সিউনজির মতে, রাজনীতির উদ্দেশ্য হল, সুশাসনের মাধ্যমে জনগণের জন্য একটি সুখী ও সুন্দর জীবন তৈরি করা। শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি বা একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থার দ্বারা সুশাসন অর্জন করা যায় না। শুধুমাত্র দেশের শাসন ব্যবস্থায় মেধা ও মেধাসম্পন্ন গুণী মানুষদের নিয়োগ দিয়ে আমরা সুশাসন অর্জনের জন্য সর্বাধিক পরিমাণে প্রজ্ঞা ও শক্তি সংগ্রহ করতে পারি। চূড়ান্ত বিশ্লেষণে, গুণী ব্যক্তিরা শাসকদের সেবা করেন না, বরং জনগণের সেবা করেন। প্রতিভা নির্বাচন এবং নিয়োগ জনগণকে ভালোবাসার প্রতীক।
‘শুও ইউয়ান’বইতে এমনই একটি গল্প লিপিবদ্ধ হয়েছে। ছি-এর রাজা সিউয়ান শিকার করতে দুশানে এসেছিলেন। লোকেরা এ খবর শুনে সবাই তাকে দেখতে এসেছিল। রাজা সিউয়ান এতো খুশি হয়েছিলেন যে তিনি জনগণকে কর প্রদান থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। লোকেরা খুশি হয়ে তাকে ধন্যবাদ জানাল। কিন্তু লুই ছিউ নামের একজন বৃদ্ধ তাকে ধন্যবাদ জানাননি। রাজা সিউয়ান যখন এটি জানলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, “হয়তো আমার পুরস্কার যথেষ্ট নয়। তাহলে আমার নির্দেশ ঘোষণা করো যে স্থানীয় লোকদের সরকারি শ্রম করতে হবে না।” লোকেরা এ কথা শুনে আরো খুশি হয়েছিলেন এবং রাজাকে তার দয়ার জন্য ধন্যবাদ জানালেন। কিন্তু লুই ছিউ এবারও রাজার প্রশংসা থেকে বিরত রইলেন। রাজা সিউয়ান তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন: “আপনি কি মনে করেন যে আমি কিছু ভুল করেছি, তাই আপনি দ্বিতীয়বারও ধন্যবাদ জানাননি।” লু ছিউ বললেন: “আমি শুনেছি যে, রাজা এখানে শিকার করতে এসেছেন, তাই আমি এখানে আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি। আমি আপনার কাছ থেকে দীর্ঘায়ু পাওয়া এবং ধনী হওয়ার আশা করি, এবং রাজার কাছ থেকে সম্মান পাওয়ার আশা রাখি।: রাজা সিউয়ান এই কথা শুনে মনে করেন তিনি লোভী মানুষ, তাই তিনি তাকে বললেন: “মানুষের জীবন ও মৃত্যু ভাগ্যে নির্ধারিত হয়, এবং ঈশ্বর তাদের ভাগ্য অনুযায়ী জীবনের আয়ু দেবে। আমি আপনাকে দীর্ঘজীবী করাতে পারি না। যদিও দেশের গুদাম ভরা, তা কিন্তু জরুরি অবস্থার জন্য রক্ষিত হয়। তা আপনাকে ধনী করাতে পারে না। দেশে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের কোনও পদ খালি নেই, এবং জুনিয়র কর্মকর্তার পদ আপনাকে মহৎ বানাতে পারে না।” লু ছিউ বলেন: “আসলে, আমি আশা করি আপনি কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার সময় গুণী ব্যক্তিদের নির্বাচন করবেন, যাতে দেশের আইন ন্যায্য এবং যুক্তিসঙ্গত হয়। তাহলে আমি সুখী এবং দীর্ঘায়ু হতে পারবো। সরকার সঠিক সময়ে জনগণকে ত্রাণ দিতে পারে এবং জনগণকে যে কোন সময় এবং যে কোন কারণে জনগণকে হয়রানি না করে, তা হলে আমি ধনী হতে পারি। আমি আশা করি আপনি শিক্ষার প্রসার এবং ধার্মিকতার প্রবণতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আদেশ দেবেন, যাতে একজন বৃদ্ধ হিসাবে আমি কিছুটা মর্যাদা পেতে পারি।” অবশেষে লুই ছিউ আবার বলেন: “কর না দিলে এবং সরকারের শ্রম না করলে দেশের গুদামগুলো খালি হয়ে যাবে এবং দেশের শ্রম করার মতো কেউ থাকবে না। তা আমার আশা ছিল না।” এই কথা শুনে রাজা সিউয়ান গভীরভাবে সম্মত হন। তারপর থেকে, মেধাবী লোকদের নিয়োগের উপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে এবং তারা দেশ পরিচালনায় শিথিল হওয়ার সাহস করেননি।
লুই ছিউ-এর কথাগুলো আমাদের উপলব্ধি করায় যে রাজনৈতিক জীবনের জন্য, প্রতিভা হল সুশাসনের ভিত্তি। কেন এই কথা বলা হচ্ছে? ‘ছিউনশু জিইয়া·ফু জি’ বইয়ে স্পষ্ট করা হয়েছে যে মহৎ সামাজিক শাসন অর্জনের জন্য দুটি শর্ত পূরণ করতে হবে: ‘সামাজিক সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য জ্ঞানী নেতাদের অবশ্যই ভাল শিষ্টাচার ব্যবস্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে শুধুমাত্র এটি প্রয়োজন নয়। কেবল পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থার মাধ্যমেই আমরা সামাজিক সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পারি না। শাসন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ হলেও, আপনি যদি প্রতিভাবান ব্যক্তিদের নির্বাচন এবং নিয়োগ করতে না পারেন, তবে সুশাসনের ফলাফল অর্জন করা কঠিন হবে। অগণিত অভিজ্ঞতা আমাদের শিখিয়েছে যে, মানুষ হল রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বেশি পরিবর্তনশীল অংশ। যদি রাষ্ট্র শাসনে গুণী মানুষ নিয়োগ করা হয় তাহলে ব্যবস্থা সম্পূর্ণ না হলেও সাফল্য অর্জন করা যায়। কিন্তু যদি গুণী মানুষকে নিয়োগ না করে ব্যবস্থা যত সম্পূর্ণ হলেও সুশাসন অর্জন করা খুব কঠিন। প্রাচীনকালে, সম্রাট ইয়াও, শুনকে নিয়োগ করেন। শুন রাজা সিংহাসনে থাকাকালে উ ছেন, পা ইউয়ান, পা খাই প্রমুখ জ্ঞানী ব্যক্তিদের নিয়োগ করেন। থাং রাজা লুই শাং লাই’কে নিয়োগ করে সহযোগিতা পেয়েছেন। ঐতিহাসিক নথি অনুসারে, চৌ কং গুণী প্রতিভাকে নিয়োগ করেছিলেন জীবনের সব ক্ষেত্রে। এটি সঠিকভাবে গুণী মন্ত্রীদের সহায়তার কারণে যে এই সম্রাটরা উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পুণ্যকে সম্মান করার এবং গুণীদের সম্মান করার সংস্কৃতি তৈরি করতে পারেন এবং গুণী মন্ত্রীদের মাধ্যমে মহান সাফল্য অর্জন করতে পারেন এবং দেশের দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারেন। (স্বর্ণা/হাশিম/লিলি)