এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। জাতীয় দিবসের ছুটিতে ঘুরে আসুন কুইলিন শহর থেকে
২। এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারে এক টুকরো চীন
৩। উত্তর চীনে রূপকথার সোনালি অরণ্য
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৮৮ তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। জাতীয় দিবসের ছুটিতে ঘুরে আসুন কুইলিন শহর থেকে
দক্ষিণ চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কুইলিন শহর একটি বিশ্ব বিখ্যাত পর্যটন শহর। হাজার বছর ধরে, সেখানকার চিত্র অনেক সাহিত্যিককে তাদের প্রতিভা ছড়িয়ে দিতে অনুপ্রাণিত করেছে। শহরটির অপূর্ব প্রকৃতি বহু মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। অনন্য কার্স্ট ল্যান্ডফর্ম বিস্ময়কর পর্বত এবং সুন্দর জলরাশি তৈরি করেছে।
কুইলিন শহর হচ্ছে ২১১০ বছরের ইতিহাসসম্পন্ন প্রাচীন নগর। এ শহরের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি উজ্জ্বল ও দীর্ঘকালের। কুইলিনের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ আর আর্দ্র। এখানকার শীতকাল খুব ঠান্ডা নয়, গ্রীষ্মকালও খুব গরম নয়। চারটি ঋতুতেই চারি দিক সবুজে আচ্ছন্ন থাকে এই শহর। বছরের গড়পড়তা তাপমাত্রা ১৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশর শহর কুইলিন। ভূবিদ্যার গবেষণা বলছে, প্রায় ৩০কোটি বছরের বেশী সময় আগে, এখানে সাগর ছিল। পৃথিবীর খোলা পরিক্রমের দরুণ গচ্ছিত চুনাপাথর উঠে স্থল হয়ে গেছে । পরে ক্ষয়ে যাওয়ায় অবশেষে এই জায়গা হয়ে যায় চেহারায় বৈচিত্র্যময় পাহাড়ের বন , গভীর চুনাপাথরের গুহা এবং রহস্যময় ভুগর্ভস্থ নদী। পরে কুইলিনকে চীনের শ্রেষ্ঠ দর্শনীয়স্থান আখ্যায়িত করা হয়েছে।
এদিকে, শহরটি এমন একটি জায়গায়, যেখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সমাগম দেখা যায়। পাশাপাশি একাধিক জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি এই শহর তুলে ধরে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য।
এই শহরের অন্যতম পর্যটন গন্তব্য লি নদী।ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের দেওয়া তথ্যমতে, "বিশ্বের শীর্ষ ১০ জলীয় আশ্চর্যের একটি" হিসাবে খ্যাত এই লি নদী। কুইলিন থেকে ইয়াংশুও পর্যন্ত লি নদী ক্রুজগুলো সবচেয়ে বিখ্যাত। এই ক্রুজগুলোতে বছরে লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থী আসে লি নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে। ৮৬ কিলোমিটার জলপথে পর্যটকরা খার্স্ট চূড়া, জলে মহিষ চরানো, মাঠে কৃষকের কাজ করা এবং পাহাড়েরর পাদদেশে ঐতিহ্যবাহী গ্রামগুলোর দেখারও সুযোগ পাবেন।
বিভিন্ন উপায়ে লি নদী ভ্রমণ করা যায়। বাঁশের ভেলায় কুইলিন ইয়াংশুও পর্যন্ত আরামে ভ্রমণ করতে পারবেন ভ্রমনপিপাসুরা। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে নৌকা দিয়ে ঘুরে বেড়ানো। এছাড়া প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়ার জন্য লি নদীর ধার ঘেঁষে আছে হাইকিং করার সুযোগও। মাছ ধরার পাশাপাশি আছে রাতের দৃশ্য দেখার সুব্যবস্থা।
এছাড়া কুইলিন শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে জিংআন কাউন্টির লিংচু খাল। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম ও সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত কৃত্রিম খালগুলোর মধ্যে একটি যা ২০১৮ সালে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী জলসেচ খালগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
মানবসৃষ্ট এই খাল পর্যটন ও আধুনিক কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই জল সংরক্ষণ প্রকল্পটির প্রাচীন চীনে কৌশলগত সামরিক গুরুত্ব ছিল এবং ছিন রাজবংশের (২২১-২০৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে) সম্রাট ছিন শি হুয়াং এই খাল নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই খাল জিং আন কাউন্টির প্রতীক যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
সরকারের একটি বিবৃতি অনুসারে ৩৬.৪ কিলোমিটার খালটি প্রায় ৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার ধান সেচ করে এবং ৫৯.০০০ জনের বেশি লোক এই খালের দ্বারা উপকৃত হয়।
এ ছাড়া এ শহরের নাম-করা আরও কিছু দর্শনীয়স্থান হলো: বিলিয়েন শৃংগ, ছিশিং পার্ক, লংসেন ঝরনা , লুদিন পাহাড় এবং হাতির নাকের পাহাড়।
পর্যটকদের আবাসন সুবিধায় এই শহরে রয়েছে ২৮টি পাঁচ -তারকা হোটেল। পাশাপাশি আছে ১৮টি আন্তর্জাতিক পর্যটন কোম্পানি ও এক হাজারেরও বেশি গাইড। এছাড়া যাতায়াত সুবিধার্থে দেশ-বিদেশের সঙ্গে এ শহরের প্রত্যক্ষ বিমানরুট রয়েছে ৪০টিরও বেশি। বর্তমানে এই শহর চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংস্থা আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে সংযোগকারী একটি ট্র্যাফিক হাব হিসেবে কাজ করছে।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া
২। এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারে এক টুকরো চীন
নিহাও চায়না। যার মানে হলো হ্যালো চায়না। চীনা লণ্ঠন, পান্ডা, চীনের ম্যাপসহ নানা বিষয়ে সাজানো হয়েছে নিহাও চায়না নামের এই রঙিন স্টল। ১১তম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারে এভাবেই এক টুকরো চীন হাজির হয়েছিল চীনা দূতাবাসের স্টলে।
পর্যটন শিল্পে গতি ফেরাতে ঢাকায় শুরু হয়েছে ১১তম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার। পর্যটন বিচিত্রার আয়োজনে তিন দিনব্যাপী এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজধানী ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায়।
মেলায় অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে চীনা দূতাবাসের স্টল। চীনের বিভিন্ন গন্তব্য ও ভিসা প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি তথ্য পেয়েছেন দর্শনার্থীরা। চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়ার আগ্রহ থেকেই স্টলটিতে ভিড় করছেন তারা। জেনেছেন চীন সম্পর্কে।
এশিয়ার আরও কিছু দেশের স্টলও আছে এ মেলায়। ১২০টি বুথে দেশ-বিদেশের পর্যটন প্রতিষ্ঠান, সরকারি সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের দূতাবাস অংশগ্রহণ করে। অংশ নেয় হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, ক্রুজ লাইন্স, এয়ারলাইন্স, ট্যুর অপারেটর ও থিমপার্কসহ বিনোদনধর্মী অনেক প্রতিষ্ঠান।
আসন্ন পর্যটন মৌসুমে আকর্ষণীয় ভ্রমণ অফার, হোটেল, রিসোর্ট বা প্যাকেজ বুকিংসহ বিশেষ ছাড় দিয়েছে নানা দেশের ট্রাভেল এজেন্সি।
এ ছাড়া মেলায় থাকছে পর্যটন বিষয়ক সেমিনার। বাংলাদেশের পর্যটন আকর্ষণকে জনপ্রিয় করা এবং আঞ্চলিক পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সেতুবন্ধন ঘটাতে এ আয়োজন করা হয়েছে বলে জানালেন মেলার আয়োজকরা।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ
৩। উত্তর চীনে রূপকথার সোনালি অরণ্য
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রূপকথায় সোনার গাছ, সোনার বনের কথা রয়েছে। উত্তর চীনের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল ইনার মঙ্গোলিয়ায় রয়েছে সোনালি রঙের বন যা পর্যটকদের আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।
ইনার মঙ্গোলিয়ার আলসা লিগ প্রিফেকচারের মরু এলাকায় রয়েছে পপুলাস ইউফ্রেটিকা গাছের অরণ্য। মরু অঞ্চলের এই গাছকে বলা হয় জীবন্ত ফসিল। এরা প্রবল খরা সহ্য করতে পারে। এদের লবণ ও ক্ষার সহ্য করার ক্ষমতাও অনেক বেশি।
অক্টোবর মাসে এদের পাতা সোনালি রং ধরে। ২৯ হাজার ৩৩৩ হেক্টর জুড়ে এই বন দেখলে মনে হয় সোনার তৈরি অরণ্য। আলসা হরো বিশ্বের সবচেয়ে বড় পপুলাস ইউফ্রেটিকা গাছের তিন অরণ্যের একটি।
ইকো টুরিজমের একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে এই সোনালি অরণ্য। অক্টোবরে এই সোনালি অরণ্য দেখতে স্থানীয় ও বহিরাগত পর্যটকরা ভিড় জমান।
চীনা জাতীয় দিবসের ছুটিতে পর্যটকদের মেলা বসেছে এখানে। পাশাপাশি আয়োজিত হচ্ছে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। স্থানীয় সরকার শিগগিরি এখানে আয়োজন করতে যাচ্ছে ইকো টুরিজম ফেস্টিভ্যাল।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী