অক্টোবর ৭: গত শুক্রবার চীনের উত্পাদিত বৈদ্যুতিক যানবাহনের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের বিষয়ে ইইউ ভোট দিয়েছে। ফলে এই প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে। চীনের তীব্র বিরোধিতা ছাড়া ইইউ’র অভ্যন্তরে মতভেদও অনেক। ইইউর পালাক্রমিক চেয়ারম্যান দেশ হিসেবে, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ওরবান ভিক্টর, হাঙ্গেরির পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক অর্থমন্ত্রী সিজ্জার্টো পিটার দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করেন এবং বলেন যে, এমন সিদ্ধান্ত ইইউ’র নিজস্ব প্রতিদ্বন্দ্বিতা শক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
ইউরোপে হাঙ্গেরির বৈদ্যুতিক যানবাহনের বৃদ্ধি সবচেয়ে দ্রুতগতির। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, হাঙ্গেরি সরকার বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্প উন্নয়নে উত্সাহ দেওয়ার ধারাবাহিক নীতি প্রণয়ন করেছে। চীনা প্রতিষ্ঠান হাঙ্গেরিতে কারখানা স্থাপন করেছে। এর ফলে হাঙ্গেরি ইইউতে নেতৃস্থানীয় বৈদ্যুতিক যানবাহন উৎপাদনকারী এবং ব্যাটারি উৎপাদনের ভিত্তি হয়ে উঠছে। বুদাপেস্টে, কিছু স্থানীয় বৈদ্যুতিক যানবাহন বিক্রেতা এবং ভোক্তারা ইইউ এর শুল্ক আরোপ পদক্ষেপের প্রতি সন্দেহ এবং বিরোধিতা প্রকাশ করেছেন।
হাঙ্গেরির একটি গাড়ি কোম্পানির বাজার বিভাগের প্রধান সিলার মার্ক বলেন, তাদের কাছে ইইউ’র শুল্ক আরোপ খুব অদ্ভুত ব্যাপার। চীনের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ অবিশ্বাস্য। তা দুই দেশের অর্থনীতির বিরাট ক্ষতি করবে। আসলে কেউ বেশি টাকা ব্যয় করতে পছন্দ করে না। চীনা বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য, যদি শুল্ক আরোপ করা হয়, দাম অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে, যা কোম্পানির বিক্রি এবং ভোক্তা চাহিদা হ্রাসে প্রভাবিত করবে। এই পদ্ধতিটি সম্পর্কের ক্ষতি করবে এবং এটি একটি ভাল ধারণা নয়।
গত ৪ জুলাই, ইইউ চীনা বৈদ্যুতিক যানবাহনের উপর অস্থায়ী ভর্তুকি-বিরোধী শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা ঘোষণা করে। ২০ অক্টোবর ইইউ চীনা বৈদ্যুতিক যানবাহনের উপর ১৭ শতাংশ থেকে ৩৬.৩ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনাও ঘোষণা করে। দাম বৃদ্ধির আশংকায় ক্রেতারা আরো বেশি চীনা বৈদ্যুতিক যানবাহন ক্রয় করা শুরু করেছে।
গোবলিনি গাবর হাঙ্গেরিয়ান অটোমোবাইল ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান। ২০ শতকের ৮০’র দশকের শেষ দিকে, তিনি তার নিজের গাড়ি বিক্রির কোম্পানি চালানো শুরু করেন এবং ৩৫ বছর ধরে এই শিল্পের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। চীনা বৈদ্যুতিক যানবাহনে ইইউ’র বর্ধিত শুল্ক সম্পর্কে, তিনি বলেন যে ইইউ-এর সংরক্ষণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ইইউ’র গাড়ি শিল্পকে সত্যিকার অর্থে রক্ষা করবে না।
ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার বিচারে, সংরক্ষণবাদ ইউরোপকে বাঁচাতে পারবে না। ক্রেতারা কী কিনতে চায় এবং তারা কী কিনতে পারে- সেটা তারা নিজেই নির্ধারণ করে।
ইউরোপ দীর্ঘকাল ধরে ঐতিহ্যবাহী জ্বালানি-চালিত যানবাহনের ক্ষেত্রে বিশ্বনেতা ছিল, কিন্তু বৈদ্যুতিক যানবাহনের উত্থানের সাথে সাথে, চীনা বৈদ্যুতিক যানগুলো ইইউ’র বাজারে আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে তাদের বাজারের অংশীদারিত্ব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইইউ এ ধরনের বাস্তবতা এবং পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে ইচ্ছুক নয়। তার চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করা কঠিন। তার পরিবর্তে, এটি ‘ভর্তুকি-বিরোধী’ নাম ব্যবহার করে এবং ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় অবস্থান রক্ষা করার জন্য চীনা বৈদ্যুতিক যানবাহনের উপর শুল্ক আরোপ করার অজুহাত হিসাবে সংরক্ষণবাদের ব্যানারকে অপব্যবহার করছে। যাইহোক, এই পদক্ষেপ কার্যকরভাবে ইউরোপীয় বৈদ্যুতিক যানবাহন শিল্পের পিছিয়ে থাকার সমস্যা সমাধান করতে পারে না।
ইইউ যদি বৈদ্যুতিক যানবাহন শিল্পের বিকাশ করতে চায়, চীনের সঙ্গে পরামর্শ ও সহযোগিতাই ভবিষ্যতে সর্বোত্তম এবং একমাত্র উপায়।
আজ (সোমবার) চীন ও ইইউ চীনে বৈদ্যুতিক গাড়ির উপর কর বৃদ্ধির বিষয়ে একটি নতুন দফা আলোচনা করার কথা। আলোচনার নতুন রাউন্ডের আগে হোক বা চলাকালীন, ইউরোপীয় পক্ষকে আন্তরিকতা ও সঠিক পদক্ষেপ দেখাতে হবে।
(শুয়েই/তৌহিদ/আকাশ)