‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
৮৮ তম পর্বে যা যা থাকছে:
১. তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের প্রচারে জাতিসংঘে আলোচনা
২. বেইজিং ফ্যাশন সপ্তাহে তরুণ ভোক্তা ভাবনা যেমন ছিলো
৩. সিচাংয়ের বাইমা সংস্কৃতিতে তরুণদের যুক্ত করার চেষ্টা
১. তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের প্রচারে জাতিসংঘে আলোচনা
রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ কীভাবে বাড়ানো যায়, তাদের নতুন নতুন সৃজনশীল ভাবনাক কীভাবে যোগ করা যায়, বিশ্বের শান্তি ও সুরক্ষায় তাদেরকে কীভাবে যুক্ত করা যায় এমন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে জাতিসংঘের সদর দফতরে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অধিবেশনের আগে এমন একটি আলোচনার আয়োজন করা হয়।
রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তরুণ এবং অন্যান্য প্রভাবশালী প্রতিনিধিরা জাতিসংঘের সদর দফতরে জড়ো হন। জাতিসংঘ অধিবেশন ২০২৪ এর আগে তারা এই সামিটে অংশগ্রহণ করেন।
জাতিসংঘে এবং তার বাইরে তরুণদের অংশগ্রহণকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় এই ব্যাপারে কী ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া যায় এসব নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
এতে "টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার উপর বৈশ্বিক অগ্রগতি পর্যালোচনা, প্রতিফলন এবং পুনরায় পরিকল্পনা করার জন্য একটি প্রজন্মের একটি সুযোগ" হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এটি ভবিষ্যত প্রজন্মকে প্রভাবিত করে এমন বিষয়গুলোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
শীর্ষ সম্মেলনের জন্য বিশ্ব নেতাদের আগমন এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯ তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্কের আগে, ১ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি কূটনীতিক এবং কর্মী অ্যাকশন ডে-র জন্য জড়ো হন।
বিশ্ব নেতাদের এজেন্ডাগুলোর শীর্ষে যুব ইস্যুগুলো রাখার লক্ষ্যে যুব বিষয়ক সহকারী মহাসচিব ফেলিপ পলিয়ার উল্লেখ করেন এই ধরনের একটি আয়োজন ১০ বছর আগে অকল্পনীয় ছিলো। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্ব সর্বোচ্চ সংখ্যক সংঘাতের সাক্ষী হচ্ছে এবং এই দ্বন্দ্বগুলো সারা বিশ্বে তরুণদের মারাত্নকভাবে প্রভাবিত করছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, তরুণদের একটা বড় সমস্যা হলো তাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অভাব। বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি ৩০ বছরের কম বয়সী, কিন্তু ৩ শতাংশেরও কম সংসদ সদস্য সেই জনসংখ্যার বাসিন্দা।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
২. বেইজিং ফ্যাশন সপ্তাহে তরুণ ভোক্তা ভাবনা যেমন ছিলো
বসন্ত বা গ্রীষ্মকালীন বেইজিং ফ্যাশন সপ্তাহ ২০২৫ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। এই ফ্যাশন সপ্তাহ নতুন ভোক্তার চাহিদাকে স্বাগত জানায় এবং বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে উদ্ভাবনী ভোক্তা তৈরির অভিজ্ঞতা দেয়।
মূলত তরুণ প্রজন্মের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে ফ্যাশনে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করা হয়েছে এবং সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে নতুন কিছু দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
এই বছরের আয়োজনে ২৯৭টি ব্র্যান্ডের ৭৪টি অনলাইন এবং অফলাইন ইভেন্ট ছিলো। ৩০ শতাংশেরও বেশি ব্র্যান্ডের নেতৃত্বে ছিলেন সুপ্রতিষ্ঠিত ডিজাইনার এবং শিল্পের প্রধানরা।
একটি প্রধান হাইলাইট ছিলো "চায়না-চিক ক্রিয়েটিভ শো", যা স্বদেশী ব্র্যান্ডের প্রচারের উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
এছাড়াও, এবারের আয়োজনে একটি ডিজিটাল ফ্যাশন সেগমেন্ট ছিলো। ফ্যাশন জগতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রদর্শন করে এই পর্ব।
ফ্যাশন সপ্তাহে "এআই-চালিত উদ্ভাবন ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দেয়" থিমের অধীনে চীনের ফ্যাশন অর্থনীতির একটি ফোরামও অনুষ্ঠিত হয়।
