সেপ্টেম্বর ১৭, সিএমজি বাংলা ডেস্ক: চীনের অন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসব মধ্যশরৎ উৎসব যাকে চীনা ভাষায় বলে চোং ছিউ চিয়ে।
এর পিছনে রয়েছে তিনটি লোকজ গল্প। প্রথম গল্পটি হলো চাঁদের বুকে বাস করা সুন্দরী কন্যা ছ্যাং এ্যকে নিয়ে।
তিনি কিভাবে চাঁদে পৌঁছুলেন সে নিয়ে রয়েছে করুণ গল্প।
অনেক অনেক বছর আগে আকাশে উঠেছিল দশটি সূর্য। সেই দশ সূর্যের তাপে মানুষের জীবন হয়ে পড়লো অতিষ্ঠ। সূর্যের তাপে পুড়ে গেল ক্ষেতের ফসল, শুকিয়ে গেল নদীর জল। তখন মানুষকে দুর্দশা থেকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন বীর তীরন্দাজ হোও ই। তিনি তীর ধনুক দিয়ে নয়টি সূর্যকে কুপোকাত করলেন। পৃথিবীর জন্য একটি সূর্যই যথেষ্ট বলে রয়ে গেল একটিমাত্র সূর্য। হোওইর এই বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে দেবরানী মা মতান্তরে দেবতারা হোওইকে দিলেন এক বোতল অমৃত। এই অমৃত খেলে তিনি অমর হবেন এবং দেবতায় পরিণত হয়ে অমৃতলোকে চলে যাবেন। হোওই যদিও অমরত্ব চাইতেন কারণ সেটি কে না চায়, কিন্তু তিনি তার স্ত্রী ছ্যাং এ্যকে খুব বেশি ভালোবাসতেন। অমর হওয়ার চেয়ে স্ত্রীর সঙ্গে মর্ত্যলোকে বাস করাটাই তার বেশি কাম্য ছিল। তাই তিনি বোতলটি ঘরে এনে রেখে দিলেন। এদিকে ফাং মাং নামে হোওইর এক লোভী শিষ্য ছিল। একদিন হোওই যখন বাইরে গেছেন তখন ফাং মাং সেই অমৃত চুরি করে খাওয়ার চেষ্টা করে। ফাং মাংএর মতো খারাপ লোক যেন অমর হতে না পারে তাই ছ্যাং এ্য দ্রুত অমৃত পান করে ফেলেন। তার শরীর হালকা হয়ে যেতে থাকে এবং তিনি চাঁদে পৌছে যান। সেখানেই বাস করতে থাকেন তিনি। তিনি পরিণত হন চাঁদের দেবীতে। বিরহকাতর হোওই তাকে স্মরণ করে চাঁদের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেন এবং চাঁদের প্রতি নানা রকম নৈবদ্য উৎসর্গ করেন। মধ্য শরৎ উৎসবের রাতে পূর্ণিমার চাঁদে ছ্যাং এ্যর ছায়া দেখা যায়। সে রাতেই একমাত্র ছ্যাং এ্যর সঙ্গে মিলিত হতে পারেন হোওই।
এই কাহিনীর বিপরীত আরেকটি কাহিনীও আছে। সেখানে বলা হয় হোওই যখন বীর হিসেবে খ্যাতি পান তখন তাকে রাজা বানানো হয়। কিন্তু কালক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী। ছ্যাং এ্য মনে করেন, এই অত্যাচারী রাজা যদি অমর হয়ে যায় তাহলে জনগণের দুর্দশার শেষ থাকবে না। তাই স্বামী যেন অমর হতে না পারে সেজন্য ছ্যাং এ্য নিজেই অমৃত পান করেন। হোওই রাগের বশে স্ত্রীকে মারতে চান। কিন্তু তার আগেই ছ্যাং এ্য পৌছে যান চাঁদে। রাগ ও হতাশায় মৃত্যুবরণ করেন হোওই। আর জনগণ ছ্যাং এ্যর এই মঙ্গলময় কাজে প্রীত হয়ে তার উদ্দেশ্যে অর্ঘ্য দান করে, প্রার্থনা করে যেন ছ্যাং এ্য তাদের আশীর্বাদ দেন।
মধ্য শরৎ উৎসবের রাতে পূর্ণিমার চাঁদ যখন হয়ে ওঠে বছরের সবচেয়ে ঝলমলে তখন চীনের ছেলেমেয়েরা চন্দ্রদেবী ছ্যাং এ্যকে দেখতে পায় চাঁদের বুকে।