মজার স্বাদের মুনকেক
2024-09-19 18:17:51

সেপ্টেম্বর ১৯, সিএমজি বাংলা ডেস্ক:  চীনের মধ্যশরৎ উৎসব শেষ হলেও তার রেশ এখনও কাটেনি। বিশেষ করে উৎসবের বিশেষ মজাদার খাবার মুনকেক খাওয়া চলছে এখনও। চীন জুড়ে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন স্বাদের মুনকেক খাওয়ার রীতি রয়েছে। অনেক ধরনের মুনকেক নিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় মুনকেক মেলা।

মুনকেক। চীনা ভাষায় এর নাম ইয়ুয়েবিং। মধ্যশরৎ উৎসব মুনকেক ছাড়া অসম্পূর্ণ। চীন দেশের মানুষ মধ্যশরৎ উৎসবের আগে এবং পরে পুরো মাস জুড়েই মুনকেক খেতে ভালোবাসে।

মুনকেক একধরনের বেকারিপণ্য। শরৎ-হেমন্তকালে নতুন ওঠা ফসল দিয়ে তৈরি হয় গোলাকার মুনকেক। উপরে নকশা করা থাকে। মুনকেকের স্বাদ মিষ্টি, ঝাল, নোনতা হরেক রকম হতে পারে। ভিতরে যেমন পুর দেয়া হবে, স্বাদ ঠিক তেমনি হবে। বিভিন্ন প্রদেশের রয়েছে বিভিন্ন রকম মুনকেকের ঐতিহ্য।

সিছুয়ান প্রদেশের ছেংতু সিটিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে মুনকেক ফেস্টিভ্যাল বা মুনকেকের মেলা। চীনের ১০টি প্রদেশ ও অঞ্চলের ২শ’র বেশি কোম্পানি এই ফেস্টিভ্যালে অংশ নেয়। মুনকেক প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো মেলায় নতুন নতুন স্বাদের এবং ঝলমলে প্যাকেজে মুনকেক নিয়ে এসেছে।

মেলায় আগত একজন ক্রেতা বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে ছোট শিশু আছে যে গতানুগতিক স্বাদের চেয়ে ফ্রুট ফ্লেভার ও পাতলা আবরণের মুনকেক পছন্দ করে। আমি কিছু টাটকা বেক করা মুনকেকও কিনেছি। মধ্যশরৎ উৎসবে পারিবারিক পুনর্মিলনের সময় পরিবারের সদস্যরা এই মুনকেক খেতে পছন্দ করেন।’

মধ্যশরৎ উৎসবে চাঁদের সৌন্দর্য অবলোকনের রীতি রয়েছে। পূর্ণিমার চাঁদের মতো মুনকেকের আকার গোল। তাই তো এর নাম ইয়ুয়েবিং বা চাঁদের কেক। অনেকে ঘরে তৈরি করেন। আবার অনেকেই বিভিন্ন বেকারি, সুপারশপ বা নামকরা কোম্পানির আউটলেট থেকে কিনে নেন। চমৎকার প্যাকেট করা বক্সে পাওয়া যায় এসব মুনকেক। উৎসবরে সময় আত্মীয় বন্ধুদের উপহার দেয়া হয় বাক্সভর্তি মুনকেক।

আরেকজন ক্রেতা বলেন, আমি কিছুদিন আগে প্রথম এই মেলায় আসি। দেখলাম অনেক ক্রেতা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মুনকেক কিনছেন। ভাবলাম দেখি কেমন। কিনে নিয়ে গেলাম। বাড়িতে পরিবারের সদস্য ও আমার নিজের কাছে স্বাদটা বেশ ভালো লাগলো। ’

স্বাদ ভালো লাগায় আবার মুনকেক কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এমন ক্রেতা আরও অনেক আছেন।

মুনকেকের ভিতরে পুর হিসাবে পদ্মফুলের বীজ, ডিমের কুসুম, সবজি, মাংস সবই দেয়া হতে পারে। উত্তর চীনে মিষ্টি স্বাদের আর দক্ষিণ চীনে নোনতা স্বাদের মুনকেক বেশি জনপ্রিয়। হালাল মুনকেকও রয়েছে প্রচুর। বিভিন্ন রকম ফ্লেভারে তৈরি হয় এগুলো। সুয়ানওয়েই সিটির একটি প্রতিষ্ঠান। তারা মুনকেকের ভিতর মাংসের পুর দিয়েছে। টাটকা টাটকা বানিয়ে দিচ্ছে। এই দোকানের সামনে ক্রেতাদের লম্বা লাইন।

সু চেন একজন  মুনকেক বিক্রেতা। তিনি বলেন, ‘এই মুনকেকের পুর তৈরি করা হয়েছে সিক্রেট রেসিপিতে। ইয়ুননান প্রদেশের সুয়ানওয়েই কোম্পানির মাংস ব্যবহার করা হয়েছে। এটা সেরা মানের। গত কয়েক দিনে বিক্রি তিনগুণ বেড়েছে। ৬ লাখ ইউয়ান ছাড়িয়েছে। প্রতিদিন মানুষ দুই তিন ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আমাদের টাটকা মুনকেক কিনছেন।’

মধ্যশরৎ উৎসব চীনের মানুষের পরিবারের কাছে ফিরে আসার সময়। যদিও এ বছর উৎসবটি শেষ হয়েছে কিন্তু তার রেশ এখনও চলছে। আর মুনকেক খাওয়া তো মাস জুড়েই চলছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রুচিতে কিছুটা পরিবর্তনও এসেছে। ট্র্যাডিশনাল ক্যান্টোনিজ ধরনের মুনকেক অনেকে পছন্দ করেন যেখানে পদ্মফুলের বীজের পেস্ট আর ডিমের কুসুম দেয়া হয়। আবার নতুন প্রজন্মের কাছে নারিকেল, পনির ইত্যাদির পুর দেয়া মুনকেকও বেশ জনপ্রিয়। আজকাল স্বাস্থ্যসচেতন ও তরুণ প্রজন্মের কাছে লো সুগার এবং মিনি সাইজের মুনকেকের চাহিদাও ব্যাপক।

স্বাদে ভিন্নতা থাকলেও ঐতিহ্যবাহী স্ন্যাকস এবং মধ্যশরৎ উৎসবের বিশেষ খাবার হিসেবে মুনকেকের আবেদন চিরকালীন।

শান্তা/ফয়সল