ফোরামটি শিল্পের নেতৃবৃন্দ, পণ্ডিত, বিশিষ্ট উদ্যোক্তা এবং ফ্যাশন অগ্রগামীদের একত্রিত করেছে।
নতুন মানের উত্পাদনশীল শক্তির মাধ্যমে চালিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে চীনা ফ্যাশন ব্র্যান্ড এবং কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন সুযোগ উন্মোচন করছে, তাদের ভবিষ্যত উন্নয়নে সহায়তা করছে এ ব্যাপারে জানান বেইজিং ফ্যাশন সপ্তাহের আয়োজক কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর চেয়ারম্যান কু ওয়েইতা।
"এই বছর, আমরা তরুণ ডিজাইনারদের সমর্থন করার জন্য একটি প্রোগ্রাম চালু করি। নতুন প্রজন্মকেন্দ্রিক সম্ভাবনাময় প্রতিভা গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য।’
উত্তর-পশ্চিম চীনের ছিংহাই প্রদেশের শহর ইউশু। এই স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক সম্পদকে বাণিজ্যিক সাফল্যে পরিণত করার চেষ্টাও ইভেন্টে লক্ষ্য করা গেছে। বেইজিং ফ্যাশন উইক, ২০১৬ সালে প্রথম চালু হয়।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
৩. সিচাংয়ের বাইমা সংস্কৃতিতে তরুণদের যুক্ত করার চেষ্টা
সিচাং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের টিবেটানদের মধ্যে বাইমারা বেশ প্রাচীন একটি জাতিগোষ্ঠী। নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষায় কাজ করছেন এই বাইমারা। এদের তরুণ প্রজন্ম অনেকটা শহুরে জীবনে ঝুঁকে পড়ায় স্থানীয়রাই তাদের সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরেছেন দৃঢ় প্রয়াসে। তরুণদেরকেও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে সচেষ্ট তারা।
চীনের সিচাং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রাচীন জাতিগোষ্ঠী বাইমা। টিবেটান জাতিগোষ্ঠীর একটি শাখা তারা। বিশেষ কিছু কারুশিল্প ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত এই জাতিগোষ্ঠী।
বাইমারা অতীতে পশুপালন, শিকার ও শস্য চাষ করে জীবন চালাতো। কয়েক শতাব্দী ধরে, স্থানীয়দের মধ্যে শুরু হয় নানা সাংস্কৃতিক চর্চা। দিনে দিনে তারা বেঁচে থাকার অনুষঙ্গ হিসেবে বেছে নেয় নাচ-গান ও নানা লোকশিল্পকে। পরে ধীরে ধীরে বাইমাদের সংস্কৃতি হয়ে ওঠে আরও শক্তিশালী।
তবে প্রাচীন লোকসংগীতের কথা, সুর এবং গাওয়ার কৌশলগুলোকে গভীরভাবে অনুধাবন করবে, এমন তরুণের সংখ্যা কমছে দিন দিন। তাই স্থানীয়দের কাছেও মূল সংস্কৃতির সংরক্ষণ ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তারা প্রাচীন সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে তরুণদের সম্পৃকতা বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
‘আমাদের বয়স ৬০ পেরিয়ে গেছে। আমরা যদি আমাদের বাইমা সংস্কৃতিকে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয় না করি, তবে তা বিলীন হয়ে যাবে। আমাদের সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী হিসেবে, আমি তরুণদের এ নিয়ে আগ্রহী করে তোলার কাজ করছি।’
ঐতিহ্যবাহী পোশাকও বাইমা সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। হাজার বছর ধরে পোশাকের এই কারুশিল্প বিকশিত হয়েছে তাদের মাঝে।
স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি বেশ কিছু সংখ্যক তরুণ তাদের পৈতৃক নিবাস ছেড়ে ঝুঁকছে শহুরে জীবনযাপনের দিকে। এতে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করা কিছুটা চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে স্থানীয়রা তাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সংরক্ষণের দৃঢ় প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন। এরই অংশ হিসেবে প্রশাসনকে বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার আহ্বানও জানান তারা। স্থানীয় তরুণ প্রজন্ম ছাড়াও বিশ্বব্যাপী বাইমা জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি পৌঁছে দিতে তারা নিজেরাও নিচ্ছেন নানা উদ্যোগ।
২০১৯ সালের শেষের দিকে সরকারি তথ্যানুসারে, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিছুয়ান প্রদেশের পিংউউ কাউন্টিতে ১ হাজার ৬২৫ বাইমার বাস ছিল।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদক : ফয়সল আবদুল্লাহ
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী