আকাশ ছুঁতে চাই ৮৮
2024-09-19 18:43:47

এবারের পর্বে রয়েছে:

১. ছুটির মৌসুমে নারীর ব্যস্ততা

২. চীনের সিল্ক রোডে পরিভ্রমণ করছেন ইতালিয়ান নারী পর্যটক ভিয়েন্না ক্যামারোতা

৩. ঐতিহ্যকে ধারণ করছেন কারুশিল্পী ওয়াং তানফ্যং

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

ছুটির মৌসুমে নারীর ব্যস্ততা

চীনে এখন উৎসবের আমেজ । ১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হলো মধ্য শরৎ উৎসব বা চোং ছিউ চিয়ের উদযাপন। ঘরে ঘরে এখন চলছে মুনকেক খাওয়া।

 

এই মুনকেক তৈরির জন্য নারীরা উৎসবের আগে যেমন ব্যস্ত সময় পার করেছেন তেমনি তাদের বেশ কিছু বাড়তি আয়ও হয়েছে। অনেক বেকারি ও রেস্টুরেন্ট মুনকেক তৈরি করে। মুনকেক তৈরির ছোট বড় অনেক কারখানাও রয়েছে। এসব কারখানায় মুনকেক তৈরির  জন্য অনেক নারী স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে চাকরি করেন। মুনকেক তৈরি করে তাই এ সময় নারীদের বেশ ভালোই  আয় হয়।

মধ্য শরৎ উৎসব উপলক্ষে চীনের বিভিন্ন স্থানে এখন মেলা বসছে। এসব মেলায় চীনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও কারুশিল্প প্রদর্শিত হচ্ছে।  মধ্য চীনের হুনান প্রদেশের ছাংশা সিটির মেলায় হুনানের নারীদের একটি অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য মেলায় আগত দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। এখানে নভশু ভাষা প্রদর্শন করা হয়। নভশু হলো একটি প্রাচীন ভাষা। এই ভাষা শুধুমাত্র নারীরা ব্যবহার করতেন।

প্রাচীনকালের হুনানের নারীরা এই ভাষা তৈরি করেছিলেন। নভশু ভাষা সাধারণত কাগজে লেখা হতো বা কাপড়ে সেলাই করা হতো। শব্দগুলোকে লেখা হতো নারীদের ভঙ্গীর সাথে মিলিয়ে। নারীরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে, তাদের দৈনন্দিন জীবনের গল্প বলতে এবং মেয়েলী গীত লিখতে ব্যবহার করতেন। নারীদের এই বিশেষ লিপি হুনানের চিয়াংইয়ং কাউন্টিতে বেশি জনপ্রিয় ছিল।

এ সময় ছুটির মৌসুম চলছে। সামনেই রয়েছে ন্যাশনাল ডে বা চীনের জাতীয় দিবসের ছুটি। সব মিলিয়ে নানা রকমভাবে ছুটি উদযাপনের পালা চলছে।আর এই উদযাপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: মিম

 

চীনের সিল্ক রোডে পরিভ্রমণ করছেন ইতালিয়ান নারী পর্যটক ভিয়েন্না ক্যামারোতা

ইচ্ছা ও উদ্যমের কাছে বয়স কোন বাধা নয়। বিষয়টি আবারও প্রমাণ করলেন ইতালির নারী পর্যটক ভিয়েন্না ক্যমারোতা। সম্প্রতি তিনি দুর্গম ট্র্যাক পাড়ি দিয়ে এসেছেন চীনে। এই সাহসী নারীর গল্প শুনবো এখন।

বিখ্যাত ইতালীয় পর্যটক মার্কো পোলোর নাম কে না জানে। মধ্যযুগের এই বিশ্বখ্যত  ভূপর্যটক চীন ভ্রমণ করেছিলেন। মার্কো পোলোর পথ অনুসরণ করে চীনে এসেছেন তার স্বদেশীয় নারী পর্যটক ভিয়েন্না ক্যামারোতা। সম্প্রতি এই নারী পর্যটক পায়ে হেঁটে ২২ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পশ্চিম চীনের সিনচিয়াংয়ে প্রবেশ করেছেন। তিনি ইরখেশতাম স্থল বন্দর দিয়ে চীনে প্রবেশ করেছেন যা পশ্চিমে চীনের সবচেয়ে দূরবর্তি স্থল বন্দর। তিনি প্রাচীন সিল্করোড এর পথরেখা অনুসরণ করেছেন।

ভিয়েন্নার বয়স ৭৫ বছর। এই বয়সের একজন নারীর পক্ষে এই দুর্গম পথ পাড়ি দেয়া ছিল বেশ কষ্টসাধ্য। কিন্তু ভিয়েন্না প্রমাণ করেছেন ইচ্ছা ও উদ্যমের কাছে বয়স কোনো বাধা নয়।

সিনচিয়াংয়ের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শহর কাশগর থেকে ভিয়েন্না ১৫ মাসের চীন সফর শুরু করেছেন। স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ ভিয়েন্নাকে আনন্দের সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাগত জানিয়েছেন। স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী নাচ গান পরিবেশিত হয়েছে সেই অনুষ্ঠানে। সেখানে ভিয়েন্না চীনা বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলেছেন, তাদের প্রতি শুভেচ্ছা ও প্রীতি জানিয়েছেন।

ভিয়েন্না বলেছেন যে তিনি সিনচিয়াং, গানসু, শায়ানসি, ফুচিয়ান, কুয়াংচৌ এবং বেইজিংসহ ১৭টি প্রদেশ এবং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ৩০টিরও বেশি শহর ঘুরে মার্কো পোলোর পদাঙ্ক অনুসরণ করার আশা করছেন।

১২৭৫ সালে মার্কো পোলো চীনে এসেছিলেন। এ বছর তার চীনে আসার  ৭৫০তম বছর পূর্তি হবে। এই বার্ষিকী উদযাপনেই চীনে এসেছেন ভিয়েন্না। তিনি একজন দুঃসাহসী এবং সংস্কৃতি ও ইতিহাসের অনুরাগী পর্যটক। তিনি ২০০০ সালে দ্য ট্রাভেলস অব মার্কো পোলো অধ্যয়ন করেন। এই ভ্রমণকাহিনী তাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে। তিনি সিল্করোড বরাবর ভেনিসিয়ান বণিকদের প্রাচীন রুট অনুসরণ করে ভ্রমণ শুরু করেন। তার লক্ষ্য চীনা সভ্যতার গভীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুভব করা, আধুনিক চীনের উন্নয়ন ও অর্জনের সাক্ষী হওয়া এবং বিশ্বব্যাপী সম্প্রীতি ও অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানানো।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: মিম

ঐতিহ্যকে ধারণ করছেন কারুশিল্পী ওয়াং তানফ্যং

চীনের কারুশিল্প অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন রকম কারুশিল্প। এইসব ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের দক্ষ শিল্পীরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শিল্পের ধারাকে বহন করছেন। এদেরকে বলা হয় ইনহেরিটর। এমনি একজন ইনহেরিটর ওয়াং তানফ্যং। শুনবো এই গুণী নারীর কথা।

মধ্য চীনের হ্যনান প্রদেশ। এখানকার লুওইয়াং সিটির লুয়ানছুয়ান কাউন্টিতে বাস করেন কারুশিল্পী ওয়াং তানফ্যং।

তিনি ঐতিহ্যবাহী হ্যান্ড পেইন্টিং কাপড় তৈরির কারুশিল্পের একজন ধারক। তিনি শুধু ধারকই নন, নিজেও অনেক নতুন রং, নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেছেন।

ছোটবেলা থেকেই ওয়াং ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতিকে ভালোবাসেন। চীনা হ্যান্ড পেইন্টিং কাপড়ের প্রতি তার আগ্রহ ছিল সবসময়েই। তিনি এই ট্র্যাডিশনাল হ্যান্ড পেইন্টিং কাপড় তৈরির কৌশলের প্রতি আকৃষ্ট হন। বিশেষভাবে কাপড়ের নরম রং ও স্নিগ্ধ নকশা তাকে আকৃষ্ট করে। এই নকশার পরিবর্তশীল ফ্যাশনও তাকে আকর্ষণ করে। এই আগ্রহ থেকেই ওয়াং সিদ্ধান্ত নেন হ্যান্ড পেইন্টিং কারুশিল্প বিষয়ে অধ্যয়নের। তিনি বেশ কয়েক বছর এ বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।

তিনি লুয়ানছুয়ান কাউন্টির বিভিন্ন স্থানীয় গাছপালার খোঁজ নেন। তিনি নতুন কয়েকটি উদ্ভিদও পরীক্ষা করেন। কারণ হ্যান্ড পেইন্টে অনেক ভেষজ রং ব্যবহার করা হয়। তিনি নতুন নতুন কাঁচামাল উদ্ভাবন করেন। রং তৈরি, কাপড়টা রঙে ভেজানো , ডাইয়িং, ধোয়া, শুকানো ইত্যাদি ধাপের মাধ্যমে রং ও নকশা কাপড়ে স্থায়ী হয়। স্বাভাবিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও রং পরিবর্তনের মাধ্যমে নকশাগুলো অনন্য হয়ে ওঠে।

এই নকশা লুওইয়াংয়ের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্তর্গত। ওয়াং এখানে নতুন মাত্রাও যোগ করেছেন। তিনি এই হ্যান্ড পেইন্টিং  নকশাকরা কাপড়কে পর্যটন শিল্প, শিশুদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কাজেও ব্যবহার করেছেন।

তিনি লুয়ানছুয়ানে একটি হোম স্টে স্থাপন করেছেন। এই হোমস্টের ডেকোরেশনে তিনি ব্যবহার করেছেন হ্যান্ড পেইন্টিং কাপড়। শুধু তাই নয়। তিনি কাপড় দিয়ে পোশাক ছাড়াও তৈরি করেছেন বিভিন্ন রকম সামগ্রী। যেমন ল্যাম্প শেড, ব্যাগ, কুশন কাভার, টেবিল ক্লথ ইত্যাদি সামগ্রী তিনি তৈরি করেছেন এই হ্যান্ড পেইন্টিং করা কাপড় এবং লোকজ মোটিফে। পর্যটকরা তার এই হোম স্টেতে থাকতে পারেন পাশাপাশি এই ধরনের  হ্যান্ড পেইন্টিড কাপড় কিনতেও পারেন।

এই কারুশিল্পকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌছে দেয়ার জন্য তিনি এ বিষয়ক ওয়ার্কশপ বা প্রশিক্ষণ কর্মশালাও পরিচালনা করেন। নিজের হোম স্টেতে তিনি শিশুদের জন্য এ বিষয়ক নিয়মিত প্রশিক্ষণ ক্লাস নিয়ে থাকেন।

তিনি অন্যান্য হোমস্টের ইনটেরিয়র ডেকোরেশনের কাজও করেন। সেই কাজে তিনি ব্যবহার করেন হ্যান্ড পেইন্টেড ও লোকজ মোটিফে তৈরি কাপড়। পর্যটকরা যখন এসব হোম স্টেতে প্রবেশ করেন তখন তারা লোকজ শিল্পের এক সুন্দর ভুবনে প্রবেশ করেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: শুভ

 

সুপ্রিয় শ্রোতা। আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল