‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ৮৬
2024-09-11 20:03:36

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।  

৮৬ তম পর্বে যা যা থাকছে:  

১. গ্রামীণ-শহুরে প্রকল্পের তরুণরা সম্পৃক্ত হচ্ছে যেভাবে

২. ইয়িংক্য নাচে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ 

৩. তাইওয়ানের যুবক মূল খণ্ডে পেলেন শিকড়ের সন্ধান

 

 

১.  গ্রামীণ-শহুরে প্রকল্পের তরুণরা সম্পৃক্ত হচ্ছে যেভাবে

চীনের উন্নয়ন ভাবনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে একযোগে গ্রামীণ ও শহুরে জীবনমান ও অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে চলার কিছু প্রকল্প। আর এমন কিছু প্রকল্পের প্রতি এখন পূর্ব চীনের পাহাড়ি অঞ্চলের প্রতিভাবান তরুণরা আকৃষ্ট হচ্ছে বেশি। কোভিড পরবর্তী সময়ে সেই সব প্রকল্পের অধীনে চালু হয়েছে নানা প্রশিক্ষণমূলক প্রোগ্রাম। বিস্তারিত থাকছে রিপোর্টে। 

 

চ্যচিয়াংয়ের পূর্ব উপকূলীয় প্রদেশের আনচি কাউন্টির অর্থনীতিতে অবদান রাখছে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আর এই সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করেই এখানে গড়ে উঠেছে গ্রামীণ-শহুরে যৌথ প্রকল্প, যে প্রকল্পগুলো ক্রমশ আকৃষ্ট করছে চীনের তরুণ প্রতিভাবানদের।

২০০৫ সালের আগস্টে, আনচি হয়ে ওঠে চীনের প্রথম স্থান, যেখানে ‘স্বচ্ছ পানি ও সবুজ পাহাড়গুলো অমূল্য সম্পদ’  ধারণাটি সামনে নিয়ে আসেন প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং। সি’র দেখানো পথেই এখন প্রকৃতির সম্পদগুলো হয়ে ‍উঠছে তরুণদের স্বাবলম্বী হওয়ার হাতিয়ার।

সুবিশাল বাঁশবন ও সাদা চায়ের জন্য পরিচিত আনচি কাউন্টি। যারা গ্রামাঞ্চল উপভোগ করতে চান তাদের জন্য আদর্শ গন্তব্য। সবুজ উন্নয়নের একটি অগ্রণী ক্ষেত্র হিসেবে, এখানে পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক ভারসাম্য নিয়ে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।

  

ডিজিটাল অর্থনীতিতে নতুন শিল্প বিকাশের ধারাবাহিকতায় লিয়াংশান ফিউচার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি টাউন হচ্ছে আনচিতে।

 

প্রকল্পটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা এবং মাল্টি-চ্যানেল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠানের মতো নতুন শিল্পের সঙ্গে জড়িত ১৭টি উদ্যোগকে এনেছে এক ছাদের নিচে।

এসব প্রকল্পের কারণে আনচিতে তরুণদের কর্মসংস্থানেরও ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, যা আগে ছিল না। নতুন ডিজিটাল শিল্প নিয়েও কাজ করছেন তরুণরা। নতুন প্রযুক্তি সংস্থা ফ্লোয়িং ক্লাউড টেকনোলজির পণ্য উন্নয়ন বিভাগের প্রধান লিউ হাই তার অভিব্যক্তির কথা জানান।

 

‘আগে আমরা আনচিতে শুধু ঘুরতে আসতাম। এখানে কাজ করবো তা  কখনও ভাবিনি। প্রথমে কিছুটা সংশয় ছিল। পরে দেখলাম কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তাদের জন্য এখানে অনেক সুযোগ আছে। পরিবেশটি তরুণদের জন্য বেশ উপযুক্ত।’

 

আনচিতে গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে তরুণদেরই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বেশি। আধুনিক প্রযুক্তি খাতে তাদের প্রতিভা কাজে লাগাতে একাধিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

অব্যবহৃত সম্পদ এবং তরুণদের আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান নানা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে একটি ইকো-কমিউনিটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানান ডিজিটাল নোম্যাড ইয়ুছুন প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা শ্যু সং।

 

‘এখানকার অনেক গ্রামীণ এলাকায় প্রচুর পতিত সম্পদ আছে। তাই আমরা তরুণদের একটি কমিউনিটি তৈরির মাধ্যমে অব্যবহৃত সম্পদগুলোকে রূপান্তরিত করে গ্রামে তরুণদের কর্মসংস্থানে আকৃষ্ট করছি।’

 

২০২২ সালের জুলাই থেকে ইয়ুছুন প্রকল্পটি প্রথম গ্লোবাল পার্টনার প্রোগ্রাম চালু করে এবং ৫০টিরও বেশি শাখা প্রোগ্রাম চালু হয়। এক হাজারের বেশি মানুষের জন্য বসতি স্থাপন করতে সংস্থান, তহবিল, দল এবং প্রযুক্তি সহযোগিতাও দেওয়া হয়। 

এই অঞ্চলে এখন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে পর্যটক। তরুণদের কিছু  ব্যবসায়িক উদ্যোগের কারণেই যা সম্ভব হয়েছে। তাদের কেউ কেউ ক্যাফে ব্যবসাতেও বেশ সফলতা অর্জন করেছেন।

 

আর এসব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অগ্রগতি দেখেই ২০২৩ সাল থেকে ১ লাখ স্নাতককে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং নীতি সহায়তা দিয়েছে আনচি প্রশাসন।

 

প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদক : ফয়সল আবদুল্লাহ

 

