চীনের উত্পাদন খাতের উন্মুক্তকরণ এবং উন্নয়ন থেকে উদ্ভূত সুযোগের দিকে নজর রেখে বিশ্বের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো শুক্রবার পূর্ব চীনের আনহুই প্রদেশের রাজধানী হ্যফেইতে একটি সম্মেলনে জড়ো হন। সেখানে চলমান ২০২৪ সালের বিশ্ব উত্পাদন কনভেনশনের অংশ হিসেবে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য ছিল, কীভাবে উৎপাদন খাতে চীনের অগ্রগতি, বর্ধিত বৈশ্বিক সহযোগিতা এবং বিনিয়োগে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য দরজা খুলে দিচ্ছে। বিশ্ব উৎপাদন কনভেনশনের গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টটিতে ৯২টি ফরচুন ৫০০ এবং বহুজাতিক কোম্পানির প্রতিনিধিসহ ১৯টি দেশ ও অঞ্চলের ১৭৮ জন রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতা অংশ নেন।
সম্মেলনে হানিওয়েল, চায়নার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ইউ বলেন, “প্রথাগত উত্পাদনের সমন্বিত ডিজিটাল এবং সবুজ রূপান্তর নতুন মানের উত্পাদন শক্তির বিকাশের জন্য একটি অন্তর্নিহিত প্রয়োজনীয়তা, এবং এটি চীনের উচ্চমানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য নতুন সুবিধা তৈরি করেছে। এ নতুন মডেল হানিওয়েলের কৌশলগত উদ্দেশ্যের সাথে গভীরভাবে সাযুজ্যপূর্ণ।”
শিল্প অটোমেশন দক্ষতা উন্নয়নে ৫০ বছরের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতাপুষ্ট মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে তার বিনিয়োগ ক্রমাগত বাড়িয়েছে। এর ফোকাস অটোমেশন, জ্বালানি রূপান্তর, এবং বিমান চলাচল শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে বিস্তৃত।
গত জুলাইতে, হানিওয়েল, চায়না আনহুই প্রদেশের পেংপু শহরে টেকসই বিমান জ্বালানি এবং অন্যান্য উদ্যোগের বিকাশের জন্য বিবিসিএ গ্রুপের সাথে একটি কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার লক্ষ্য সবুজ এবং নিম্ন-কার্বন উন্নয়নে সহায়তা করা।
হানিওয়েল, চীনে ক্রমবর্ধমান বিদেশী কোম্পানিগুলোর একটি, যারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে তাদের বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করছে। এর পিছনে রয়েছে চীনের উত্পাদন খাতের উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণে সৃষ্ট উচ্চ-আশাবাদ।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০২৪ সালের প্রথম আট মাসে চীন জুড়ে মোট ৩৬ হাজার ৯৬৮টি নতুন বিদেশী-বিনিয়োগ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই সময়কালে, চীনের মূল ভূখণ্ডে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই), প্রকৃত ব্যবহার, মোট ৫৮০.২ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ৮২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। উচ্চ-প্রযুক্তির উৎপাদন খাত মোট এফডিআই প্রবাহের ১২.৪ শতাংশ বা ৭২.১ বিলিয়ন ইউয়ান আকর্ষণ করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১.৯ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।
উপরন্তু, চীনের শীর্ষ অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকারী চলতি মাসের শুরুতে ঘোষণা করেন যে, উত্পাদন খাতে বিদেশী বিনিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।
মিতসুবিশি ইলেকট্রিক, চায়নার উপ-মহাব্যবস্থাপক তামাই তাকেশি বলেছেন, “এ নীতি শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের জন্য চীনের ইতিবাচক ইচ্ছাকেই প্রদর্শন করে না, বরং চীনা বাজারে তাদের উপস্থিতি ক্রমাগত জোরালো করার জন্য বিদেশী অর্থায়নের উদ্যোগের আস্থাও বৃদ্ধি করে।”
সম্মেলনে আগামী কয়েক বছরে চীনা বাজারের জন্য কোম্পানির উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ফক্সভাগেন গ্রুপ, চায়নার প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা টমাস উলব্রিচ বলেন, গবেষণা ও উন্নয়ন প্রক্রিয়াগুলোকে সুগম করে এবং আরও স্থানীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের কর্তৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে, ফক্সভাগেন তার পণ্য বাজারে সরবরাহের সময় ৩০ শতাংশ হ্রাস করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
চলতি মাসে প্রকাশিত জার্মান চেম্বারের উদ্ভাবন রিপোর্ট ২০২৪ অনুসারে, জার্মানি কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতা বাড়াতে তাদের উদ্ভাবনের স্থানীয়করণকে দ্বিগুণ করছে এবং চীনকে বৈশ্বিক বাজারের জন্য একটি উদ্ভাবন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে জার্মান চেম্বার অফ কমার্সের নির্বাহী পরিচালক এবং বোর্ড সদস্য মার্টিন ক্লোজ বলেছেন, “জার্মান কোম্পানিগুলো একটি তীব্র এবং গতিশীল বাজার পরিবেশে প্রতিযোগিতামূলক থাকার জন্য গ্রাহক এবং সরবরাহকারীদের সাথে স্থানীয় উদ্ভাবন এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বে বিনিয়োগ করছে।”
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়াংহুয়া স্কুল অফ ম্যানেজমেন্টের ডিন লিউ ছিয়াও বলেছেন, “চীনের উদীয়মান শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগ পুঁজি, প্রতিভা এবং প্রযুক্তির আন্তঃসীমান্ত প্রবাহের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আন্তর্জাতিক বিনিময়কে উন্নীত করবে। এটি চীনে গভীর উন্মুক্তকরণ এবং উদ্ভাবনী বাস্তুতন্ত্রকে উৎসাহিত করবে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনাকে আরও প্রসারিত করবে।
মাহমুদ হাশিম/মুক্তা
সিএমজি বাংলা, বেইজিং।