সার্বিক জনগণতন্ত্র হলো চীনের দুটি অলৌকিক ঘটনা সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ নিশ্চয়তা: সিএমজি সম্পাদকীয়
2024-10-04 17:25:27

অক্টোবর ৪: ‘বিগত ৭৫ বছরে আমাদের পার্টি দেশের সকল জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে একত্রিত ও নেতৃত্ব দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে এবং দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক স্থিতিশীলতা— এ দুটি অলৌকিক ঘটনা সৃষ্টি করেছে...’ গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এভাবে নয়াচীনের অসাধারণ অর্জনকে তুলে ধরেছেন।

বিশ্বের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার দিকে তাকালে দেখা যায়, চীনের মতো হাতেগোনা কয়েকটি দেশ মাত্র পৌনে এক শতাব্দীতে জাতীয় সমৃদ্ধি ও জনগণের সুখী জীবন নিশ্চিত করেছে। চীন কেন পারে? অনেক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক গণতান্ত্রিক রাজনীতি এবং জাতীয় শাসনের কার্যকারিতার দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ ও চিন্তা করেন। জনগণকেন্দ্রিক শাসন ধারণা থেকে শুরু করে সার্বিক জনগণতন্ত্রের ব্যবস্থা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ায় বহির্বিশ্ব চীনের উন্নয়ন ও অগ্রগতির গভীর যুক্তি দেখেছে। চীনের গণতান্ত্রিক রাজনীতির বাস্তব অভিজ্ঞতা বিশৃঙ্খল ও পরিবর্তনশীল এই বিশ্বের জন্য দরকারী প্রজ্ঞা দিয়েছে।

‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সকল ক্ষমতা জনগণের’—এটি চীনের সংবিধানে নিহিত একান্ত অঙ্গীকার। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার পর, ‘সমস্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জনগণের কাছে থাকে’, তা নিশ্চিত করার জন্য গণকংগ্রেস ব্যবস্থা এবং বহুদলীয় সহযোগিতা ও রাজনৈতিক পরামর্শ ব্যবস্থার মতো ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জনগণকে দেশের মালিক বানানোর নয়া চীনের প্রতিষ্ঠাতাদের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে।

৭৫ বছরের উন্নয়নের পর চীনের গণতন্ত্রের অবস্থা কী? আসুন একসঙ্গে জেনে নেওয়া যাক। দুই বছর আগে সম্পন্ন হওয়া চীনের জেলা এবং থানা পর্যায়ের গণকংগ্রেসের সাধারণ নির্বাচনে ১ বিলিয়নেরও বেশি ভোটার, এক জনের একটি ভোটে, সরাসরি ২.৬ মিলিয়নেরও বেশি জেলা এবং থানার গণকংগ্রেসের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতি বছর চীনের ‘দুই অধিবেশন’ চলাকালীন জাতীয় গণকংগ্রেসের প্রতিনিধি এবং চীনের গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্যরা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য জনগণের ইচ্ছা বেইজিংয়ে নিয়ে আসেন। নানা আইনের প্রণয়নে জনগণের অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন স্থানে ৬ হাজারেরও বেশি তৃণমূলের আইন প্রণয়নের যোগাযোগ স্টেশন স্থাপন করা হয়। বলা যায়, চীনা-শৈলীর গণতন্ত্র কেবল জাতীয় নীতি প্রণয়নেই প্রতিফলিত হয় না, বরং জনগণের পোশাক ও খাবারের খুঁটিনাটি বিস্তারিত তথ্যেও প্রতিফলিত হয়।

বিশেষ করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৮তম জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে চীনের ক্ষমতাসীন দল গণতান্ত্রিক রাজনীতির উন্নয়নের শৃঙ্খলা সম্পর্কে তার বোঝাপড়াকে আরও গভীর করেছে এবং ‘সার্বিক জনগণতন্ত্র’ ধারণাটি প্রস্তাব করেছে, যা বহির্বিশ্বের ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে ভিন্ন, চীনের সার্বিক জনগণতন্ত্র সর্বব্যাপী ও সর্বজনীন কভারেজসহ গণতন্ত্র, সবচে বিস্তৃত, খাঁটি এবং কার্যকর সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র।

বিশ্ব গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, চীনা বৈশিষ্ট্যময় গণতন্ত্রের অন্বেষণ এবং অনুশীলন সমান মূল্যবান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশ্ব কাঠামোর গভীর পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছু পশ্চিমা দেশ উচ্ছৃঙ্খল শাসন এবং গণতান্ত্রিক বিশৃঙ্খলার সম্মুখীন হয়েছে। যাহোক, তারা গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে সংজ্ঞায়িত করার অধিকারকে একচেটিয়া করার চেষ্টা করে, আধিপত্য এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ বজায় রাখার জন্য একটি হাতিয়ার হিসাবে ‘গণতন্ত্র’কে ব্যবহার করে আসছে এবং তথাকথিত ‘গণতান্ত্রিক রূপান্তর’ জোরপূর্বক প্রচার করে আসছে, যা বিশ্ব গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে গুরুতর আঘাত হেনেছে।

এই প্রেক্ষাপটে, চীনের সার্বিক জনগণতন্ত্র বিশ্বের জন্য গভীর চিন্তাভাবনা নিয়ে এসেছে। অধিক থেকে অধিকতর মানুষ স্পষ্টভাবে দেখছে: গণতন্ত্র কোনোভাবেই পশ্চিমা মডেল নয়; গণতন্ত্র কয়েকটি দেশ নয়, সব দেশের জনগণের অধিকার, একটি দেশ গণতান্ত্রিক কিনা তা শেষ পর্যন্ত বিচার করতে হবে সে দেশের জনগণকে; গণতন্ত্র এটি একটি সাজসজ্জা নয়, এটি প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত হয় না, জনগণের সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়। গত ৭৫ বছরে, চীনের ক্ষমতাসীন পার্টি জাতীয় অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি চীনা-শৈলীর গণতান্ত্রিক উন্নয়নের পথ অন্বেষণ করেছে। ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি চীনা জনগণ সত্যিকার অর্থে তাদের নিজের দেশের মালিক হয়ে উঠেছে। এটি গণতন্ত্রের উন্নয়নে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আস্থাকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে এবং মানব রাজনৈতিক সভ্যতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

(লিলি/হাশিম/তুহিনা)