এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। চীনের বিস্ময়কর লালরঙা সৈকত
২। কম্বোডিয়ার অ্যাংকর অর্কিওলজিকাল পার্কে চীনা পর্যটকের ভিড়
৩। চীনে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ট্যুর
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৮৭ তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। চীনের বিস্ময়কর লালরঙা সৈকত
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা বিস্ময়। তেমনই এক অত্যাশ্চর্য স্থান হলো লাল সৈকত বা রেড বিচ। চীনের লিয়াওনিং প্রদেশের পাঞ্জিনে এই রেড বিচের অবস্থান। বেইজিং থেকে স্থানটির দূরত্ব ৬ ঘণ্টার। যদিও সৈকত যেমন বালুকাময় হয়, এই স্থান কিন্তু তেমন নয়।
অর্থাৎ এর নাম রেড বিচ হলেও সেখানে আপনি লাল বালু দেখতে পাবেন না কোথাও। আসলে সেখানে এমন এক উদ্ভিদ আছে যেটি লাল বর্ণের। যা জন্মে বিশ্বের বৃহত্তম এক জলাভূমিতে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে প্রকৃতি লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। আর এই সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হতেই বিশ্ববাসীরা ছুটে যান সেখানে।
চীনের এই অঞ্চল বিশ্বের বৃহত্তম জলাভূমিগুলোর মধ্যে একটি। তবে সব সময় এই জলাভূমিত কিন্তু লাল রঙের উপস্থিতি দেখবেন না। শুধু বছরের একটি সময়ই এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন পর্যটকরা। আর সেই সময়টি হলো শরৎকাল।
এ সময় টকটকে লাল রঙে পরিণত হয় বৃহত্তম এই জলাভূমি। অন্য সময় সবুজ উদ্ভিদই দেখা যায় জলাভূমিতে। তবে ঠিক কোন উদ্ভিদের কারণে এমন লাল বর্ণ ধারণ করে জলাভূমি? প্রকৃতিবিদদের মতে, সিপউইড প্রজাতির উদ্ভিদ শরৎকালে হঠাৎ তাদের রং বদলায়। এর কারণ হলো এই উদ্ভিদ উচ্চ মাত্রার লবণাক্ততা শোষণ করতে পারে।
এ জলাভূমির আশপাশের সমুদ্রের নোনা পানির কারণেই এক সময় সবুজ রঙের সিপউইড উদ্ভিদ লাল রঙে পরিণত হয়। বসন্তে সিপউইড সবুজ হয়েই জন্মায়, তারপর গ্রীষ্ম থেকে এটি ধীরে ধীরে রং পরিবর্তন করে। অবশেষে শরতে টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করে।
সেখানকার সৌন্দর্য দেখতে প্রতি শরতে প্রচুর পর্যটক ভিড় করেন। সিএনএনর তথ্য অনুযায়ী, দুই মিলিয়নেরও বেশি পর্যটক প্রতিবছর ভিড় করেন সেখানে। রেড বিচ ছাড়াও অঞ্চলটি ২৬০ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। এমনকি এই জলাভূমি ধান ও বাঁশের জন্যও বিখ্যাত।
এই রেড বিচের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখার সেরা সময় হলো অক্টোবর। আপনি যদি খুব তাড়াতাড়ি যান, তাহলে সিপউইড ততটা লাল হবে না আর বেশি দেরি করে গেলে এই উদ্ভিদগুলো মরে যেতে পারে।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া
২। কম্বোডিয়ার অ্যাংকর অর্কিওলজিকাল পার্কে চীনা পর্যটকের ভিড়
বিশ্বের সবচেয়ে বিস্ময়কর এবং রহস্যময় প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম কম্বোডিয়ার অ্যাংকর অর্কিওলজিকাল পার্ক। এই স্থানটি অসাধারণ সৌন্দর্য এবং ইতিহাসের জন্য ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছে। সম্প্রতি দর্শনীয় এ স্থানে বৃদ্ধি পেয়েছে চীনা পর্যটকদের সংখ্যা।
কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রীয় অ্যাংকর এন্টারপ্রাইজ এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, এ বছরের প্রথম দুই মাসে ১৬ হাজার ৭৪ জন চীনা পর্যটক ভ্রমণ করেছেন পার্কটিতে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪০ শতাংশ বেশি। দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের পর অ্যাংকরে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের পঞ্চম বৃহত্তম উৎস হয়ে উঠেছে চীন।
কম্বোডিয়ার উত্তর-পশ্চিম সিয়েম রিপ প্রদেশে অবস্থিত ৪০১ বর্গকিলোমিটারের অ্যাংকর অর্কিওলজিকাল পার্কটি ১৯৯২ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। এটি দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর একটি। ৯ম থেকে ১৩শ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত এ স্থানটিতে ৯১টি প্রাচীন মন্দির রয়েছে।
অর্কিওলজিকাল এ পার্কটিতে চলতি বছর ১৬৯টি দেশ ও অঞ্চল থেকে মোট ২ লাখ ৩৫ হাজার ৮৫০ বিদেশি পর্যটক প্রাচীন পার্কে ভ্রমণ করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৫১ জন বেশি।
দেশটির কর্মকর্তারা জানান, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয় কম্বোডিয়া-চীন জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বছর। দুই দেশের এমন উদ্যোগ বিশেষ করে অ্যাংকরে চীনা পর্যটকদের আনতে সহায়তা করেছে।
সম্প্রতি অ্যাংকর কমপ্লেক্সের এলিফ্যান্ট টেরেসে এক অনুষ্ঠানে কম্বোডিয়ার পর্যটন মন্ত্রী সোক সোকেন জানান, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন ২০২৪ কম্বোডিয়া-চীন জনগণের মধ্যে বিনিময় বছরটি আরও বেশি চীনা পর্যটক এবং বিনিয়োগকারীদের কম্বোডিয়ায় আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে নতুন চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
মন্ত্রণালয়ের সরাষ্ট্রসচিব এবং মুখপাত্র টপ সোফিয়া দেশটিতে আরও বেশি চীনা পর্যটক আসার ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী বিশেষ করে অ্যাংকরে চীনা পর্যটকদের উপস্থিতি দেশটির পর্যটন উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
একই সঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন চীনের অর্থায়নে নির্মানাধীন সিয়েম রিপ অ্যাংকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ শেষ হলে আরও বেশি আন্তর্জাতিক পর্যটক, বিশেষ করে চীনের পর্যটকরা দেশটিতে ভ্রমণে আগ্রহী হয়ে উঠেবেন।
প্রতিবেদন- শুভ আনোয়ার
সম্পাদনা- আফরিন মিম
৩। চীনে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ট্যুর
সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাত দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক মিডিয়া ট্যুর। দেশটির কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের নাননিং শহর এবং ছোংছিং মিউনিসিপ্যালটির বিভিন্ন জেলাগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়।
ইভেন্টটি যৌথভাবে আয়োজন করে কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং ছোংছিং মিউনিসিপ্যাল পার্টি কমিটির প্রচার বিভাগ। এই সফরের ফলে, পরিদর্শনকারী দলটি উচ্চমানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিল্প ও অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি এবং পরিবেশগত অর্জন সম্পর্কে জানতে পারে।
সাত দিনব্যাপী বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য, পরিদর্শনকারী দলের সদস্যরা আধুনিক উৎপাদন উদ্যোগ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জাদুঘর, বন্দর এবং বড় প্রকল্পগুলোর নির্মাণ স্থান, তথ্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক এবং আন্তর্জাতিক লজিস্টিক হাব, রেলওয়ে লজিস্টিক সেন্টার, স্থল-সমুদ্র করিডোরের আন্তর্জাতিক কনজাম্পশন সেন্টার, কৃষি শিল্পের স্থান এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কেন্দ্রসহ অন্যান্য স্থান পরিদর্শন করে।
বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওজ এবং থাইল্যান্ডসহ ১০টি দেশ ও অঞ্চলের ৫০ জন বিদেশি মূলধারার মিডিয়া সাংবাদিক, বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিত ব্যক্তি এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের একটি দল এই ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী