এবারের পর্বে রয়েছে:
১ চীন ও আফ্রিকার নারীদের উন্নয়নে কাজ করছেন চীনের ফার্স্ট লেডি ফেং লি ইউয়ান
২. প্রতিযোগিতা বড় নয়, বন্ধুত্বই শেষ কথা
৩. প্রশিক্ষণ নিতে চীন গেলেন উইমেন ইন টেক প্রতিযোগিতার তিন বিজয়ী
নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।
চীন ও আফ্রিকার নারীদের উন্নয়নে কাজ করছেন চীনের ফার্স্ট লেডি ফেং লি ইউয়ান
চীনা প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ফেং লি ইউয়ান। তিনি গত এক দশকের বেশি সময় ধরে চীনের ও আফ্রিকার নারীদের উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন। সম্প্রতি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয় চীন আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের শীর্ষ সম্মেলনে। সেখানে যোগ দিতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি তাদের স্ত্রীরাও চীনে আসেন। তাদের অংশগ্রহণে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয় চীন –আফ্রিকা নারী ও শিক্ষা বিষয়ক সম্মেলন। বিস্তারিত রয়েছে প্রতিবেদনে।
বেইজিংয়ের তিয়াওইয়ুথাই হোটেল। এখানে একের পর এক আসছেন আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের স্ত্রীরা। এখানে আয়োজন করা হয়েছে ‘চীন আফ্রিকা নারী ও শিক্ষা বিষয়ক সম্মেলন’। সদ্য সমাপ্ত চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের বেইজিং শীর্ষসম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ২৬টি দেশের নেতার স্ত্রীরা ও প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশ নেন।
চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ে স্ত্রী ফেং লিইউয়ান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। তিনি এই সম্মেলন উপলক্ষে অভিনন্দন বক্তব্যে বলেন, অভিনন্দনবার্তায় ম্যাডাম ফেং বলেন, চীন ও আফ্রিকা পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে অভিন্ন কল্যাণের সমাজ নির্মাণ করছে।
চীন ও আফ্রিকার নারীরা পরিশ্রম, মেধা ও কার্যক্রমের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতার সুন্দর অধ্যায় রচনা করছেন। গত ৩০ বছরের মধ্যে চীনের ‘বসন্ত কুঁড়ি প্রকল্প’ নারীদের শিক্ষাগ্রহণে সহায়তা দিয়েছে এবং ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফ্রিকান দেশগুলোর নারীরা শিক্ষা গ্রহণে এগিয়ে এসেছে। ফেং বলেন অনেক আফ্রিকান নারী শিক্ষা গ্রহণ করার পর নিজেদের জীবনের মূল্য বুঝতে পেরেছেন।
তিনি আরো বলেন, নারী শিক্ষা কার্যক্রমের উন্নয়ন এবং সুন্দর ভবিষ্যত বাস্তবায়নের যাত্রায় চীন ও আফ্রিকার লক্ষ্যমাত্রা একই, তাই বিশ্বের মেয়ে ও নারীদের শিক্ষাগ্রহণ আরো ন্যায্য, সহনশীল, গুণগতমান উন্নয়নে চীন ও আফ্রিকার সংশ্লিষ্ট সহযোগিতা আরো জোরদার করা উচিত।
ম্যাডাম ফেং লিইউয়ান শুধু চীনের ফার্স্ট লেডিই নন, তিনি জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর নারী ও মেয়ে শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবেও দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।
তিনি আফ্রিকার নারী ও কিশোরীদের শিক্ষার মান উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন।
অনুষ্ঠানে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের আফ্রিকান চেয়ারম্যান দেশ সেনেগালের প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ম্যারি, বুরুন্ডির প্রেসিডেন্টের স্ত্রী অ্যাঞ্জেলিনাসহ আরো কয়েকজন আফ্রিকান দেশের ফার্স্ট লেডি বক্তব্য রেখেছেন। দীর্ঘকাল ধরে আফ্রিকার মেয়ে ও নারীদের শিক্ষা গ্রহণে ম্যাডাম ফেং লি ইউয়ানের চমত্কার অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তাঁরা। আফ্রিকান দেশগুলোর উন্নয়নে চীনের সমর্থন ও সহায়তার জন্যও ধন্যবাদ জানান তাঁরা। ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা করে নারীদের সুখী জীবন কামনা করেন তাঁরা।
সম্মেলনে আগত অতিথিরা পিকিং অপেরার পরিবেশনা এবং নারী ও শিশুদের অংশগ্রহণে চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির পরিবেশনা দেখে মুগ্ধ হন।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: নাহার
প্রতিযোগিতা বড় নয়, বন্ধুত্বই শেষ কথা
সদ্য সমাপ্ত প্যারিস প্যারালিম্পিকে চীনের নারীদের সাফল্যের পাশাপাশি অন্য দেশের নারীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার বিষয়টি সকলের মনে স্নিগ্ধতার স্পর্শ এনে দিয়েছে। শুনবো এমন কয়েকটি বন্ধুত্বের গল্প।
প্যারিস প্যারালিম্পিকের অনেক ইভেন্টেই চীনের প্রতিযোগীরা সাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা তারা অন্যদেশের নারীদের সঙ্গে যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন তা সত্যিই অনন্য।
পাওয়ার লিফটিং ইভেন্টে স্বর্ণপদক জয় করেন চীনের সুই চ্য। তিনি মঞ্চ থেকে নামতে সাহায্য করেন নাইজেরিয়ার ক্রীড়াবিদ রৌপ্য জয়ী এসথার নোরগুকে। ৬৭ কিলোগ্রাম ক্যাটাগরিতে চাইনিজ পাওয়ার লিফটিং চ্যাম্পিয়ন থান ইয়ুচিয়াও পোডিয়ামে হৃদয় ছোঁয়া দৃশ্যের অবতারণা করেন। দর্শকরা দেখতে পান থান তার অন্য দুই প্রতিযোগী মিশর ও ব্রাজিলের দুজন পদকজয়ীকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাচ্ছেন এবং বন্ধুত্বে অভিষিক্ত করছেন। দৃশ্যটি দেখে প্রত্যেকেই অনুভব করেছেন যে এই তিনজনের মধ্যে এক আন্তরিক বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
নারীদের ২০০ মিটার টি ৩৬ ফাইনালে চীনের স্বর্ণজয়ী শি ইয়িথিং এবং নিউ জিল্যান্ডের রৌপ্য জয়ী ড্যানিয়েলে এইটচিসনকে দেখা যায় পরষ্পরের জয়ে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাতে।
শি বলেন, তিনি বরৈন তিনি যখন ফিনিশ লাইন অতিক্রম করছিলেন তখন প্রায় ড্যানিয়েলের ওপর ভেঙে পড়েন। ড্যানিয়েলই প্রথম যে তাকে বিজয়ের অভিনন্দন জানান।
শি বলেন, তারা ট্য্রাকে হয়তো কঠিন প্রতিযোগী কিন্তু এর বাইরে তাদের দৃঢ় বন্ধুত্বও রয়েছে। কে জয় পেয়েছে এটা বড় কথা নয়। বরং দুজনের বন্ধুত্বপূর্ণ এই প্রতিযোগিতাটাই সবচয়ে বড় কথা।
প্যারালিম্পিকে এই নারীরা প্রতিযোগীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে যে ঐক্য ও প্রীতির বন্ধন রয়েছে সেটাই তাদের জীবনে এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রেরণা জোগাচ্ছে।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: নাহার
প্রশিক্ষণ নিতে চীন গেলেন উইমেন ইন টেক প্রতিযোগিতার ৩ বিজয়ী
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীদের অগ্রগতির জন্য সম্প্রতি আয়োজিত হয় ‘উইমেন ইন টেক’ নামে একটি প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হন তিনজন নারী যারা চীন সফরে গেছেন।
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সঙ্গে যুক্ত নারীদের নিয়ে আয়োজিত ‘উইমেন ইন টেক’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী তিন নারী আট দিনের সফরে চীনে গেছেন। সফরকালে তাঁরা ইন্টারন্যাশনাল ডিজিটাল এনার্জি এক্সপোতে (আইডিইই) অংশ নেওয়ার পাশাপাশি চীনের টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের প্রধান কার্যালয় ও তঙ্গুয়ান ক্যাম্পাসে প্রশিক্ষণ নেবেন। এক সংবাদ বিজ্ঞাপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে প্রতিযোগিতায় আয়োজক প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উইমেন ইন টেক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী সুমাইয়া তারিক এসবিআইটি লিমিটেডের একজন ডিজাইন ভেরিফিকেশন ইঞ্জিনিয়ার। মাহমুদা নাঈম ফোরওয়ার্ন বাংলাদেশের গবেষক ও সমন্বয়কারী এবং সাফরিনা কবির ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) শিক্ষার্থী।
হুয়াওয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও হুয়াওয়ে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যান চুনফেং বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের প্রমাণ করার মতো বিশ্বমানের প্রতিভা বাংলাদেশের নারীদের রয়েছে। উইমেন ইন টেক বিজয়ীদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতে হুয়াওয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
গত বছর প্রথমবারের মতো ‘টেক ফর হার, টেক বাই হার, টেক উইথ হার’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশে এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। এই উদ্যোগে হুয়াওয়ের কৌশলগত সহযোগী ছিল ইউনেসকো। প্রতিযোগিতা ৭৫০ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্য থেকে সেরা তিন বিজয়ীকে নির্বাচন করা হয়।
প্রতিবেদন: আফরিন মিম
সম্পাদনা: শান্তা
সুপ্রিয় শ্রোতা। আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