গত মে মাসে মার্কিন সরকার ঘোষণা করেছিল যে, চীনের ওপর ৩০১ নং ধারা অনুযায়ী ট্যারিফ বজায় রাখার ভিত্তিতে চীনা বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং অন্যান্য পণ্যের উপর শুল্ক আরও বাড়ানো হবে। এই ব্যবস্থাটি মূলত ১ অগাস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু ৩০ জুলাই এবং ৩০ অগাস্ট দুইবার তা স্থগিত করা হয়েছিল। কারণ, মার্কিন কর্মকর্তারা এক হাজারেরও বেশি জনমত গবেষণা করার দাবি করেছেন। যদিও বিপুল সংখ্যক মতামত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ বা শুল্ক ছাড় প্রসারিত করার আবেদনের বিরোধিতা করেছিল, মার্কিন সরকার শেষ পর্যন্ত জনমত শুনতে অস্বীকার করেছিল। এ ধরনের একতরফাবাদ এবং সংরক্ষণবাদ "চীনের উন্নয়ন দমন ও প্রতিরোধের চেষ্টা না করা" এবং "চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা না করার" জন্য মার্কিন প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেছে, এবং দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের ঐকমত্যও লঙ্ঘন করেছে।
তুলনা করে বোঝা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রের জারি করা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে, এ বছরের মে মাসে ঘোষিত বেশিরভাগ বিষয়বস্তু গৃহীত হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, বৈদ্যুতিক যানবাহনের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, সেমিকন্ডাক্টর এবং সৌর কোষের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয় এবং ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং মূল খনিজের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, মার্কিন শুল্ক লাঠির পিছনে রাজনৈতিক অর্থ খুবই সুস্পষ্ট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, দুই দলের মধ্যে প্রচারণা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে এবং চীনের প্রতি কঠোরতা দেখানো তথাকথিত "রাজনৈতিক শুদ্ধতা" হয়ে উঠেছে। লোকেরা দেখেছে যে একদিকে, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী টিভি বিতর্কে রিপাবলিকান প্রার্থীর শুল্ক পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন এবং অন্যদিকে, বর্তমান গণতান্ত্রিক প্রশাসন তার মেয়াদের মাত্র কয়েক মাস বাকি থাকতে চীনের উপর শুল্ক বাড়িয়েছে।
শুল্ক যুদ্ধ সমস্যার সমাধান করতে পারছে না, এবং যুক্তরাষ্ট্রও প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হবে। ১৪ সেপ্টেম্বর, রয়টার্স মার্কিন প্রযুক্তি শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী তথ্য প্রযুক্তি শিল্প কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জেসন অক্সম্যানের একটি বিশ্লেষণের উদ্ধৃতি দিয়ে বলে যে, চীনের উপর যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক প্রয়োগের পর থেকে, মার্কিন কোম্পানি এবং ভোক্তারা ২২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। মার্কিন সরকার সর্বদা অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে স্থানীয় শিল্প "রক্ষা" করতে চেয়েছে, এমনকি শিল্প চেইন স্থানান্তরে বাধ্য করতে চেয়েছে। তবে প্রত্যাশার বিপরীতে দেশীয় কোম্পানিগুলো তাতে রাজি হয় নি।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য, চীনের উপর নির্বিচারে শুল্ক আরোপ তার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ডাব্লিউটিও ইতোমধ্যে রায় দেয় যে, ৩০১ ট্যারিফ ডাব্লিউটিও-এর নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র তা সংশোধন করে না, বরং চীনের উপর তার শুল্ক আরো বাড়িয়েছে। এটা প্রমাণ করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরিই ‘আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘনকারী’। অন্যদিকে, চীনের উপর যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত শুল্কের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বিপন্ন করতে পারে এবং বৈশ্বিক সবুজ রূপান্তর প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। সবাই জানে যে, চীনা বৈদ্যুতিক যানবাহন, লিথিয়াম ব্যাটারি, ফটোভোলটাইক সেল এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো সক্রিয়ভাবে বিশ্ব অর্থনীতি এবং সবুজ ও নিম্ন-কার্বন উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য উত্পাদন এবং সরবরাহ চেইনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রচার করে। যুক্তরাষ্ট্রের জোরপূর্বক "সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ এবং ভাঙা" মানবজাতির বর্তমান এবং ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলবে।
বাস্তবতা বারবার প্রমাণ করেছে যে, চীনের উপর যুক্তরাষ্ট্রের ৩০১ ট্যারিফ অজনপ্রিয়, এবং শুল্কের মাধ্যমে চীনা কোম্পানি এবং সংশ্লিষ্ট শিল্প চূর্ণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি। এবার, চীনের নতুন জ্বালানি শিল্প লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কও কার্যকর হবে না, বরং এটি তার নিজের ক্ষতি করবে। যুক্তরাষ্ট্রের অবিলম্বে তার ভুল সংশোধন করা উচিত এবং চীনের উপর সব অতিরিক্ত শুল্ক বাতিল করা উচিত। চীন দৃঢ়ভাবে চীনা কোম্পানিগুলোর স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। চীনের উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবন কোনো শক্তি বন্ধ করতে পারবে না।
(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)