যা রয়েছে এবারের পর্বে
১. স্পটেড সিল: বোহাই সাগরের আত্মা
২. আরহাই লেকের জীববৈচিত্র্য
নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।
সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।
স্পটেড সিল: বোহাই সাগরের আত্মা
একটি স্পটেড সিল। পানির মধ্যে আরামে সাঁতার কাটছে। ওকে রাখা হয়েছে তালিয়ান সিটির সায়েন্স রিসার্চ ইন্সটিটিউটের স্পটেড সিল উদ্ধার কেন্দ্রে। ভবিষ্যতে তাকে সাগরে অবমুক্ত করা হবে। কেমন প্রাণী এই স্পটেড সিল। কেন তাকে চীনে প্রথম শ্রেণীর সুরক্ষা দেয়া হয়? চলুন শোনা যাক এক প্রতিবেদনে।
প্যাকেজ: পরিস্কার পানি। মনের আনন্দে এখানে সাঁতার কাটছে একটি স্পটেড সিল । ও এখন রয়েছে উত্তর চীনের লিয়াওনিং ওশ্যান অ্যান্ড ফিশারিজ সায়েন্স রিসার্চ ইন্সটিটিউটের স্পটেড সিল উদ্ধার কেন্দ্রে। এখানে এক দল স্পটেড সিলের সঙ্গে বেশ আরামেই রয়েছে ও। তবে কিছুদিন পরেই ওকে মুক্ত করা হবে সুনীল সাগরের জলে। ও ফিরে যাবে ওর প্রাকৃতিক আবাসে।
এই কেন্দ্রের কর্মী ওয়াং চেন। ৩৪ বছর বয়সী এই গবেষণা কর্মী ২০১৮ সালে এই কেন্দ্রে যোগ দেন। তিনি বলেন যখন উদ্ধারপ্রাপ্ত সিলগুলো সুস্থ হয়ে হয়ে ওঠে ওদের সাগরে ছেড়ে দেয়া হয়। জলের প্রাণীকে জলে ফিরে যেতে দেখলে দারুণ ভালো লাগে তার।
স্পটেড সিলকে বলা হয় বোহাই সাগরের আত্মা। স্পটেড সিল স্তন্যপায়ী জলজ প্রাণী। পূর্ণবয়স্ক স্পটেড সিলের ওজন ৮২ থেকে ১০৯ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। দৈর্ঘ্যে ১৫০ থেকে ২১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। গোলমুখ। ছোট মাছ, সামুদ্রিক উদ্ভিদ এদের প্রধান খাদ্য। শীতকালে ওরা সাগরে বরফের টুকরোর উপর ভেসে বেড়ায়। গ্রীষ্মকালে খোলা মহাসাগরে অথবা তীরের কাছাকাছি জলে সাঁতার কাটে।
চীনে এরা প্রথম শ্রেণীর জাতীয় সুরক্ষার অধীনে রয়েছে। এটি একমাত্র পিননিপড মেরিন ম্যামাল যারা চীনের জলসীমায় জন্মগ্রহণ করে।
উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর ও এর সংলগ্ন সাগর উপসাগরে এদের বাস। এদেরকে প্রকৃত সিল বলা হয়। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও পরিবেশ ধ্বংস হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
স্পটেড সিল লাজুক প্রকৃতির প্রাণী। সহজে মানুষের কাছে আসে না। ওরা দল বেঁধে থাকে। কখনও কখনও অবশ্য একাও থাকতে পারে।
উত্তর চীনের সাগর উপসাগরে স্পটেড সিল দেখা যায়। লিয়াওনিং প্রদেশের উপকূলীয় শহর তালিয়ানে তাই তাদের জন্য গবেষণা ও উদ্ধারকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তালিয়ান ন্যাশনাল স্পটেড সিল নেচার রিজার্ভ স্থাপন করা হয়েছে। লিয়াওতোং উপসাগরের তটরেখা ধরে এই প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অঞ্চল।
চীন সরকারের পরিবেশ সুরক্ষামূলক কাজের ফলে বর্তমানে প্রকৃতিতে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
আরহাই লেকের জীববৈচিত্র্য
আরহাই হ্রদ, ইয়ুননান প্রদেশের বৃহত্তম মালভূমি হ্রদগুলোর মধ্যে একটি। স্ফটিক-স্বচ্ছ পানির সঙ্গে চারপাশের তুষার-ঢাকা পাহাড় এবং সবুজের প্রতিফলনে দুর্দান্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এ হ্রদ।