২. ইয়িংক্য নাচে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ 

 

চীনের একটি অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থাওইয়ুয়ান ইয়িংক্য নাচ। এই নাচে মার্শাল আর্টের কিছু ভঙ্গী ব্যবহার করা হয়। শত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য অ্যানিমেশনে এই নাচ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে নতুন প্রজন্মের শিশু কিশোররা এর প্রতি দারুণ আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

থাওইয়ুয়ান ইয়িংক্য নাচ। শত শত বছর ধরে কুয়াংতোং প্রদেশের প্রচলিত লোকজ এই নৃত্যশিল্প চীনের অবৈষয়িক সংস্কৃতিতে জায়গা করে নিয়েছে। শতাব্দি প্রাচীন এই শিল্পকে নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে অ্যানিমেশনে এই নাচ ব্যবহার করেছেন শিল্পী চু সিয়াওফং।

হ্য মুরোং সাত প্রজন্ম ধরে এই নাচের উত্তরাধিকার বহন করছেন। তিনি একে জনপ্রিয় করতে তরুণ অ্যানিমেটর চু সিয়াওফংয়ের সঙ্গে জুটি বাঁধেন। এই নাচের উপর ভিত্তি করে একটা অ্যানিমেটেড মুভি বানানো হয়।

 

কিন্ডারগার্টেনের শিশুরা চু সিয়াওফংয়ের অ্যানিমেশন পছন্দ করেছে। তারা ওই অ্যানিমেশনের মতো করে নিজেরা নাচটা শিখতে আগ্রহী হয়েছে। অ্যানিমেশনটির নাম দ্য থিওচিও কুংফু ডান্স। শিশুরা মুভি দেখতে দেখতে নিজেরাই মেতে উঠেছে নাচে। চু অনেক সময় শিশুদের সঙ্গে ইয়িংক্য নাচে অংশ নেন।

দিনে দিনে আরও আরও বেশি মানুষ এই সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। এই শিল্পের ধারা জনপ্রিয় হচ্ছে নতুন প্রজন্মের মধ্যে।

 

প্রতিবেদক : শান্তা মারিয়া

সম্পাদক : ফয়সল আবদুল্লাহ

 

৩. তাইওয়ানের যুবক মূল খণ্ডে পেলেন শিকড়ের সন্ধান

 

চিউ চিং-লিং তৃতীয়বারের মতো সফরে এসেছেন শানসিতে। এই প্রদেশেরই আদি বাসিন্দা ছিলেন তার পূর্বপুরুষরা। চীনের তাইওয়ানের প্রায় ১০০ ব্যবসায়ী এবং তরুণদের একটি দলের সাথে ভ্রমণ করছেন চিউ। সম্প্রতি শানসিতে একটি রুট-ট্রেসিং ইভেন্টে অংশ নিয়েছিলেন এরা।

 

১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চীনের মূল ভূখণ্ডে বাস করছেন তাইওয়ানের চিউ। তবে এবারের সফরে চিউ তার পূর্বপুরুষদের স্মৃতি বিজড়িত জনপদ শানসির চিনচি মন্দির, পিংইয়াও প্রাচীন নগরীর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান এবং প্রত্নস্থাপনাগুলো ঘুরে দেখেন। রুট-ট্রেসিং ইভেন্ট বা শিকড় খোঁজার এ আয়োজনের অংশ হিসেবে মূল ভূখণ্ডের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও অংশ নেন তিনি। চিউ বলেন চীনা জাতির উত্তরাধিকার পরিচয় তার জীবনে গভীর কিছু উপলব্ধি এনে দিয়েছে।

 

চীনের তাইওয়ানের যুবক চিউ চিং-লিং বলেন, ‘এই নিয়ে আমি শানসিতে তিনবার এসেছি। প্রথমবার দাতং, দ্বিতীয়বার লিনফেনে এবং এবার তাইয়ুয়ানে। শানসিকে এত পছন্দ করার কারণ হলো এ প্রদেশে আমার পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল। আমি বড় হয়েছি চীনের তাইওয়ানের পিংতুং কাউন্টিতে যেখানে 'চাংচি' নামের একটি শহর রয়েছে। আমি মনে করি তাইওয়ান প্রণালীর উভয় দিকের লোক-সংস্কৃতি একই রকম।’

 

ভ্রমণকারী তরুণদের জন্য চীনের তাইওয়ান প্রণালীর দুই পাশের সংস্কৃতির মধ্যে মিল ও পার্থক্য বোঝার একটি সুযোগ করে দিয়েছে এ সফর। চিউ চিংলিংও চীনা সংস্কৃতির বিষয়ে আরও আগ্রহী হয়েছেন এ সফরে অংশ নিয়ে।

 

‘তাইওয়ানে অনেক মন্দির আছে। একই রকম মন্দির চিয়ামেন ও ফুচিয়ানেও দেখা যায়। ফুচিয়ানের মন্দিরগুলো উজ্জ্বল এবং রঙিন। শানসির মন্দিরগুলো আদি চেহারা বজায় রেখেছে। দেখেই বোঝা যায় এগুলো হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন ঐতিহ্যের কথা বলছে।’

 

গত দশ বছরে তিনদফা সফরে চিউ শুধু তার পারিবারিক ঐতিহ্যের আবহটাই উপভোগ করেননি। তার শিকড়ের ইতিহাস ও চীনা মূল ভূখণ্ডের বিভিন্ন সংস্কৃতির বিকাশ সম্পর্কেও জেনেছেন অনেক কিছু।

 

 

প্রতিবেদক : নাসরুল্লাহ রাসু

সম্পাদক : ফয়সল আবদুল্লাহ

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

 সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী