‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
৮৭ তম পর্বে যা যা থাকছে:
১. তরুণদের জন্য ওয়ার্ল্ডস্কিলস কম্পিটিশন
২. তরুণ রুয়ান্ডান শিল্পীদের কণ্ঠে চীনা গান
৩. ইন্সপায়ারলি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী
১. তরুণদের জন্য ওয়ার্ল্ডস্কিলস কম্পিটিশন
ওয়ার্ল্ডস্কিলস একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যা বৃত্তিমূলক দক্ষতার জন্য চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করে। প্রতি দুই বছর পর পর সংস্থাটি সারা বিশ্বের তরুণদের নিয়ে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
এই বছরের প্রতিযোগিতাটি ফ্রান্সের লিয়ন শহরে সম্প্রতি শেষ হয়েছে। ইভেন্টটিতে প্রায় ৭০টি দেশ এবং অঞ্চল থেকে আসা প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহন করে। শিল্পকর্ম থেকে ওয়েল্ডিং পর্যন্ত ৫৯টি দক্ষতা বিভাগে প্রতিযোগিতা করে অংশগ্রহণকারীরা। ৫৯টি ভিন্ন শাখায় অংশ নিতে ৬৮ জন প্রতিযোগীকে পাঠায় চীন।
দলগুলো জানায়, এটি সমন্বিত প্রক্রিয়া, তবে গোল্ড জিতলে প্রত্যেকের পেশাদার ক্যারিয়ার উজ্জ্বল হবে।টিম চায়নার জুয়েলারি বিশেষজ্ঞ সু নিং সিন বলেন, "আমি মনে করি এটি তাদের ক্যারিয়ারের জন্য, তাদের পুরো জীবনের জন্য কাজে দিবে। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে তাদের যাত্রা শুরু করতে পারে"। এই আয়োজনের মাধ্যমে অনুপ্রেরণা ছড়িয়ে দেওয়াই আয়োজোকদের মূল লক্ষ্য।
সংশ্লিষ্ট আয়োজকরা জানান, এই ইভেন্টটি ডিজাইন করা হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কাজের ধরন এবং একটি সফল ক্যারিয়ার গড়তে কী কী উপাদান প্রয়োজন তা বোঝার জন্য। এই এক্সপো প্রতিনিধিদের একে অপরের কাছ থেকে শেখার সুযোগ দেয়।
এই দ্বিবার্ষিক ইভেন্টটি পানি দূষণের কারণ এবং সমস্য মোকাবিলা ও করনীয় অনুসন্ধানের মতো বিষয় নিয়ে কাজের সুযোগ করে দেয়। টিম চায়নার পানি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ওয়াং ছুন বলেন,"শহুরে জলের পয়ঃনিষ্কাশন এবং কারখানার জলের পুনঃব্যবহার এইসব সমস্যা সমাধানের উপায় বের করতে হবে। তাই পানি প্রযুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ"৷
পদক প্রদান অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে টানা কয়েকদিনের কঠিন প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটে। ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে এই প্রতিযোগিতার ৪৮তম সংস্করণ। আর এর আয়োজক শহর হবে চীনের শাংহাই।
প্রতিবেদক : নাসরুল্লাহ রাসু
সম্পাদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
২. তরুণ রুয়ান্ডান শিল্পীদের কণ্ঠে চীনা গান
আফ্রিকার প্রত্যন্ত গ্রামে চীনা গান গাইছে একদল তরুণ তরুণী। মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় গানটি। চীনের লাখো দর্শককে মুগ্ধ করে গানটি।
সম্প্রতি চীনা সোশ্যাল মিডিয়া তৌইনে ভাইরাল হয় রুয়ান্ডান একটি ব্যান্ড দল। এই ব্যান্ড দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্যাসিফিক লাজবাও। স্থানীয়ভাবে বো বো নামে পরিচিত। তার দলে রয়েছেন আরও ৩ জন শিল্পী। তারা মুলত আফ্রিকান গ্রামীণ সংস্কৃতি নিয়ে গান তৈরি করেন তারা।
লাজবায়ো বেগান প্রথম চীনা প্লাটফর্মে ভিডিও পোস্ট করেন ২০১৯ সালে। গেল বছর চীনের প্লাটফর্ম তৌইনে পোস্ট করা ভিডিওটিই মূলত ভাইরাল হয়। এই ভিডিওতে দেখা যায় রুয়ান্ডার গ্রামীণ জীবন ও শাকসবজি নিয়ে গান চীনা গান গাইছে তারা। আর এই গানের মাধ্যমেই তারা পেয়ে যান ৪০ লাখ চীনা ফলোয়ার।
রুয়ান্ডান গায়ক লাজবায়ো বেগান বলেন, ‘আমরা আশাই করিনি আমাদের পরিবেশনাটি এতটা জনপ্রিয়তা পাবে। দর্শকদের এমন সাড়া আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে প্রতিদিন ভিডিও পোস্ট করার। আমরা এটি চালিয়ে যেতে চাই’
লাজবায়োর চীনা সংগীতের যাত্রা শুরু হয়েছিল ৫ বছর আগে। রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে অবস্থিত কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটে প্রথম সে আসে চীনা ভাষা শিখতে। এরপর প্রেমে পড়ে যায় চীনা গানের। কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটও তাকে চীনা গান শেখার সুযোগ করে দেয়।
রুয়ান্ডান গায়ক লাজবায়ো বেগান বলেন, ‘আমরা অনেক দেশি-বিদেশি প্লাটফর্মে আমাদের ভিডিও পোস্ট করি। দর্শকদের কাছ থেকে দারুণ সাড়া পাই। অনেক দর্শক অবাক হয়ে কমেন্ট বক্সে জানতে চেয়েছে, আমরা কি শুধু ঠোঁট মিলিয়েছি নাকি সত্যি নিজেদের কণ্ঠে গান গেয়েছি? কারণ বেশিরভাগ দর্শক বিশ্বাসই করতে পারছিল না এটি আমরা গেয়েছি।’
চলতি বছরের এপ্রিলে ব্যান্ড দলটি দক্ষিণ পশ্চিম চীনের সিছুয়ান প্রদেশের ছেংতু ভ্রমণ করে। সেখানে তারা এই শহর নিয়ে একটি জনপ্রিয় গানের শুটিং করে। তাদের ভ্রমণের সময় লাজবায়ো এবং তার ব্যান্ড প্লান করে আরও বেশি চীনা গানের শুটিং করার। ভবিষ্যতে তারা চীনা শিল্পীদের সাথে যৌথ ভাবে কাজ করতে আশাবাদী।
প্রতিবেদক : হোসনে মোবারক সৌরভ
সম্পাদক : ফয়সল আবদুল্লাহ
৩. ইন্সপায়ারলি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী
বিশ্বের বৃহত্তম স্টুডেন্ট আর্কিটেকচার কম্পিটিশন ইন্সপায়ারলি অ্যাওয়ার্ড। বিশ্বের প্রায় ১৬০টিরও বেশি দেশের শিক্ষার্থীদের স্থাপত্য প্রতিভাকে তুলে ধরার প্লাটফর্ম এটি। যেখানে কম্পিটিশন হয় তরুণ স্থপতিদের মধ্যে। যাদেরকে দেয়া হয় স্থাপত্য, নকশা, ল্যান্ডস্কেপ ও নগর পরিকল্পনায় নিজস্ব প্রতিভা এবং সৃজনশীলতা প্রদর্শনের সুযোগ।
২০২৪ সালে আয়োজন করা হয় ৯ম বার্ষিক ইনস্পায়ারলি অ্যাওয়ার্ড কম্পিটিশন। যার স্থাপত্য বিভাগে বিশ্বের বাঘা বাঘা ইউনিভার্সিটির ফাইনালিস্টদের কাতারে জায়গা করে নেন তিন বাংলাদেশি তরুণ। যাদের মধ্যে ছিলেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এমআইএসটি এর আর্কিটেকচার-৪ ব্যাচের সদ্য স্নাতক সারাফ নাওয়ার। আরও ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের রাইমা রহমান ও মো: কাফিল উদ্দিন।
দীর্ঘ যাচাই-বাছাইয়ের পর স্বতন্ত্র ডিজাইনের জোরে ৪১ জন ফাইনালিস্টের মধ্য থেকে বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে নেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সারাফ নাওয়ার। ২০২৪ সালের আগস্টের ১৪ তারিখ ফাইনালিস্টদের নাম ঘোষণা করা হয়।
এই বছর পৃথিবীর ৮৭টি দেশ থেকে ১১৭৪টি প্রজেক্ট জমা দেয়া হয়। সারাফ তার "টেইল অব অ্যান ওশেন: ওশেনারিয়াম কমপ্লেক্স অ্যাট সোনাদিয়া" শীর্ষক আন্ডারগ্র্যাড থিসিস প্রজেক্টের জন্য পুরস্কারটি অর্জন করেন আর্কিটেকচার ক্যাটেগরিতে।
মূলত তার প্রজেক্টটি ছিলো বাংলাদেশের সোনাদিয়া দ্বীপে একটি ওশেনারিয়াম কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনার রূপরেখা। সোনাদিয়া দ্বীপ, যা বাংলাদেশের সুক্ষ্ম ইকোসিস্টেমের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। যেখানে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন, জোয়ারের ঢেউ , আরো আছে ভৌগলিক নানান চ্যালেঞ্জ।
ডিজাইনে রয়েছে লবণাক্ত পানির অ্যাকোয়ারিয়াম, মিঠা পানির অ্যাকোয়ারিয়াম। আছে ডলফিনারিয়াম। এছাড়াও আছে একটা ওশেন হেরিটেজ মিউজিয়াম।
এছাড়াও সারাফের ডিজাইনে রয়েছে একটি সৌর শক্তি চালিত পানিশোধন ব্যবস্থা এবং বৃষ্টির পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা। সব থেকে বড় কথা তার ডিজাইনটি পুরোপুরি ইকোফ্রেন্ডলি ছিলো।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী