মানুষ ও প্রকৃতি ১৬
2024-09-29 17:18:12

যা রয়েছে এবারের পর্বে

১. ছিংহাই-সিচাং মালভূমির পরিবেশ উন্নত হয়েছে

২. চীনে বিদ্যুতের টাওয়ারেই বিপন্ন পাখির অভয়ারণ্য

 

নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা  এমনভাবেই  দেখতে চাই  ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

 সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।

ছিংহাই-সিচাং মালভূমির পরিবেশ উন্নত হয়েছে

চীনের ছিংহাই-সিচাং মালভূমিতে পরিবেশ সংরক্ষণ আিইন কার্যকর হওয়ার প্রথম বার্ষিকী পালিত হলো পহেলা সেপ্টেম্বর। গত এক বছরে পরিবেশ বাস্তুতন্ত্র, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এই অগ্রগতি সম্পর্কে জানবো প্রতিবেদন।

ছিংহাই সিচাং মালভূমি। প্রকৃতি এখানে উদার। এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণে রয়েছে বিশেষ আইন। পহেলা সেপ্টেম্বর এই বিশেষ সংরক্ষণ আইনের এক বছর পূর্তি হয়। এই একবছরে কতটা অগ্রগতি হয়েছে এই এলাকার পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের সে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে সম্প্রতি।

থ্রি রিভার সোর্স ন্যাশনাল পার্ক। এটি সংরক্ষিত প্রাকৃতিক এলাকা। এখানে ত্রিমাত্রিক মনিটরিং ব্যবস্থা রয়েছে। এখানকার কঠোর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও নিম্ন দক্ষতা পর্যক্ষেণে নতুভাবে প্রযুক্তিগত সেট আপ স্থাপন করা হয়েছে।

আগস্টের শেষ নাগাদ টিবেটান অ্যান্টিলোপদের সন্তান জন্মদান মৌসুম সমাপ্ত হয়েছে। নতুন প্রযুক্তির মনিটরিং সরঞ্জাম দিয়ে তাদের সংখ্যাবৃদ্ধির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

থ্রি রিভার সোর্স ন্যাশনাল পার্ক অ্যডমিনিস্ট্রেশনের ইকোলজিকাল মনিটরিং ইনফরমেশন সেন্টারের একজন কর্মী ওয়াং ইয়ুয়ে,। তিনি বলেন, ‘উবেই ব্রিজ মনিটরিং পয়েন্ট থেকে পাওয়া ফুটেজে দেখা গেছে একশর বেশি টিবেটান অ্যান্টিলোপরা পরিযায়ন করছে।’

মনিটরিং সিস্টেমটিতে  এখন ১ লাখ ৯০ হাজার ৭০০  বর্গকিলোমিটার জুড়ে এক হাজারের  বেশি মনিটরিং সাইট রয়েছে, যা সাধারণ এলাকার পরিবেশগত ধরন, প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপ এবং বন্যপ্রাণী সম্পর্কে রিয়েল-টাইম ডেটা প্রদান করে।

আগের পদ্ধতির বদলে এখনস সিনিং সিটির কম্পিউটিং সেন্টারে ডেটা ক্রমাগত পাঠানো হয়। আগের পদ্ধতিতে কর্মীদের ম্যানুয়ালি ডেটা সংগ্রহ করতে হত।

ইকোলজিকাল মনিটরিং ইনফরমেশন সেন্টারের পরিচালক চিন তাইইং জানান, পার্ক পরিদর্শন, ডেটা যাচাইকরণ এবং জমা দেওয়ার কাজগুলো সম্পূর্ণ করতে আগে চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ সময় লাগত। এখন, তারা ম্যাক্রো-রিমোট সেন্সিংয়ের মাধ্যমে ডেটা সংগ্রহ করতে পারেন, জমা দিতে পারেন এবং এক সপ্তাহের মধ্যে বিগ ডেটা সেন্টারে বিশ্লেষণ করতে পারেন।

ছিংহাই-সিচাং মালভূমিতে মাত্র কয়েক মাস আবহাওয়া মনোরম থাকে। বেশিরভাগ সময়ে আবহাওয়া অত্যন্ত চরম আকার ধারণ করে। এই কঠিন পরিবেশে এই ধরনের উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও পরিবেশ সংরক্ষণ কাজের ফলে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় সাফল্য আগের চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে।

এই মালভূমিতে এখন পরিবেশ রক্ষায় কাজ চলছে। কাজের ভালো ফলাফলও পাওয়া গেছে। রক্ষা পাচ্ছে জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল

 

চীনে বিদ্যুতের টাওয়ারেই বিপন্ন পাখির অভয়ারণ্য

চীনের  প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর আনাচে কানাচে অনেক আগেই পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। এতে করে শুরুর দিকে ছায়াঘেরা নির্মল প্রকৃতিতে বাস করা কিছু বিপন্ন প্রজাতির পাখি পড়েছিল  সমস্যায়। কেউ চলে গিয়েছিল এলাকা ছেড়ে, আবার কেউ, বিদ্যুতের খুঁটিতে বাসা তৈরি করা শুরু করেছিল। উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে পাখিরা যাতে আর সমস্যায় না পড়ে তা নিশ্চিত করতে অভিনব সমাধান নিয়ে এসেছেন চীনের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী ও পাখি বিশেষজ্ঞরা। বিস্তারিত প্রতিবেদনে।

উত্তর-পশ্চিম চীনের ছিংহাই প্রদেশের শানচিয়াংইউয়ান হলো চীনের অন্যতম একটি প্রাকৃতিক সংরক্ষিত বনাঞ্চল। নির্মল ও বুনো পরিবেশের কারণে এটি প্রায় ৩০০ বিরল প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। এর মধ্যে ২০টিরও বেশি হলো শিকারি পাখি। এ তালিকায় আছে গোল্ডেন ঈগল, বাজপাখি এবং আপল্যান্ড বুজার্ড।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দিতে এই শানচিয়াংইউয়ানের ভেতর দিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছিল বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন। যার জন্য দরকার হয়েছিল এখানে সুউচ্চ বেশ কিছু টাওয়ার নির্মাণের। আর শিকারি পাখিরাও উঁচু স্থান পেয়ে সেই টাওয়ারগুলোতে তৈরি করতে শুরু করে তাদের বাসা।

এতে প্রথম দিকে বেশ সমস্যাতেই পড়তে হয়েছিল চীনের স্টেট গ্রিডের অধীনে থাকা ইউশু পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানিকে। পাখিদের তাড়াতে তারা প্রথমে ব্যবহার করতে শুরু করেন বিশেষ ধরনের আল্ট্রাসনিক যন্ত্র বা বার্ড রিপেলার। কিন্তু তাতে অবশ্য কাজ হয়নি।

স্টেট গ্রিড ইউশু পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানির সাবেক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মকর্তা সু ওয়েনছি জানান, , ‘রিপেলারগুলো প্রথম দুই বা তিন মাস কার্যকর ছিল। কয়েক মাস পরে পাখিরা এগুলোয় অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং খাপ খাইয়ে নেয়। আবার এই এলাকায় শক্তিশালী অতিবেগুনী রশ্মির উপস্থিতির কারণে, রিপেলারগুলো ভঙ্গুর হয়ে পড়ে এবং পাখিরা সহজে সেগুলোকে ফেলে দিতে পারছে।’

এরপরই সমাধান হিসেবে সঞ্চালন লাইনের কর্মীরা নিয়ে আসে অভিনব এক সমাধান। পাখিদের জন্য খুঁটির আগায় তৈরি করে দেওয়া হয় নকল বাসা। সেই বাসায় তারা বসিয়ে দিলেন একখানা ছাউনি। কিন্তু এখানেও বিপত্তি। নকল বাসাগুলোকেও এড়িয়ে চলতে শুরু করে পাখিরা। তবে পরে পাখিদের আচার আচরণ জেনে নিয়ে বাসার কাঠামো বদলানো হয়।

বিদ্যুতের কর্মীরা প্রায় ২০০টি নকল বাসার কাঠামো বদলে দেয়। সেগুলোকে এমন স্থানে রাখা হয় যেখানে শিকারি পাখিদের অবাধ আনাগোনা রয়েছে। এতে করে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের বিপজ্জনক যে পয়েন্টগুলো রয়েছে, সেদিকে কমে আসে পাখির সংখ্যা, একই সঙ্গে কমে আসে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের হার।  শানচিয়াংইউয়ান রিজার্ভের আকাশে এখন নিরাপদেই উড়ে বেড়াতে দেখা যায় বুনো শিকারি পাখিগুলোকে।

প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

সুপ্রিয় শ্রোতা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। 

আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। আর  নতুন বৃক্ষ রোপণ করি। আমাদের মায়ের মতো পরিবেশকে রক্ষা করি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