চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব
2024-09-23 18:34:04


৮৮তম পর্বে যা থাকছে:



১। স্পেস মেডিসিনে সফলতা পেলেন চীনের বিজ্ঞানীরা

২। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন অস্ত্র ব্যাকটেরিয়া

৩। আলঝেইমার্সের চিকিৎসায় আশা দেখাচ্ছে চীনে আবিষ্কৃত নতুন গুল্ম

 

স্পেস মেডিসিনে সফলতা পেলেন চীনের বিজ্ঞানীরা

স্পেস মেডিসিন ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ের সফলতা অর্জন করেছেন চীনের গবেষকরা। তাদের এমন উদ্ধাবন ভবিষ্যতে চন্দ্র অভিযান এবং অন্যান্য মহাকাশ অনুসন্ধান মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সম্প্রতি পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের হ্যাংচৌ শহরে আয়োজিত সেকেন্ড ফ্রন্টিয়ার ফোরাম অফ স্পেস মেডিসিনে এ তথ্য তুলে ধরেন তারা।

এ বিজ্ঞানীরা মহাকাশের অভিকর্ষহীন পরিবেশে মানবদেহের ওপর ওষুধের প্রভাব পরীক্ষা করছেন। সেখানে মানুষের জন্য ওষুধ কেমন কাজ করবে এ ধরনের বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি মহাকাশে মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য নতুন পদ্ধতি তৈরি করতেও সাহায্য করবে এ ধরনের গবেষণা।

চীনের মাববাহী মহাকাশ কর্মসূচির উপ-প্রধান ডিজাইনার ইয়াং লিওয়েই জানান, স্পেস মেডিসিনের প্রযুক্তিগত সহায়তা চীনের মহাকাশ স্টেশনের একটি অপরিহার্য অংশ। মহাকাশে যাওয়া মানুষের শরীরে অনেক পরিবর্তন হয়। স্পেস মেডিসিন ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে গবেষণা করে।

মহাকাশে মানুষের শরীরে অনেক পরিবর্তন হয়। স্পেস মেডিসিন এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে গবেষণা করে এবং মহাকাশচারীদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য উপযুক্ত ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করে।

 

দুই দিনের এই ফোরামে মহাকাশ চিকিৎসা ও গবেষণার নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন, মহাকাশচারীদের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং মহাকাশ যাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

মহাকাশচারীদের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং দীর্ঘস্থায়ী মহাকাশ অভিযানের স্বপ্ন পূরণ করতে স্পেস মেডিসিন গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহাকাশে মানুষের শরীরে অনেক পরিবর্তন হয়। স্পেস মেডিসিন এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে গবেষণা করা হয়। ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর ক্ষেত্রে এ গবেষণা এবং পাশাপাশি মহাকাশ উপযোগি নতুন ধরনের ওষুধ আবিষ্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা:  ফয়সল আবদুল্লাহ

 

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন অস্ত্র ব্যাকটেরিয়া

কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে চীনের বিজ্ঞানীরা একটা নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। এই পদ্ধতিতে ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করছেন তারা। অর্থাৎ উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে কাজে লাগিয়ে ক্যান্সারের কোষগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন এই বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।

উত্তর-পশ্চিম চীনের কানসু প্রদেশের ল্যানচৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের গবেষকরা এই অবাক করা তথ্য উন্মোচন করেছেন। তারা দেখতে পেয়েছেন, উত্তর-পশ্চিম চীনে প্রচলিত একটি ঐতিহ্যবাহী ভাজা খাবার রয়েছে, যা চিয়াংশুই নামে পরিচিত। এই খাবার রয়েছে বিশেষ ধরনের প্রোবায়োটিক। এই ব্যাকটেরিয়া কোলন ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে সাহায্য করতে পারে এবং এই কোষগুলোর বৃদ্ধিকেও বাধাগ্রস্ত করে।

 

গবেষণা দলের প্রধান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক লি সিয়াংখাই জানান, গবেষণায় দেখা গেছে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের পেটে এক ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া কম থাকে। এই ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে পারলে ক্যান্সারের চিকিৎসায় সাহায্য পাওয়া যেতে পারে। চিয়াংশুই খাবারে বিজ্ঞানীরা এমন এ ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া খুঁজে পেয়েছেন যা শুধু ক্যান্সারের কোষগুলোকে লক্ষ্য করে পেটের ভিতরে কাজ করে।

 

লি এবং তার দল এই ব্যাকটেরিয়া থেকে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত স্ট্রেন সফলভাবে পৃথক করেছেন। এরপর পরীক্ষাগারের ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে দেখেছেন। ফলাফলে দেখা যায় ল্যাক্টোব্যাসিলস জিআর-৩ মাউসে কোলন টিউমারের বৃদ্ধিকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে এবং ইতিবাচক থেরাপিউটিক প্রভাব দেখিয়েছে। স্ট্রেনটি শুধুমাত্র টিউমার হ্রাস করেনি, পাশাপাশি অন্ত্রের মাইক্রোবিয়াল মেটাবোলাইটের গঠন উন্নত করেছে।

চীনসহ বিশ্বব্যাপী অসংখ্য মানুষ কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিজ্ঞানীরা এখনও এই রোগ সম্পর্কে অনেক কিছু জানার চেষ্টা করছেন। এখন পর্যন্ত, বিজ্ঞানীরা মূলত এই উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, সেদিকেই বেশি গবেষণা করেছেন। কিন্তু এই ব্যাকটেরিয়াগুলোর অন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যেমন- শরীরকে বিভিন্ন ক্ষতি থেকে রক্ষা করা এবং অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়ানো, এদিকটা তেমন একটা গবেষণা হয়নি।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা:  ফয়সল আবদুল্লাহ

 

 

আলঝেইমার্সের চিকিৎসায় আশা দেখাচ্ছে চীনে আবিষ্কৃত নতুন গুল্ম

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিশুয়াংবান্না ট্রপিক্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেনে পাওয়া গেছে একটি নতুন ফার্মস প্রজাতি, যার বৈজ্ঞানিক নাম হুপেরজিয়া ক্রাসিফোলিয়া। চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের অধীনে থাকা বোটানিক্যাল গার্ডেনের গবেষকরা আবিষ্কার করলেন এই গুল্ম। তারা জানালেন, ওই গুল্মের নির্যাসেই রয়েছে মস্তিষ্কের দূরারোগ্য আলঝেইমার্স রোগের চিকিৎসায় কার্যকর একটি উপাদান।

চায়না একাডেমি অব সায়েন্সেস জানিয়েছে, হুপেরজিয়া গুল্মটির নতুন এ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল কুইচৌ প্রদেশে। বোটানিক্যাল গার্ডেনটির সহযোগী গবেষক লিউ হোংমেই বলেছেন, হুপারজিয়া গোত্রের গুল্মটির ২৫টি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে ক্রাসিফোলিয়া প্রজাতিতেই আছে আলঝেইমার্স ঠেকানোর ওষুধ।

লিউ জানান, নতুন আবিষ্কৃত হুপেরজিয়া ক্রাসিফোলিয়া একটি স্থলজ গুল্ম। সাধারণত নাতিশীতোষ্ণ ও শীতল জলবায়ুতে এটি বেড়ে গাছটি। অন্যান্য হুপারজিয়া প্রজাতির সঙ্গে এর বাহ্যিক কিছু মিল আছে। তবে এটির পাতার টেক্সচার কিছুটা ঘন এবং এর পত্রদণ্ডটি গোল ও ত্রিকোণাকার।

তিনি আরও জানালেন, এই ফার্মস উদ্ভিদটিতে আছে হুপারজাইন-এ নামের একটি উপাদান। আর ওটাই আলঝেইমার্সের চিকিৎসায় কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।

নতুন এ প্রজাতি এখন শুধু চীনের কুইচৌ, হুবেই, হুনান ও ছংছিংয়ে জন্মায়। সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠের এগারশ থেকে এক হাজার ৯০০ মিটার উচ্চতায় বিস্তৃত বড়পাতার বনের হিউমাস-সমৃদ্ধ মাটিতে এটি বাড়ে। তবে একটি স্থানে সংখ্যায় এরা খুব বেশি থাকে না বলেও জানান লিউ।

লিউ আরও বললেন, গুল্মটির ঔষধি মানের কথা বেশি প্রচার হলে হুপারজিয়া ক্র্যাসিফোলিয়ার পেছনে ছুটবে সবাই। তখন সংকটে পড়তে পারে গাছটি। তাই আপাতত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (IUCN) বিভাগ এবং মানদণ্ড অনুসারে এ গুল্মটিকে বিপন্ন হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। এ গবেষণার আরও বিস্তারিত প্রকাশ হয়েছে বৈজ্ঞানিক জার্নাল ফাইটোকিসের সাম্প্রতিক সংখ্যায়।

 

|| প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ

|| সম্পাদনা: শুভ আনোয়ার

 

নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

 

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার

 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী