অক্টোবর ২: ‘চীন অভূতপূর্ব চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকীকরণের পথে যাত্রা করেছে’। গণপ্রজাতন্ত্রি চীন প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা পৃথক পৃথকভাবে আবেগের সঙ্গে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। বিগত ৭৫ বছরে, প্রাচ্যের এক সময়ের দরিদ্র বড় দেশটি ‘পিছিয়ে পড়া’ থেকে ‘সময়ের সাথে তালি মিলিয়ে’ আজ ‘সময়ের নেতৃত্বে’ চলে এসেছে। তাছাড়া, দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক স্থিতিশীলতা—এই দুটি অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়েছে চীন, যাতে সারা বিশ্ব বিস্মিত হয়েছে।
বর্তমানে চীন, নিজস্ব বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকীকরণের মাধ্যমে সার্বিকভাবে একটি শক্তিশালী দেশ নির্মাণ এবং জাতীয় পুনর্জাগরণের প্রচার করছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এখন মনোযোগ দিচ্ছেন: চীন কীভাবে নিজস্ব-শৈলীর আধুনিকায়নকে উন্নীত করবে? এটি বিশ্বের জন্য কী কী নতুন সুযোগ নিয়ে আসবে? ৩০ সেপ্টেম্বর, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনের একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে এসব প্রশ্নের উত্তরগুলো দেওয়া হয়েছে।
‘আমাদের অবশ্যই চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব মেনে চলতে হবে,’ ‘আমাদের অবশ্যই চীনা বৈশিষ্ট্যময় সমাজতন্ত্রের পথে চলতে হবে,’ ‘আমাদের অবশ্যই জনগণকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি মেনে চলতে হবে,’ এবং ‘আমাদের অবশ্যই শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথ মেনে চলতে হবে।’ এ চারটি প্রস্তাব শুধুমাত্র অতীত অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্তসার নয়, বরং ভবিষ্যতের উন্নয়নের জন্য একটি নির্দেশিকা এবং চীনা আধুনিকীকরণের প্রচারের জন্য দিক নির্দেশ করে।
‘ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাইলে আগে অতীতকে বুঝতে হবে।’ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস একবার মন্তব্য করেছিলেন যে, চীন ‘বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নের জন্য একটি অপরিহার্য এবং বিশ্বাসযোগ্য শক্তি’ হয়ে উঠেছে। বিগত ৭৫ বছরে চীনা-শৈলীর আধুনিকীকরণ শুধুমাত্র চীনের উন্নয়নকে উন্নীত করেনি, বরং বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়ন এবং মানব অগ্রগতিতে ইতিবাচক অবদান রেখেছে।
নয়াচীনের প্রতিষ্ঠা থেকে বিংশ শতাব্দীর ৭০’র দশকের শেষ পর্যন্ত, চীন একটি স্বাধীন এবং তুলনামূলকভাবে সম্পূর্ণ শিল্প ব্যবস্থা এবং জাতীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে, যা চীনা-শৈলীর আধুনিকীকরণের জন্য একটি বস্তুগত ভিত্তি স্থাপন করেছে। এই সময়েই চীন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতির প্রস্তাব করেছিল, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নিয়ম এবং আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিতে পরিণত হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে সংস্কার এবং উন্মুক্তকরণের সূচনা করার পর, চীনের আধুনিকীকরণ একটি নতুন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে ২০০১ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগদানের পর, যা অর্থনৈতিক বিশ্বায়নে শক্তিশালী প্রেরণা দিয়েছে। ২০১২ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৮তম জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে, চীনা-শৈলীর আধুনিকীকরণ সার্বিকভাবে চালু করা হয়েছে, এটি শুধুমাত্র মানব দারিদ্র্য হ্রাসের ইতিহাসে একটি অলৌকিক ঘটনা তৈরি করেনি, বরং ক্রমাগত উচ্চ-স্তরের বৈদেশিক উন্মুক্ততা প্রচার করেছে। মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সম্প্রদায়ের ধারণাটি ক্রমবর্ধমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে, শতাব্দীর পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি কঠোর হচ্ছে এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দুর্বল। একই সময়ে নতুন দফার বিজ্ঞানসম্মত ও প্রযুক্তিগত বিপ্লব এবং শিল্প পরিবর্তন উন্নয়নের নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। বিশ্বের একটি শান্তিপূর্ণ ও শান্ত পরিবেশ এবং অভিন্ন উন্নয়নের জন্য নতুন চালিকাশক্তি প্রয়োজন। অতীতের সফল অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে চীনা-শৈলীর আধুনিকীকরণের অগ্রগতি বিশ্বে আরও নতুন সুযোগ নিয়ে আসতে সক্ষম।
একই সময়ে চীনা-শৈলী আধুনিকীকরণ কার্যকরভাবে বিশ্ব শাসনের উন্নতির প্রচার করবে। ভারসাম্যহীন বৈশ্বিক উন্নয়ন, ব্যাপক একতরফা উত্পীড়ন এবং তীব্র বাস্তুসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের মতো অনেক বৈশ্বিক সংকটের মুখে, চীন সর্বদা বিশ্বাস করে যে, আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোকে সকলের পরামর্শের মাধ্যমে সমাধান করা উচিত এবং বিশ্ব শাসনে ‘সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতাবাদ’ অনুশীলন করা উচিত। বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ, বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ এবং বৈশ্বিক সভ্যতার উদ্যোগ প্রস্তাব করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের বৈধ অধিকার রক্ষায় দৃঢ়ভাবে সমর্থন করা, জাতিসংঘের ক্রমাগত সংস্কার ও উন্নয়নকে সমর্থন করা এবং ‘গ্লোবাল সাউথের’ প্রতিনিধিত্ব ও কণ্ঠস্বর বৃদ্ধি করা পর্যন্ত, চীন যা যা করেছে তা বিশ্বব্যাপী শাসন ব্যবস্থা আরও ন্যায্য এবং যুক্তিসঙ্গত দিকে উন্নয়ন করতে সহায়ক হবে বলে সিএমজি সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করে বলা হয়।
(লিলি/হাশিম/তুহিনা)