছে পিরামিড। এসব পিরামিড দেখতে প্রতি বছর ভিড় জমায় হাজারও দর্শনার্থী। তবে চীনেই এমন কিছু পাহাড় রয়েছে, যেগুলো দেখতে অবিকল পিরামিডের মতো। দেশটির দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় কুইচৌ প্রদেশের আনলং কাউন্টিতে ওই পাহাড়ের অবস্থান।
বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এগুলো পাহাড়। দেখতে এমন অনন্য হওয়ায় এই পাহাড় রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দর্শনার্থীদের কাছে। চীনের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন এই পাহাড় দেখতে আসছেন হাজার হাজার মানুষ। দর্শনার্থীদের চোখে এসব পাহাড় যেন পিরামিড হিসেবেই ধরা পড়েছে।
চলতি বছরের মার্চে আনলংয়ের কাছে পিরামিডের মতো এই পাহাড়ের ভিডিও ওপর থেকে ধারণ করেন একজন ফটোগ্রাফার। এরপর সেই ভিডিও চীনের টিকটকের মতো ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ডোইনে পোস্ট করেন। ভিডিওটি তিনি সূর্যাস্তের সময় ধারণ করেছিলেন। সেটি পোস্ট করার পর পরই ৪০ লাখের বেশি ভিউ হয়। কমেন্ট পরে এক হাজারের বেশি।
ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লেখেন, আমি মনে করি এই পাহাড় দেখতে অনেকটাই পিরামিডের মতো। এর উচ্চতা ও উচ্চতা কোণ এমনকি অক্ষাংশেরও পিরামিডের সঙ্গে খুব মিল রয়েছে।
কয়েক মাস আগে ধারণ করা আরেকটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সুউচ্চ ওই পাহাড়গুলো দেখতে পিরামিডের মতো। তবে এর বাইরের অংশ পুরোটাই সবুজের চাঁদরে ঢাকা। দর্শনার্থীদের কাছে তাই রহস্যেই আবৃত এই পিরামিড পাহাড়। এখন এই পাহাড়কে ঘিরেই ওই এলাকার পর্যটন ব্যবসা জমে উঠেছে। বানানো হচ্ছে বিভিন্ন উঁচু প্ল্যাটফর্ম, যেখান থেকে এই পাহাড় দেখা যায়।
মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পাঁচ দিনের ছুটিতে ৬১ হাজার দর্শনার্থী পিরামিড পাহাড় দেখতে গিয়েছিল। কুইচৌর বাইরে থেকেও বেইজিং ও সাংহাই দেখে ছুটে যান দর্শনার্থীরা। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, প্রায় ২০ কোটি বছর আগে প্রাকৃতিকভাবেই এই পাহাড় গঠিত হয়েছে। ডলোমাইট নামে এক ধরনের চুনাপাথরের কারণে পিরামিডের আকৃতি ধারণ করেছে এই পাহাড়।
কুইচৌ প্রদেশ চীনের দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থিত। এই অঞ্চলটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ১০০ মিটার উঁচু। এখানকার প্রায় ৯২.৫ শতাংশ এলাকা পাহাড়ি। এ কারণে এই অঞ্চলটি চীনের সবচেয়ে পার্বত্যময় অঞ্চল হিসেবেও পরিচিত। পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় কুইচৌর আবহাওয়াও অন্য যেকোনো স্থান থেকে আলাদা।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া
২। লিচিয়াং সিটির প্রাচীন নগরী
বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বিচিত্র সংস্কৃতি আর অপরূপ সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য চীনের ইয়ুননান প্রদেশ বিখ্যাত। ইয়ুননানের একটি বিখ্যাত পর্যটন শহর হলো লিচিয়াং সিটি। এখানে অনেক পর্যটন স্পট রয়েছে। এই শহরের একটি বিখ্যাত পর্যটন স্পট হলো প্রাচীন নগরী বা ওল্ড টাউন। স্থানীয় মানুষ একে তাইয়ান নামে ডাকে। এই প্রাচীন নগরী ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রয়েছে।
এই প্রাচীন নগরীর রয়েছে হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস। সং রাজবংশের সময় এখানে নগরী গড়ে ওঠে। এর জল সরবরাহ ব্যবস্থা এবং সেতু বিখ্যাত। এই নগরীতে হাজার বছর আগে ভূগর্ভস্থ জল সরবরাহ ব্যবস্থা ছিল আশ্চর্যভাবে নিখুঁত ও কার্যকর। কারুকার্যকরা সেতুও এখানকার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।
এখানে নাসি, পাই এবং টিবেটান জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বাস করে যাদের আকর্ষণীয় লোকজ সংস্কৃতি রয়েছে। নাসি জাতিকে অনেকসময় নাখি জাতিও বলা হয়।
