এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। বিশ্বের বৃহত্তম ইনডোর স্কিইং রিসোর্ট এখন শাংহাইয়ে
২। চীনা পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে আফ্রিকা
৩। ঘুরে আসুন বেইজিংয়ের তোংসি মসজিদ
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৮৫তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। বিশ্বের বৃহত্তম ইনডোর স্কিইং রিসোর্ট এখন শাংহাইয়ে
বিশ্বের বৃহত্তম ইনডোর স্কিইং রিসোর্ট এল প্লাস। চীনের শাংহাই মিউনিসিপালটিতে অবস্থিত এই থিম রিসোর্ট। সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে এই রিসোর্টের।
রিয়েল-স্নো স্কিইং এর সকল সুবিধা নিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে এই রিসোর্টকে। আর এই গ্রীষ্মে শাংহাইতে প্রথমবারের মতো স্নোবোর্ডিং করেছেন ক্যারিবিয়ান স্কিয়ার ড্যানজেল ডিজিমন ডাঙ্গেলবেন।
রিসোর্টের বাইরের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়া সত্ত্বেও, এই রিসোর্টির ভেতরের তাপমাত্রা মাইনাস ১০ সেন্টিগ্রেড। শহরের একঘেয়ে গরমের বিপরীতে তৈরি স্বস্তির এই স্থান শাংহাই এলপ্লাস।
স্নো ইনডোর স্কিইং থিম রিসোর্ট লিন-ক্যাং বিশেষ এলাকায় অবস্থিত। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর বিশ্বের বৃহত্তম ইনডোর রিয়েল-স্নো স্কিইং আবাসিক সুবিধাসহ ট্রায়াল অপারেশন পর্যায়ে রয়েছে।
ট্রায়ালের সময় রিসোর্টটি পরিদর্শন করা ডাঙ্গেলবেন বলেন, "আমি উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে বাইরে যেতে দ্বিধাবোধ করছি, কিন্তু আমি এখানকার শীতলতা উপভোগ করছি। এটি শীতের মতো মনে হয়। আমি কখনও ভাবিনি আমি গ্রীষ্মকালে স্কি করতে এরকম জায়গা খুঁজে পাব।"
প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই রিসোর্টটিতে ডাইনিং, আবাসস্থান, বিনোদন, কেনাকাটা এবং অবকাশ যাপনের জন্য আদর্শ গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
এই রিসোর্টের স্নো ওয়ার্ল্ড, ৯০ হাজার বর্গ মিটারেরও বেশি জায়গা নিয়ে করা হয়েছে। প্রায় ২০টি তুষার-থিমযুক্ত বিনোদন সাইট রয়েছে এখানে। তাই বলা হচ্ছে এটি বিশ্বের বৃহত্তম ইনডোর রিয়েল-স্নো স্কিইং ফিল্ড।
ভেন্যুটিতে স্কি ঢালের চারটি ভিন্ন বেরিয়ার স্তর রয়েছে, যার মধ্যে ২৬ ডিগ্রির গ্রেডিয়েন্ট সহ ৩৪০ মিটার-লম্বা উচু ঢাল রয়েছে। আরও আছে কোচিং কোর্স এবং একটি শিক্ষণ ট্র্যাকসহ নতুনদের জন্য একটি স্কি গ্রাউন্ড। রিসোর্টটি প্রাায় এক হাজারটি কক্ষসহ তিনটি বরফ এবং তুষার-থিমযুক্ত হোটেল রয়েছে যার মধ্যে ১৭টি উদ্ভাবনী "স্কি-ইন স্কি-আউট" স্যুট রয়েছে যা অতিথিদের তাদের কক্ষ থেকে সরাসরি তুষার ঢালে স্বাগত জানায়।
প্রতিবেদন- নাসরুল্লাহ মানসুর
সম্পাদনা- আফরিন মিম
২। চীনা পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে আফ্রিকা
৫০টিরও বেশি দেশ নিয়ে বিশাল এক মহাদেশ আফ্রিকা। এই মহাদেশের বিভিন্ন দেশে রয়েছে আকর্ষনীয় পর্যটন গন্তব্য। তাইতো চীনের পর্যটকরা ঘুরতে যাচ্ছে এসব পর্যটন গন্তব্যে। চীনের জাতীয় অভিবাসন ব্যবস্থাপনা ব্যুরো মঙ্গলবার জানিয়েছে, চীনা পর্যটকরা ক্রমবর্ধমান হারে আফ্রিকা সফরে যাচ্ছেন।
ব্যুরো জানায়, গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে তথা গত জুলাই ও আগস্টে, চীন থেকে বিদেশে গেছেন ও বিদেশ থেকে চীনে এসেছেন ১১০ কোটি দেশি-বিদেশি পর্যটক, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। গ্রীষ্মের ছুটিতে চীনা পর্যটকদের গন্তব্য ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলো। তবে, এ সময় মিসরের পিরামিড এবং কেনিয়ার প্রেইরিতে বিপুলসংখ্যক চীনা পর্যটক দেখা যায়।
পরিসংখ্যান বলছে, চীনা পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় আফ্রিকান চারটি দেশ হচ্ছে মিসর, মরক্কো, কেনিয়া, মরিশাস।
আর পর্যটন গন্তব্যগুলোর মধ্যে অন্যতম-
· সাংস্কৃতিক রত্ন জাঞ্জিবার
এরই মধ্যে পর্যটকদের কাছে জাঞ্জিবার বেশ জনপ্রিয় গন্তব্য। সুন্দর সমুদ্র সৈকত ছাড়াও জাঞ্জিবার শহরের প্রাচীনতম স্টোন টাউন দেখার মতো এক জায়গা। এখানে সংকীর্ণ গলির মধ্যে দিয়ে হাটলেই পুরো দ্বীপের সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। প্রতি সন্ধ্যায় ফোরোধানী ফুড মার্কেটে নানা মজার স্ট্রিট ফুড পাওয়া যায়।
· চিত্তাকর্ষক কেপ্টাউন
কেপ্টাউনের মতো জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে যেতে বিদেশ থেকে ফ্লাইট খুজে পাওয়া কঠিন নয়। সাউথ আফ্রিকার দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত বন্দরনগরটি চিত্তাকর্ষক টেবিল মাউন্টেন আচ্ছাদিত উপদ্বীপে অবস্থিত। এখানে সকালে সার্ফিং য়েরও সুযোগ রয়েছে।
· পিরামিডের সুদান
সুদানের মানুষ খুবই দয়ালু প্রকৃতির। সুদানিরা রসিকতা করে এটিকে আগ্রাসী বন্ধু বলেও ডাকে। কারণ কারো সঙ্গে পরিচয় হলেই কিছুক্ষণ পর চা পানের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এখানকার মেরো নুবিয়ান পিরামিডগুলো পর্যটকদের বেশি আকৃষ্ট করে। মিশরের পিরামিডগুলোর তলনায় আকারে ছোট হলেও এগুলো কম চিত্তাকর্ষক নয়। তাইতো চীনা পর্যটকরা ভিড় করছেন এখানে।
এদিকে, চীন ও আফ্রিকার মধ্যে সরাসরি ফ্লাইটের সংখ্যাও বেড়েছে। ৩১টি আফ্রিকান দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক পর্যটন সহযোগিতামূলক দলিল স্বাক্ষর করেছে চীন।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া
৩। ঘুরে আসুন বেইজিংয়ের তোংসি মসজিদ
চীনে হাজার হাজার মসজিদ রয়েছে। চীনের মসজিদগুলোর স্থাপত্য শৈলী বিভিন্ন রকম। প্রাচীন যুগের মসজিদগুলো সাধারণত হান স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত। আধুনিক যুগের মসজিদে সৌদি আরবের মসজিদ নির্মাণ শৈলীর ছাপ রয়েছে।
বেইজিং শহরে ৭০টির বেশি মসজিদ আছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো তোংসি মসজিদ। এটি বেইজিংয়ের তোংছ্যং জেলায় তোংসি সাবডিস্ট্রিক্টের ১৩ নম্বর তোংসি সাউথ স্ট্রিটে অবস্থিত। এই মসজিদে এক সঙ্গে ৫শ’ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। চীনাভাষায় এই মসজিদের নাম তোংসি ছিংচেনসি।
কিংবদন্তি অনুসারে হাজার বছরের বেশি সময় আগে লিয়াও রাজবংশের সময় এই মসজিদ নির্মিত হয়। লিয়াও রাজবংশের দ্বিতীয় রাজধানী ছিল বেইজিং। সেসময় এখানে একটি মুসলিম কমিউনিটি বাস করতো। তারা এখানে একটি ছোট মসজিদ বা নামাজঘর নির্মাণ করেন। কিন্তু এই তথ্যের কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।
ঐতিহাসিকভাবে বলা হয় এই মসজিদের নির্মাণকাল ১৩৪৬ সাল। ইয়ুয়ান রাজবংশের সময় এই মসজিদ নির্মিত হয়। ১৪৪৭ এবং ১৪৮৬ সালে এই মসজিদের সংস্কার কাজ চলে এর পরিধি বাড়ানো হয় এবং নতুন ভবন নির্মিত হয়। ১৪৪৭ সালের সালের নির্মাণকাজের ব্যয় বহন করেন ছেন ইয়ুইয়ুয়ান নামে মিং রাজবংশের একজন প্রধান কর্মকর্তা।
ঊনবিংশ শতকে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মসজিদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরপর মসজিদের পরিসর আরও বাড়িয়ে নতুনভাবে গড়ে তোলা হয়। পুরো বিংশ শতক ধরেই বিভিন্ন সময় এর সংস্কার কাজ চলে।
মসজিদের রয়েছে দুটি বিশাল ফটক। যেগুলো কারুকার্যসমৃদ্ধ। একটি দৃষ্টিনন্দন মিনার। বিশাল নামাজ কক্ষ। যেখানে স্তম্ভ ও দেয়ালে পবিত্র কোরআন শরিফের বাণী লেখা রয়েছে।
গেট ও নামাজ কক্ষের মাঝখানে রয়েছে বিশাল খোলা প্রাঙ্গণ। আরও কয়েকটি ভবন রয়েছে প্রাঙ্গণ ঘিরে। মসজিদের লাইব্রেরি ভবনটি প্রাঙ্গণের একপাশ অবস্থিত। লাইব্রেরি রয়েছে সমৃদ্ধ সংগ্রহ। এখানে পবিত্র কোরআন শরিফের অনেক মূল্যবান তফসির রয়েছে।
যারা মসজিদটি দেখতে চান তারা বেইজিং সাবওয়ের তোংসি স্টেশনে নেমে পায়ে হেঁটেই পৌছাতে পারবেন। এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং জুম্মা পড়তে আসেন মুসল্লিরা।
নামাজের সময় অন্য ধর্মের মানুষ প্রবেশ করতে পারেন না। এই মসজিদ ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এটি একটি পর্যটন স্থান হিসেবেও জনপ্রিয়। মসজিদের দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য ও ক্যালিগ্রাফির সংগ্রহ দেখতেও অনেক পর্যটক এখানে আসেন।
মসজিদের কাছে হালাল খাবারের রেস্টুরেন্টও রয়েছে যেখানে হুই ও উইগুর জাতির মজাদার খাবার পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী