চীনের চেচিয়াং প্রদেশের রাজধানী হাংচৌতে শেষ হয়েছে তৃতীয় বিশ্ব ডিজিটাল-বাণিজ্য মেলা। শহরের কনভেনশন প্রদর্শনী কেন্দ্রে ২৫ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে পাঁচদিনব্যাপী মেলাটি চলে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
এবারের ডিজিটাল বাণিজ্য-মেলার মূল প্রতিপাদ্য ছিল: ‘ডিজিটাল-বাণিজ্য, ব্যবসার সুযোগ, ও বিশ্বের সাথে সংযোগ’।
কাজাখস্তান ও থাইল্যান্ড ছিল এবারের মেলার সম্মানিত অতিথি দেশ এবং চীনের কুয়াংতুং প্রদেশ সম্মানিত অতিথি-প্রদেশ। ৩২টি দেশ ও অঞ্চল থেকে শীর্ষস্থানীয় ৩০০টির বেশি আন্তার্জাতিক কোম্পানি এতে অংশগ্রহণ করে।
এবারের মেলায় যে ‘আভান্ত-গার্ড প্রযুক্তি’ বা নজরকাড়া উদ্ভাবনী প্রযুক্তির প্রদর্শন হয়েছে তা চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনাকেই তুলে ধরে।
পাঁচ দিনের, প্রদর্শনীতে ৪৪৬টি নতুন পণ্য এবং প্রযুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে, যেখানে রোবটকে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায়। এর মধ্যে বোতলের ছিপি খোলা, বর্জ্য-বাছাই থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই পরিচালিত ডিজিটাল মানব বিতর্ক প্রতিযোগিতাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষুদ্রশিল্প উন্নয়ন সংস্থার উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি বিষয়ক পরামর্শক গালাদি মেলিয়া থেমা অভিভূত মেলার অভিনব সব প্রদর্শনী দেখে। প্রদর্শনীতে মেডিকেল এআই যেমন, রোবোটিক অস্ত্রোপচার এবং স্ক্রিনিং ক্লিনিক তাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও যোগ করেন, “নার্সরা রোগীদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী রোগ ব্যবস্থাপনার স্ক্রীনিং পণ্য ব্যবহার করতে পারে, যা বাড়িতে এবং ক্লিনিক উভয়ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা যেতে পারে। এটি খরচ কমায় এবং দূরবর্তী রোগীকে পর্যবেক্ষণকে রাখা যায়। এ প্রযুক্তির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
বিগ ডেটা, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং ব্লকচেইনের মতো ডিজিটাল প্রযুক্তিগুলি এক্সপোতে কেন্দ্রে অবস্থান করেছে। চীন কীভাবে তার বৈদেশিক বাণিজ্যকে চালিত করতে এই উদ্ভাবনগুলোকে কাজে লাগাচ্ছে তা বোঝার একটা সহজ উপায় এ মেলা।
চীনের এআই এবং স্পিচ টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রিতে অগ্রগামী আইফ্লাইটেক কো. লিমিটেডের বুথে বেশ কিছু আফ্রিকান দর্শক একটি অত্যাধুনিক বহুভাষিক এআই-চালিত অনুবাদ স্ক্রিনের মাধ্যমে কর্মীদের সাথে রিয়েল-টাইম কথোপকথন করেন। হৈচৈপূর্ণ পরিবেশ সত্ত্বেও, উন্নত ভয়েস শনাক্তকরণ প্রযুক্তিতে সজ্জিত স্ক্রিন,সঠিকভাবে ক্যাপচার করে এবং মানুষের কণ্ঠে সাড়া দেয়।
আইফ্লাইটেকের চেয়ারম্যান লিউ ছিংফেং বলেন, “আগামী বছরগুলোতে এ খাতে বিদেশী ব্যবসা আমাদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির ইঞ্জিনে পরিণত হতে চলেছে৷ আমাদের আকাঙ্খা হল এটি ভবিষ্যতে আমাদের ব্যবসায়িক অংশের এক-তৃতীয়াংশ গঠন করবে৷
চীনা সাংস্কৃতিক রপ্তানিও প্রদর্শনীতে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ডিজিটাল এন্টারটেইনমেন্ট জোনে সং রাজবংশের (৯৬০-১২৭৯) একজন খ্যাতিমান কবি সু তংপোর ডিজিটাল উদ্ভাবনী প্রদর্শনী যেমন, ঐতিহ্যবাহী চীনা সংগীতের একটি ভার্চুয়াল যাদুঘর, পাশাপাশি ওল্ড সামার প্যালেসের চারটি প্রাণীর ব্রোঞ্জের মাথার থ্রিডি প্রদর্শনী দর্শনার্থীদেরর চীনা সংস্কৃতির সমৃদ্ধির একটি আকর্ষণীয় আভাস দিয়েছে।
কাজাখস্তানের ডিজিটাল উন্নয়ন, উদ্ভাবন এবং মহাকাশ শিল্পের মন্ত্রী জাসলান মাদিয়েভ, মেলা ও চীন প্রসঙ্গে বলেন, “চীনকে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী নেতা হিসাবে গণ্য করা হয়। ডিজিটাল বাণিজ্যে চীনের অগ্রগতি কেবল সহযোগিতার নতুন পথ তৈরি করছে তাই নয়, বরং বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়নকে উত্সাহিত করে এবং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য অবকাঠামো উন্নত করে।
তিনি আরো যোগ করেন, “চীনা প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনগুলো সরবরাহ চেইনকে উন্নত করছে, তাদের দ্রুত এবং আরও দক্ষ করে তুলছে, পাশাপাশি পণ্য ও পরিষেবাগুলোতে অ্যাক্সেসের উন্নতি করছে।”
মেলা চলাকালে প্রকাশিত গ্লোবাল ডিজিটাল ট্রেড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০২৪ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল বাণিজ্য প্রায় ৭.১৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে, যা ২০২১ সালের ৬.০২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৮.৮ শতাংশ বেশি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্সের আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ গত বছর ২.৩৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫.৩ শতাংশ বেশি।
মাহমুদ হাশিম
সিএজি বাংলা, বেইজিং।