নাসি জাতির স্থাপত্যশিল্প অত্যন্ত আকর্ষণীয়। নাসি জাতির ইটের তৈরি বিশেষ ধরনের ঘরবাড়ি দেখতেও এখানে আসেন পর্যটকরা। পাই এবং টিবেটান জাতির লোকজ নৃত্য, তাদের পোশাক ও অলংকার এখানকার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।
পাই কারুশিল্পীরা কাঠের কাজে অত্যন্ত দক্ষ। স্মরণাতীতকাল থেকে পাই জাতিগোষ্ঠীর মানুষ কাঠ খোদাই শিল্পে দক্ষতা ধরে রেখেছে। তারা জানালার ফ্রেমে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য করে থাকেন।
এখানে পাই জাতির কারুশিল্পীদের কারুকার্য করা কাঠের নানা রকম শোপিস পাওয়া যায়। কারুকাজ করা উইনডো প্যানেল বা কাঠের চৌকাঠ পর্যটকরা কিনতেও পারেন।
এখানে দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ করা কাঠের বাড়িও দেখার মতো। নাসিদের সংগীতও বিশেষ ঐতিহ্যবাহী। এই প্রাচীন নগরীতে প্রায়ই ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আযোজন থাকে বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে।
আরেকটি কথা না বললেই নয়, এই পর্যটন স্পটে সুভ্যেনির এবং খাদ্যসামগ্রীর চমৎকার কিছু দোকান রয়েছে। বিশেষ করে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী খাবারের রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ। এখানে হালাল খাবারের রেস্টুরেন্টও রয়েছে।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
৩। টুকরো খবর
• ১৪৪ ঘণ্টা ভিসামুক্ত নীতিতে ভ্রমণ বেড়েছে চীনে
সামাজিক গণমাধ্যমে এখন একটি জনপ্রিয় শব্দ ‘চীন ভ্রমণ’। ১৪৪ ঘণ্টার জন্য ভিসামুক্ত ভ্রমণ ব্যবস্থা চালুর পর থেকেই চীনে বিদেশি পর্যটক বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। সম্প্রতি বিভিন্ন মিডিয়া প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিদেশি পর্যটকরা এখন খাঁটি চীনা আস্বাদ গ্রহণ করতে ছুটে আসছেন চীনে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ব্যস্ত শহর শাংহাইয়ের রাস্তা ও অলিগলির মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বিদেশি পর্যটকরা এক অনন্য নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক অনুভূতি বোধ করছেন।
এই বছরের এপ্রিল থেকে, শেনচেন, শাংহাই এবং সুচৌ শহরে বিদেশি পর্যটকরা মেট্রো টিকিট কেনার জন্য তাদের বিদেশি ব্যাংক কার্ডও ব্যবহার করতে পারছেন বলেও জানানো হয়।
• জাতীয় দিবসের ছুটিতে পার্কে ভ্রমণ করেছে ১২১ মিলিয়ন দর্শনার্থী
চলতি বছরের জাতীয় দিবসের ছুটিতে চীনের বিভিন্ন পার্কে ভ্রমণ করেছে ১২১ মিলিয়ন দর্শনার্থী। রোববার আবাসন ও নগর পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের গেল পাঁচ দিনের হিসাবে উঠে এসেছে এ তথ্য।
এবারের ছুটিতে ১ অক্টোবর থেকে থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন পার্কগুলোতে খেলাধুলা, ফিটনেস কার্যক্রম, অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রদর্শনী এবং লণ্ঠন উৎসবসহ প্রায় ৩ হাজার ২০০টি বিষয়ভিত্তিক ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে।
• জাতীয় দিবসের ছুটিতে হংকং এসেছে প্রায় দশ লাখ পর্যটক
এবারের জাতীয় দিবসের ছুটিতে চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে দেশটির বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ে ভ্রমণ করেছে ৯ লাখ ৮০ হাজার পর্যটক, যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি। রোববার হংকং প্রশাসনের অভিবাসন বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে।
অভিবাসন বিভাগ বলছে, জাতীয় দিবসের প্রথম দিনে মূল ভূখণ্ড থেকে ২ লাখ ২০ হাজার পর্যটক হংকং ঘুরতে আসে, যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১ লাখ ৭৭ হাজার বেশি।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী