সেপ্টেম্বর মাস। আনহুই প্রদেশে সকালের কুয়াশা ভাসছে। ৬২ বছর বয়সি শেং মোং মেই ক্লাসরুমে এসে তাঁর দিনব্যাপী শিক্ষাদানের কাজ শুরু করেন। তাঁর তাইওয়ান অ্যাকসেন্টের ম্যান্ডারিন শিক্ষার্থীদের আকষর্ণ করে।
কেউ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছেন: কী তাকে তাইওয়ান প্রণালী পার হয়ে মূল ভূখণ্ডে এসে শিক্ষাদান করতে উৎসাহ দিয়েছে? তাঁর উত্তর হলো ‘ভালোবাসা’। তাইওয়ান রেডিও এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, ম্যাগাজিনের উপ-সম্পাদক-ইন-চিফ থেকে, শিক্ষকতার কাজ পর্যন্ত করেছেন শেং মোং মেই। বর্তমানে তিনি আনহুই প্রদেশের চিচৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের লিটারেচার অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগে পড়ান। নিজের ‘নতুন ক্যারিয়ারে’র বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন তিনি।
শহুরের সংস্কৃতি হলো শেং মোং মেইয়ের প্রধান গবেষণার দিক। ঐতিহাসিক শহর চিচৌকে বেছে নেওয়াকে তিনি একটি স্বপ্ন-অনুসরণকারী যাত্রা হিসেবে বিবেচনা করেন, যা ‘তাঁর বাকি জীবনের সাথে মিলে যায়’।
চিচৌ শহর দক্ষিণ আনহুই প্রদেশে অবস্থিত। শহরটি পাহাড় বেষ্টিত এবং শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সবুজ জলের সাথে চমৎকার প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। এটি ‘পাহাড়, নদী এবং কবিতায় ভরা শহর’ নামে পরিচিত।
চীনের ইতিহাসে লি পাই, তু মু এবং ইউয়ে ফেইয়ের মতো সাহিত্যিকরা চিচৌতে তাদের মাস্টারপিস কাজ রেখে গেছেন।
শেং মোং মেই বলেন, ‘আমি কবিতা ভালোবাসি এবং অবসর সময়ে কবিতা লিখতেও পছন্দ করি। সুগভীর ঐতিহাসিক ভিত্তি এবং সমৃদ্ধ হুইচৌ সংস্কৃতি তাইওয়ানে উপলব্ধি করা যাবে না। তাই আমি মূল ভূখণ্ডে শিক্ষাদান এবং জীবন কাটানোর কথা ভাবতে শুরু করি।’
তাঁর ধারণায়, আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তিনি চিচৌ’র সবুজ জল এবং পাহাড়ের মধ্যে ‘পরিচিতি এবং দয়া খুঁজে পেয়েছেন।
শেং মোং মেই তাইওয়ানের নান থৌ জেলার একজন স্থানীয় বাসিন্দা। তিনি প্রায়শই তার জন্মস্থানকে ‘সিটি পার্ক’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি মনে করেন, চিচৌ শহর তার জন্মস্থানের সাথে খুব মিল এবং সবকিছুতেই বসন্তের অনুভূতি।’
তিনি বলেন, তাইওয়ানে মুল ভূভাগের বিভিন্ন জায়গার অনেক স্ন্যাক রেস্তোঁরা রয়েছে। তিনি আগে বন্ধুদের সঙ্গে সুস্বাদু খাবারের স্বাদ নিতে সেসব রেস্তোরাঁয় গিয়েছেন। তাই যখন তিনি আনহুইতে এসেছেন, তখন তার পরিবার চিন্তিত ছিল না।
তিনি বলেন, ‘গত দুই বছরে, আমি আনহুইতে উন্নয়ন করতে অনেক তাইওয়ানের ব্যবসায়ী এবং চিচৌতে কর্মরত দশ জনেরও বেশি তাইওয়ানের শিক্ষকের সাথেও দেখা করেছি। আমরা হুনান এবং সিনচিয়াংসহ অনেক জায়গায় ভ্রমণ করেছি। সবকিছুই চমৎকার।’
এই বছর হলো চিচৌতে শেং মোং মেইয়ের আসার ষষ্ঠ বছর। ছয় বছরের মধ্যে তিনি চিচৌ শহুরের সংস্কৃতির উপর দশটিরও বেশি একাডেমিক নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। তিনি এখনও মনে রেখেছেন যে, তাইওয়ানে চিচৌ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিভা নিয়ে আসার আমন্ত্রণ পাওয়া থেকে পদত্যাগ করে আনহুই প্রদেশে যাওয়া পর্যন্ত তাঁর মাত্র তিন মাস সময় লেগেছে।
