যা রয়েছে এবারের পর্বে
১. উহান চিড়িয়াখানায় ফ্লেমিংগোর শাবক
২. বনরক্ষকদের নিরাপত্তায় ব্যবহার হচ্ছে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি
নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।
সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।
উহান চিড়িয়াখানায় ফ্লেমিংগোর শাবক
ফ্লেমিংগো পাখি চীনে বেশ বিরল। তবে সম্প্রতি উহান ওয়াইল্ডলাইফ কিংডমে একটি ফ্লেমিংগো শাবকের জন্ম হয়েছে। হুবেই প্রদেশে এই প্রথম সংরক্ষিত অবস্থায় ফ্লেমিংগো পাখির জন্ম সম্ভব হলো। কেমন করে এটা ঘটলো আর কেমনভাবেই বা এই পাখির ছানার যত্ন নেয়া হচ্ছে, চলুন শুনে নিই সেই গল্প।
ফ্লেমিংগো পাখি দেখতে বেশ চমৎকার। আকারেও বেশ বড়। জলজ এই পাখি সাধারণত নাতিশীতোষ্ণ এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে লবণজলের হ্রদ, জলাভূমি এবং উপহ্রদের অগভীর জলে বাস করে।
চীনে ফ্লেমিংগো তুলনামূলকভাবে বিরল। জটিল প্রজনন পরিবেশ তাদের দৈনন্দিন যত্ন এবং প্রজননের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফল হয়েছে হুবেই প্রদেশের উহান ওয়াইল্ডলাইফ কিংডম।
উহান ওয়াইল্ডলাইফ কিংডম সমস্যা সমাধানে ফ্লেমিংগোদের জন্য সুরক্ষিত প্রজনন কর্মসূচি শুরু করেছে। পার্ক জানায়, দলটি ছয় বছরের খাওয়ানো এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পাখিদের পরিবেশগত অভ্যাস, খাদ্যতালিকাগত পছন্দ এবং প্রজনন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পেরেছে।
সম্প্রতি এই পার্কে ডিম ফুটে একটি ফ্লেমিংগো পাখির ছানা জন্ম নিয়েছে। হুবেই প্রদেশে এই প্রথম সংরক্ষিত অবস্থায় ফ্লেমিংগো পাখির ছানা জন্ম নিলো।
এজন্য অবশ্য উহানের এই কর্মীদলকে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছিল। পাখিদের পরিবেশ, খাদ্য এবং মানুষের হস্তক্ষেপের প্রভাব অধ্যয়নের জন্য অভিজ্ঞ পরিচর্যাকারী এবং প্রজননকারীদের একটি দলকে একত্রিত করা হয়েছিল। গৃহপালিত প্রাণী বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত এই দল ফ্লেমিংগো পাখিদের ঘেরের মধ্যে , একটি পুনঃসঞ্চালনকারী জলের ব্যবস্থা তৈরি করেছিল এবং নতুন স্প্রিংকলার ইনস্টল করেছিল।
ফ্লেমিংগোর প্রাকৃতিক আবাসস্থলের আর্দ্র ও নির্জন পরিবেশের মতো করে পার্কে ওদের থাকার জায়গায় ঝোপঝাড় ও অন্যান্য গাছপালা লাগানো হয়। ওদের যেন মনে হয় ওরা বন্দী নয়, বরং জলাভূমির ভিতরেই রয়েছে।
সদ্য জন্মানো পাখির শাবকটিকে যত্ন নেয়া হচ্ছে বিশেষভাবে।
একজন পরিচর্যকারী ছেন সিয়াওয়িং জানান, নবজাতক পাখিটিকে দুই ঘন্টা পর পর ড্রপারের মাধ্যমে দুধ খাওয়ানো হয়। তাপমাত্রার বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হয়। কারণ পাখির ছানা তাপমাত্রা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সংবেদনশীল। ওর বসবাসের পরিবেশ ৩৩ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার মধ্যে রাখতে হয়। তাপমাত্রার সামান্য পরিবর্তন হলেও শাবকটির শ্বাসকষ্ট হতে পারে এবং ও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।
তত্ত্বাবধায়করা ৬ মাস বয়স না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চা পাখিটির দেখাশোনা চালিয়ে যাবেন এবং তারপরে এটিকে ঝাঁকের সাথে আবার
পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করবেন।
প্রকৃতিপ্রেমীরা আশা করেন এই শাবকটি সুস্থভাবে বড় হয়ে উঠুক। প্রকৃতিতে আরও বাড়ুক সুন্দর ফ্লেমিংগো পাখির সংখ্যা।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: মিম
প্রকৃতি সংবাদ।
বনরক্ষকদের নিরাপত্তায় ব্যবহার হচ্ছে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি
গহীন অরণ্যের রেঞ্জারদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চীন ব্যবহার করছে স্যাটেলাইট। এটি যেমন রেঞ্জারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে তেমনি আবিষ্কৃত প্রাচীন গাছপালা সম্পর্কেপো ধারণা পাওয়া যায়। আর এই কাজ সহজ করতে এখন পর্যন্ত এই অরণ্যে স্থাপন করা হয়েছে চারটি বেস স্টেশন। বিস্তারিত প্রতিবেদনে।
চারদিক সুনসান নিরবতা, কোথাও যেন কেউ নেই। গহীন অরণ্যের এই বন পূর্ব চীনের উয়িশান জাতীয় উদ্যান। উয়ি পর্বত বা উয়িশান জাতীয় উদ্যান অবস্থিত চিয়াংসি ও ফুচিয়ান প্রদেশের সংযোগস্থলে। জাতীয় প্রকৃতি সংরক্ষণ ও জাতীয় প্রাকৃতিক এলাকা হিসেবে তালিকাভুক্ত এই উদ্যান।
এই জঙ্গলে গাছের ঘনত্ব এতই বেশি যেখানে কেউ হাঁটলে বা কাজ করলে কারও উপস্থিতি বোঝার উপায় নেই। তবে সমস্যার সমাধান দিয়েছে প্রযুক্তি। পার্কটিতে বনকর্মীদের উপস্থিতি বের করতে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে স্যাটেলাইট। নিবিড় অরণ্যে রেঞ্জারদের অবস্থান নিশ্চিত করতে এবং নিরাপত্তা জোরদার করতেই এই ব্যবস্থা নিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।
এই বনের যেখানে সবচেয়ে দুর্বল সংকেত পাওয়া যায় সেখানেই কাজ করবে দেশটির নিজস্ব স্যাটেলাইট বেইদু। চীনের এই নেভিগেশন স্যাটেলাইট যাতে খুব ভালো কাজ করে সেজন্য স্থাপন করা হয়েছে বেস স্টেশন। এতে সহজেই সিগন্যাল পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিয়ং ছিয়াং ,প্রযুক্তিবিদ, উয়িশান ন্যাশনাল পার্ক। তিনি বলেন, "আমরা দেখতে পাচ্ছি কোনো সংকেত না থাকলেও, এই উঁচুতেও আমাদের অবস্থান দেখা যাচ্ছে"।
বেইদু নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম ড্রোনগুলো মহাকাশের বিভিন্ন গতি ও অবস্থানের তথ্য ব্যবহার করে সুনির্দিষ্ট এলাকার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে কাজ করে।
সিয়ং ছিয়াং বলেন, ‘কমান্ড সেন্টারে আমরা মিশন সেট করতে এবং মিশন সংক্রান্ত তথ্য ড্রোনে পাঠাতে কম্পিউটার ব্যবহার করি। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। কাজ শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই রিচার্জের জন্য ফিরে আসে ড্রোনগুলো। আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সেগুলো ডেটা আপলোড করে।’
এখন পর্যন্ত এই উদ্যানে চারটি বেস স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। এই বেস স্টেশনগুলো চিয়াংসি প্রদেশের সব এলাকা কভার করে, যা স্থানীয় বনসম্পদ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ফ্যান ছিয়ানইয়ং পরিচালক, প্রকৃতি সংরক্ষণ ব্যুরো, উয়িশান জাতীয় উদ্যান । বলেন,
‘বেইদু স্যাটেলাইটের রিয়েল-টাইম পজিশনিংয়ে মাধ্যমে আমরা রেঞ্জার, খুঁজে পাওয়া প্রাচীন গাছ ও পশু-প্রাণীর অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারি। ‘
স্যাটেলাইটের মাধ্যমে গহীন অরণ্যে থাকা কর্মীদের অবস্থানই শুধু নয়, তাদের কাজ করা ও অবস্থানের তথ্যও পাওয়া যায়। তাই এখানে আরও বেশি বেস স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে উদ্যান কর্তৃপক্ষের।
প্রতিবেদন: আফরিন মিম
সম্পাদনা: শান্তা
সুপ্রিয় শ্রোতা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।
আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। আর নতুন বৃক্ষ রোপণ করি। আমাদের মায়ের মতো পরিবেশকে রক্ষা করি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