তালি শহরের স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে "মাদার লেক" নামে পরিচিত এটি। এখানে রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। বিশেষ করে একটি জলজ ফুল ওটেলিয়া আকুমিনাটা রয়েছে এখানে। এই জলজ উদ্ভিদের কারণে হ্রদটির পরিবেশ উন্নত করা সম্ভব হয়েছে। চলুন ঘুরে আসা যাক আরহাই হ্রদ থেকে।
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউননান প্রদেশের এরিউয়ান কাউন্টির একটি স্বচ্ছ পানির হ্রদ আরহাই। চারপাশে উঁচু পাহাড়ে ঘেরা অঞ্চলটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য লীলাভূমি। আরহাই হ্রদের পানিতে আকাশের নীলিমা আর পাহাড়ের ছায়া মিলে তৈরি হয় এক মোহনীয় দৃশ্য।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই হ্রদের পানির গুণমান ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আর এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে ওটেলিয়া আকুমিনাটা নামের একটি জলজ উদ্ভিদ। যার হাত ধরে এখানকার স্থানীয়দের জীবনমানে যুক্ত হয়েছে নতুন পালক।
এই আরহাই হ্রদ, ইয়ুননান প্রদেশের বৃহত্তম মালভূমির হ্রদগুলোর একটি। তালি শহরের স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এই হ্রদ ‘মাদার লেক’ নামে পরিচিত। কিছুটা কানের মতো আকারের হ্রদটি দেখতে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক ছুটে আসেন এখানে। একজন পর্যটক বলেন, ‘এখানকার পরিবেশ অনেক বেশি সুন্দর। হ্রদটি ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে, যার ফলে এখানকার পানির গুণমানও এখন চমৎকার।’
প্রাকৃতিক বিস্ময় হ্রদটি দুই দশক আগে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত ছিল। সুরক্ষার অভাবে এই হ্রদের পানির গুণমানও খারাপ হতে থাকে। যার ফলে এখানকার শৈবালগুলোও পড়ে বেশ বিপদে।
এরপর ইয়ুননান প্রশাসন এই হ্রদের পানির গুণমান উন্নত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পানির গুনমাণ, এ কারণে ওটেলিয়া আকুমিনাটা ফুলের আকারও বড় হচ্ছে।
খং হাইনান, শাংহাই চিয়াও থোং ইউনিভার্সিটির অধীনে রিভার্স অ্যান্ড লেক এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক। তিনি বলেন, “ওটেলিয়া আকুমিনাটা জলের গুণমান পরিমাপের জন্য একটি সূচক। যেখানে ওটেলিয়া আকুমিনাটা আছে, সেখানে পানির গুণমান অবশ্যই গ্রেড-৩ বা তার বেশি হতে হবে। এমনকি, ওটেলিয়া পানিকে আরও বিশুদ্ধ করতে পারে।"
মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ওটেলিয়া আকুমিনাটার ফুল ফোটে। এসময় এই স্থান হয়ে ওঠে পর্যটক এবং ফটোগ্রাফারদের আকর্ষণের জায়গা। উদ্ভিদটির ফুলগুলো কেবল দেখার জন্যই নয়, এর ঘ্রাণ ও অনন্য স্বাদ নিতেও আসেন পর্যটকরা।
গত ১০ বছরে আরহাই হ্রদের পানির গুণমান উন্নত করতে দুই হাজার হেক্টর জমিতে কৃত্রিম জলাভূমি স্থাপন করেছে স্থানীয় সরকার।
প্রতিবেদন: নাজমুল হক রাইয়ান
সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া
সুপ্রিয় শ্রোতা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।
আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। আর নতুন বৃক্ষ রোপণ করি। আমাদের মায়ের মতো পরিবেশকে রক্ষা করি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