নিজের এই সিন্ধান্ত প্রসঙ্গে শেং মোং মেই বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, মুল ভূভাগে যাওয়ার বীজ ২০১৫ সালে অঙ্কুরিত হয়েছিল।’ তিনি আরো বলেন, সেই সময় একজন দলনেতা হিসেবে তিনি চার বা পাঁচজন তাইওয়ানের ছাত্র-ছাত্রীর সাথে চোং শান বিশ্ববিদ্যালয় এবং জিনান বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শন করেন এবং নিজ নিজ উদ্যোগে মূল ভূখণ্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পূর্ণ ব্যবস্থা, বিষয় সেটিংস এবং একটি উন্মুক্ত ক্যাম্পাস পরিবেশ উপলব্ধি করেছেন।
তিনি বলেন, “শিক্ষাদানের পরিবেশের বাইরে স্বাভাবিক ঘনিষ্ঠতার কারণে তাইওয়ান প্রণালীর উভয় দিকের তরুণদের কৌতূহল, উষ্ণতা এবং উত্সাহ আমি স্পষ্টভাবে অনুভব করতে পারি। মানুষ, জমি এবং ভাষার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, মুখোমুখি যোগাযোগ সর্বদা সবচেয়ে আন্তরিক।”
তাইওয়ান প্রণালীর উভয়পক্ষই একই সংস্কৃতি এবং জাতি ভাগ করে, এবং সাধারণ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার এবং উপলব্ধি হল তাইওয়ান প্রণালীর উভয়দিকের স্বদেশবাসীকে সংযুক্ত করার ভিত্তি।
শেং মোং মেই মনে করেন, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষাগত আদান-প্রদান তাইওয়ান প্রণালীর দুই প্রান্তের সমন্বিত উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মুল ভূভাগে তাইওয়ানের শিক্ষকদের পাঠদান হলো যোগাযোগের খুব ভাল উপায়। তাইওয়ানের শিক্ষকরা, একটি অত্যন্ত জ্ঞানী দল হিসেবে মূল ভূখণ্ডের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে আরও বস্তুনিষ্ঠভাবে দেখতে পারেন এবং মূল ভূখণ্ডের শাসন ব্যবস্থা এবং ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয় বুঝতে পারেন।
শেং মোং মেই’র দৃষ্টিতে, শিক্ষার ক্ষেত্রে মূল ভূখণ্ডের উচ্চ গুরুত্বারোপ এবং ব্যাপক বিনিয়োগ তাইওয়ানের শিক্ষকদের দীর্ঘমেয়াদে মূল ভূখণ্ডে শিকড় গাড়ার আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন যে, চিচৌ বিশ্ববিদ্যালয় তাইওয়ানের শিক্ষকদের জন্য মেডিকেল ইন্সুরেন্স কিনেছে এবং প্রিন্টার, কম্পিউটার এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসসহ অ্যাপার্টমেন্টে একক কক্ষ বরাদ্দ করেছে।
তিনি বলেন, “তাইওয়ানের সঙ্গে উন্নয়নের সুযোগগুলো ভাগ করে নিতে এবং তাইওয়ানবাসীদের মঙ্গল বাড়াতে মুল ভূভাগের সদিচ্ছা এবং আন্তরিকতা গভীরভাবে অনুভব করেছি আমি।”
শেং মোং মেইয়ের ডেস্কের একটি সুস্পষ্ট জায়গায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এক একটি আশীর্বাদ কার্ড এবং সারা দেশে ভ্রমণের ছবি ছাড়াও, আরো আছে সম্মানসূচক প্রশংসাপত্র।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, চীনা সংস্কৃতির সবচে সুন্দর শব্দ হল ‘একীকরণ’। তাইওয়ান প্রণালীর দু’তীরের স্বদেশবাসীরা হাতে হাত রেখে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করলে এবং একে অপরের সাথে একীভূত হলে তখন চীনা সংস্কৃতি’র উত্তারাধিকার বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে।’
(লিলি/হাশিম/রুবি)