সবেমাত্র শেষ হওয়া ২০২৪ চীন আন্তর্জাতিক পরিষেবা বাণিজ্য মেলায় প্রায় ১০টি লাতিন-আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দেশের বুথ পণ্যসম্ভার ও দর্শনার্থীতে পরিপূর্ণ ছিল। চমকপ্রদ ও বৈশিষ্ট্যময় হস্তশিল্পজাত পণ্য, সুস্বাদু খাবার, ত্বকের যত্ন নেয়ার পণ্য এবং সাংস্কৃতিক স্মারকবস্তু কিনতে শহরবাসী হুমড়ি খেয়ে পড়েন।
বার্ষিক পরিষেবা বাণিজ্য ক্ষেত্রের মেলাটি ৮০টির বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আকর্ষণ করেছে। লাতিন-আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশের রাজনৈতিক মহল ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা আমন্ত্রিত হয়ে, আর্থ-বাণিজ্য, পর্যটন ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনা অংশীদারদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে, হাতে-হাত রেখে চীন-লাতিন আমেরিকা পরিষেবা বাণিজ্য বাজারের সুপ্তশক্তি অন্বেষণ করতে আসেন।
বহু বছর ধরে মেক্সিকো পরিষেবা বাণিজ্য মেলায় অংশ নিচ্ছে। চলতি বছর দেশটির ৭টি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিষেবা লজিস্টিক, শিক্ষাদান, রপ্তানি ও অর্থসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের। চীন-মেক্সিকো চেম্বার অফ কমার্সের উপ-নির্বাহী চেয়ারম্যান ভিক্টর ক্যাডেনা ব্যাখ্যা করে বলেন, “পরিষেবা বাণিজ্য মেলাটি আমাদের জন্য একটি জানালা খুলে দেয়। এখানে আমরা আরো বেশি চীনা পরিষেবা সরবরাহকারী ব্যবসায়ী, সম্ভাব্য মক্কেল ও সরবরাহকারীর সাথে যোগাযোগ করতে পারি।” তিনি জানান, তাদের সংস্থা প্রতি বছর মেলায় অংশ নেয়। ক্রমশ এর মাত্রা বড় হচ্ছে এবং অংশগ্রহণকারী কোম্পানির সংখ্যাও বাড়ছে।
চীন ধারাবাহিকভাবে ক’বছর ধরে বিশ্বে, মেক্সিকোর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং লাতিন-আমেরিকায় মেক্সিকো চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। চীন-মেক্সিকো আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা শক্তিশালী প্রবণতায় বজায় রয়েছে। চীনের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে চীন-মেক্সিকো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬৩.৫৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২.৩ শতাংশ বেশি।
মেক্সিকোর বাণিজ্য মহলের জন্য চীনা বাজারের অনেক আকর্ষণীয় শক্তি আছে। ক্যাডেনা বললেন, চীনের বিরাট অর্থনৈতিক মাত্রা আছে। মেক্সিকো চীনে আরো বেশি পরিষেবা বিশেষ করে, লজিস্টিক, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থ, আইনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের পরিষেবা রপ্তানি করতে চায়।
মেক্সিকোর লজিস্টিক প্রতিষ্ঠান লুয়াল কার্গোর চীনা অঞ্চলের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ওমর ওলিজুয়েলা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মেক্সিকো-চীন বাণিজ্যের ধারাবাহিক বৃদ্ধি হয়েছে। সংখ্যা ও রকম থেকে চীন থেকে আমদানি করা পণ্য কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে বৈজ্ঞানিক পণ্য ও ঘরে ব্যবহার্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি অর্ডারের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। আরো বেশি চীনা প্রতিষ্ঠান মেক্সিকোয় কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী। ফলে, লজিস্টিক চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইকুয়েডর হলো চীনের সার্বিক কৌশলগত অংশীদার এবং ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ যৌথ নির্মাণ সহযোগী দেশ। চলতি বছরের ১ মে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর চীন-ইকুয়েডর অবাধ বাণিজ্য চুক্তি দু’দেশের বাণিজ্যিক বিনিয়োগের অবাধকরণ ও সুবিধাকরণ মান উন্নীত করে, অধিকতরভাবে বাণিজ্যিক বিনিয়োগের সহযোগিতামূলক সুপ্তশক্তি উদ্দীপ্ত করে, পরিষেবা বাণিজ্যে সহযোগিতা বেগবান করার জন্য নতুন সুযোগ নিয়ে আসে।
পরিষেবা বাণিজ্য মেলা চলাকালে চীনে নিযুক্ত ইকুয়েডরের রাষ্ট্রদূত ইতিবাচকভাবে চীনা টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিনিয়োগ নিয়ে পরামর্শ করার মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে দেশটির উন্নয়ন বেগবান করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। সম্প্রতি দূতাবাস চীনের উচ্চপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও চীনে ইকুয়েডর প্রতিভা বিনিময় সভার আয়োজন করে, চীনের অগ্রণী এআই প্রযুক্তি কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি উন্নয়ন, স্থাপনা নির্মাণ ও শিল্প-সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইকুয়েডর-চীন উদ্ভাবন সহযোগিতা শক্তি যোগানো নিয়ে আলোচনা করেছে।
পর্যটন হলো পরিষেবা বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। লাতিন-আমেরিকা পর্যটন সম্পদে সমৃদ্ধ এবং চীনা পর্যটকদের কাঙ্ক্ষিত পর্যটন স্থান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন পর্যটকদের ভ্রমনের কারণে লাতিন-আমেরিকার পর্যটন বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠছে। বহু সরাসরি লাতিন-আমেরিকা রুট পুনরুদ্ধার ও চালু হবার সঙ্গে সঙ্গে ব্রাজিল, মেক্সিকো, পেরু, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া ও কিউবাসহ বিভিন্ন দীর্ঘ কাঙ্ক্ষিত স্থান পুনরায় চীনা পর্যটকদের দৃষ্টিতে ফিরে আসে। চলতি গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে উল্লিখিত দেশগামী ভ্রমন অর্ডারের সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮০ শতাংশের বেশি হয়েছে।
“হন্ডুরাসের আবহাওয়া উষ্ণ, চীনা পর্যটকদের জন্য তার প্রাকৃতিক দৃশ্য খুবই বৈশিষ্ট্যময়। এছাড়া আমরা পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে বেশি এন্ট্রি সুবিধা দেই। ভিসার অনুমোদন খুবই দ্রুত।” মেলায় চীনে নিযুক্ত দেশটির দূতাবাসের অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ কাউন্সিলার উত্সাহব্যঞ্জকভাবে হন্ডুরাসে ভ্রমন করতে আমন্ত্রণ জানালেন।
চীন আরো উন্মুক্ত হবার সঙ্গে সঙ্গে হন্ডুরাসের আরো বেশি মানুষ মহাপ্রাচীর ও নিষিদ্ধ নগরের মতো চীনের প্রাচীনকালের বিস্ময় এবং বিশ্ব অগ্রণী আধুনিকায়ন উন্নয়ন ফলাফল পরিদর্শন করার প্রত্যাশা করেন তিনি। পর্যটন বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠা দু’দেশের বৈশিষ্ট্যময় পণ্যের বেশি বিক্রয় বেগবান করবে, পাশাপাশি দু’দেশের জনগণের জন্য আরো বেশি চাকরি ও ব্যবসা সুযোগ তৈরি করবে।
(প্রেমা/হাশিম)