বন্ধুরা, আপনারা শুনছেন ‘চলতি প্রসঙ্গ’, সঙ্গে আছি আমি মুক্তা। সম্প্রতি, সিনচিয়াংয়ে উত্পাদিত তুলা বয়কটের অভিযোগে, মার্কিন পোশাক প্রস্তুতকারক কোম্পানি পিভিএইচ-এর বিরুদ্ধে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে চীন। কোনো কোনো বিদেশী গণমাধ্যম এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। এ সব গণমাধ্যম মনে করে, সিনচিয়াং-সম্পর্কিত ইস্যুতে চীন ‘কঠিন সংকেত’ দিয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি এ বিষয় নিয়ে কথা বলব।
সম্প্রতি, আইন ও নিয়ম অনুযায়ী, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অবিশ্বস্ত সত্তা তালিকা-ব্যবস্থা মার্কিন পিভিএইচ গ্রুপের সিনচিয়াং-সম্পর্কিত পণ্যের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা লঙ্ঘনের দায়ে তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে কোনো কোনো বিদেশী গণমাধ্যম। কোনো কোনো গণমাধ্যম একে সিনচিয়াং-সম্পর্কিত ইস্যুতে চীনের ‘কঠিন মনোভাব’ হিসাবে ব্যাখ্যা করছে।
পিভিএইচ সিনচিয়াং-এর তুলাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পণ্য অন্যায্যভাবে বয়কট করেছে। তাই, চীনের পিভিএইচ-এর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত ও আইনী। এটি সংশ্লিষ্ট উদ্যোগ ও শিল্পের বৈধ অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য চীন সরকারের একটি বৈধ পদক্ষেপ। বেইজিং বিদেশী প্রতিষ্ঠাগুলোকে চীনে বিনিয়োগে উত্সাহিত করে। এর মানে এই নয় যে, চীন নীতি ও অবস্থান-সম্পর্কিত বিষয়ে আপস করবে। চীন অবশ্যই আইনগত অস্ত্র দিয়ে চীনা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পের বৈধ অধিকার সুরক্ষা করে যাবে এবং ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শৃঙ্খলা সুরক্ষা করবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয়, সিনচিয়াংয়ে ‘গণহত্যা’ ও ‘জোর করে শ্রম’ আদায়ের মতো অযৌক্তিক চীন-বিরোধী বর্ণনা বিশ্বের টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পের শৃঙ্খলাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। অনেক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পোশাক কোম্পানিকে সিনচিয়াংয়ের তুলা ইস্যুতে তথাকথিত ‘রাজনৈতিকভাবে সঠিক’ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পিভিএচ গ্রুপের (Calvin Klein、Tommy Hilfigerr)-সহ বিভিন্ন পোষাকের ব্রান্ড আছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়েছে, গ্রুপটি বলেছিলো চীন হলো তার গুরুত্বপূর্ণ প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন। গত বছরে গ্রুপটি চীনে আয় ২০ শতাংশ বাড়িয়েছে এবং চীনে ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চায়। তবে, পিভিএইচ মার্কিন সরকারের সাথে সহযোগিতা করে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈধ অধিকার ও স্বার্থকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য সিনচিয়াংয়ের বিরুদ্ধে দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। চীনকে অপবাদ দেওয়ার এহেন আচরণ বেইজিং অবশ্যই মেনে নেবে না। এদিকে, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সিনচিয়াং থেকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা এখনও একটি সাধারণ কৌশল, যা কিছু চীনবিরোধী শক্তির চীনকে অপমান করা ও চীন থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন, জার্মান ভক্সওয়াগেন গ্রুপ গত বছর বলেছিল যে, একটি বহিরাগত অডিট এজেন্সি জানিয়েছে, সিনচিয়াংয়ের কোনো কারখানায় ‘জোর করে শ্রম’ আদায়ের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি, গ্রুপটিকে একশ্রেণীর বিদেশী গণমাধ্যম ‘দোষী সাব্যস্ত করছে’। জার্মান রাসায়নিক জায়ান্ট বিএএসএফও বলেছে যে, তাদের সিনচিয়াংয়ের কারখানায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এটি কর্পোরেট মূল্যবোধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন অভিযোগ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল এবং ধীরে ধীরে সিনচিয়াং থেকে যৌথ উদ্যোগের শেয়ারগুলোকে সরিয়ে নেয়।
বস্তুত, চীনের উদ্দেশ্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে শাস্তি দেওয়া নয়। চীন পিভিএইচ-কে তদন্তে সহযোগিতা করতে ও প্রাসঙ্গিক উপকরণ সরবরাহ করতে ৩০ দিন সময় দেয়। আশা করা যায়, পিভিএইচ মার্কিন বাণিজ্য সংরক্ষণবাদের শিকার হবে নযা। চীন বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগকে স্বাগত জানায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে স্বাভাবিক বাণিজ্যিক যোগাযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করে। কিন্তু নীতি ও অবস্থানের ক্ষেত্রে আপস করার জায়গা নেই চীনের জন্য। (ছাই/আলিম/ওয়াং হাইমান)