“বিশ্বজুড়ে মানুষ শান্তি, মর্যাদাপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ চায়। তারা জলবায়ু সংকট মোকাবেলা, বৈষম্য নিরসন এবং নতুন ঝুঁকি মোকাবেলা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।” সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস জাতিসংঘের ভবিষ্যতের জন্য শীর্ষ সম্মেলনে এ আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আশা করেন যে, সমস্ত দেশ ঐক্যকে শক্তিশালী করবে এবং ক্রমবর্ধমান গুরুতর সংকট ও চ্যালেঞ্জ যৌথভাবে মোকাবিলা করবে।
এই শীর্ষ সম্মেলনটি এই বছরে জাতিসংঘের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকের অন্যতম। কেন এর থিম হলো ‘ভবিষ্যৎ’? এর প্রধান কারণ হল বিশ্ব অশান্তি তীব্রতর হচ্ছে, এবং মানবজাতি অভূতপূর্ব ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। রুশ-ইউক্রেন ও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের ক্রমশ অবনতি হচ্ছে, এবং লেবানন-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব নতুন করে তীব্র আকার ধারন করছে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা, শরণার্থী সংকট এবং নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগের মতো চ্যালেঞ্জগুলো একের পর এক উদ্ভূত হচ্ছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে বিশ্ব-মানবতার কী ধরনের ভবিষ্যতের প্রয়োজন? কীভাবে একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তোলা যায়? সারা বিশ্ব ভাবছে, প্রশ্ন করছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে চীন ভবিষ্যতের জন্য সম্মেলনকে দৃঢ় সমর্থন দিয়েছে। এ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বিশেষ প্রতিনিধি এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই শান্তি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি, ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার এবং একটি ভালো ভবিষ্যত গড়ে তোলার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে চার দফা উদ্যোগ পেশ করেছেন, জোর দিয়ে বলেছেন যে, সব পক্ষকে জাতিসংঘ কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা রক্ষা করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশের বৈধ অধিকার রক্ষা করতে হবে। এই প্রস্তাবগুলো কেবল ভবিষ্যৎ চুক্তির বাস্তবায়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নিশ্চয়তা নয়, তবে চুক্তির অনুসৃত দৃষ্টি এবং লক্ষ্যও, যা সমস্ত পক্ষের মধ্যে ব্যাপক অনুরণন জাগিয়েছে।
গত এক দশকে, মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার চীনের ধারণা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং জাতিসংঘের নথিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। চীন বৈশ্বিক পর্যায়ে সাইবারস্পেস, পারমাণবিক নিরাপত্তা, মহাসাগর এবং স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রামূলক প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং তিনটি বড় বৈশ্বিক উদ্যোগ চালু করেছে। তাদের সূচনা বিন্দু হল মানবজাতির জন্য নতুন সমাধান প্রদান করা যাতে অভিন্ন স্বার্থের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এবং ব্যাপক ঐক্যমত গড়ে তোলার মাধ্যমে যৌথভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা যায়। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস মন্তব্য করেছেন, “চীন ইতোমধ্যে বহুপাক্ষিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে উঠেছে, এবং আমাদের বহুপাক্ষিকতা অনুশীলনের উদ্দেশ্য হল মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলা।”
আন্তর্জাতিক মঞ্চে, শক্তিশালী ও প্রভাবশালী প্রধান দেশগুলোর কাঁধে আরও দায়িত্ব নেওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে, তাদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য, কিছু পশ্চিমা দেশ সংঘর্ষের সৃষ্টি করে, ‘সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ’ প্রচার করে, ক্রমাগত জাতিসংঘ কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে, আন্তর্জাতিক আইন মেনে না চলে এবং এমনকি যুদ্ধ-পরবর্তী শৃঙ্খলাকে বিপর্যস্ত করার চেষ্টা করে, পরিস্থিতিকে আরও অবনতি ঘটায়। এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ যে, অনেক দেশ ভবিষ্যতের জন্য শীর্ষ সম্মেলনে বহুপাক্ষিকতাকে পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক সমাজ যদি ‘সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতাবাদ’ দিয়ে এসব আচরণকে সংযত করতে পারে, তাহলে বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন আরও নিশ্চিত হবে।
টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা এবং কাউকে পিছনে না রাখা বহুপাক্ষিকতার মূল লক্ষ্য। তবে, ভবিষ্যত চুক্তিটি বাধ্যতামূলক নয়। তাহলে, কীভাবে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে মানবাজাতির অভিন্ন কল্যাণের চিন্তায় উদ্বুদ্ধ এবং একে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করা যায়? চীনাদের মধ্যে একটা কথা প্রচলিত রয়েছে, “সড়কটি দীর্ঘ এবং পথে বাধা রয়েছে, কিন্তু চেষ্টা করলে যাত্রা সম্পন্ন করা যায়।” যদি সবপক্ষ চুক্তির চেতনা মেনে চলে, অভিন্ন কল্যাণের সমাজের চিন্তাভাবনায় সিদ্ধান্ত নেয়, বিভক্তিকে ঐক্যে প্রতিস্থাপন করে, তাহলে একটি আরো ভালো বিশ্ব শুধু স্বপ্ন নয়, সত্যিকার অর্থেই বাস্তবায়িত হবে।
(শুয়েই/হাশিম/সুবর্ণা)