১। গ্রাফাইটকে শতভাগ পরিশোধনের প্রযুক্তি উদ্ধাবন করলো চীন
২। লিচুর সুপ্ততা নিয়ন্ত্রণকারী জিনের সন্ধান
৩। মঙ্গলে রয়েছে ভূগর্ভস্থ জলাশয়!
গ্রাফাইটকে শতভাগ পরিশোধনের প্রযুক্তি উদ্ধাবন করলো চীন
উচ্চ-তাপমাত্রার মাধ্যমে গ্রাফাইটকে পুরোপুরি পরিশুদ্ধ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি বিকশিত করেছেন চীনের একদল গবেষক। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা গ্রাফাইটকে সফলভাবে পরিশোধন করে ৯৯ দশমিক ৯৯৯৯৫ শতাংশ অতি-উচ্চ পরিশুদ্ধ গ্রাফাইট পণ্য তৈরিতেও সক্ষম হয়েছেন।
এমন সাফল্যের ফলে চীনের অতিশুদ্ধ গ্রাফাইট পণ্যগুলো আন্তর্জাতিকভাবে শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে সম্প্রতি হেইলংচিয়াং প্রদেশের হ্যকাং শহরে অনুষ্ঠিত একটি সংবাদ সম্মেলনে জানান বিশেষজ্ঞরা। চীনের মিনমেটালস কর্পোরেশনের একটি গবেষণা দল এই উদ্ধাবনটি করেছেন।
অতি-উচ্চ পরিশুদ্ধ গ্রাফাইট হলো প্রায় শতভাগ পরিশোধিত কার্বন। এধরনের গ্রাফাইট খুবই মসৃণ, বিদ্যুৎ সুপরিবাহী, মরিচা প্রতিরোধী, উচ্চ তাপমাত্রা প্রতিরোধী এবং বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবেও নষ্ট হয় না।
পরিশুদ্ধ এই গ্রাফাইট বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যাবে। যেমন মোবাইল ফোন, কম্পিউটার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি তৈরিতে, ব্যাটারি, সৌর প্যানেল, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি তৈরি, লুব্রিকেন্ট, পারমাণবিক শিল্পসহ বিভিন্ন উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
গবেষণা দলের প্রধান ওয়াং চিয়ংহুই জানান, গ্রাফাইট দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম উৎপাদনকারী নেতৃস্থানীয় কোম্পানিগুলোর সহযোগিতায় গ্রাফাইট শুদ্ধকরণ প্রযুক্তিটি বিকশিত করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে গ্রাফাইটকে একাধিক ধাপে পরিষ্কার করা হয়। প্রথমে গঠনগত এবং রাসায়নিক পদ্ধতিতে গ্রাফাইটকে পরিষ্কার করা হয়। তারপর নিম্ন ও উচ্চ তাপমাত্রায় এবংসব শেষে আল্ট্রা হাই ভ্যাকুয়ামে পরিশোধন করা হয়। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে গ্রাফাইটের শুদ্ধতা 95 শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯৯.৯৯৯৯৫ শতাংশ করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। এর ফলে গ্রাফাইটের গুণমান অনেক ভালো হয়েছে।
মিনমেটালস কর্পোরেশনের কোম্পানির মালিকানাধীন হ্যকাংয়ের ইউনশান বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাফাইট খনি। এই খনি থেকে প্রতি বছর প্রায় ২ লক্ষ মেট্রিক টন গ্রাফাইট উৎপাদন করা হয়। এই খনিতে উৎপাদিত গ্রাফাইটকে আরও ভালোভাবে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াকরণও করা হয়।
চীনের এই অর্জন বিশ্বের গ্রাফাইট শিল্পে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। এই উচ্চ-শুদ্ধতার গ্রাফাইটের সাহায্যে আরও উন্নত এবং কার্যকরী ইলেকট্রনিক্স, ব্যাটারি এবং অন্যান্য প্রযুক্তি তৈরি করা সম্ভব হবে।
|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
লিচুর সুপ্ততা নিয়ন্ত্রণকারী জিনের সন্ধান
লিচুর নতুন কুঁড়ি জন্মানোর দিনক্ষণ নিয়ন্ত্রণকারী এলসিএসভিপি-২ নামের একটি জিন সম্পর্কে আগেই জানতেন বিজ্ঞানীরা। এবার সেই জিনের নতুন একটা কাজের সন্ধান পেলেন সাউথ চায়না অ্যাগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। হর্টিকালচার রিসার্চ জার্নালে তাদের এ গবেষণার কিছু ফলাফল প্রকাশ হয়েছিল এ বছরের মাঝামাঝিতে। সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান জার্নাল ফিজ ডট অর্গে প্রকাশ হয়েছে এ গবেষণার আরও কিছু নতুন দিক।
গবেষণাটি মূলত লিচুর কুঁড়ির সুপ্ততা বা নতুন পাতা গজানোর সময়সীমা নিয়ন্ত্রণকারী জিন এলসিএসভিপি-২’কে ঘিরেই। গবেষক ড. রেন-ফাং চেং ও তার দল দেখেছেন, ওই জিনটি শুধু নতুন কুঁড়ি নয়, লিচুর ফুলের বিকাশকালও নিয়ন্ত্রণ করছে। জিনটির একসঙ্গে দুটো কাজের এ নমুনা দেখে গবেষকরা জানালেন, অন্য ফলগাছের মৌসুম কিংবা ফলনের সময়কালও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এই জিনটি।
আরএনএ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত রিভার্স জিনেটিক প্রযুক্তি হলো ভাইরাস ইনডিউসড জিন সাইলেন্সিং। জিনেটিক বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে সংক্ষেপে বলা হয় ভিগস। এই ভিগস কৌশল কাজে লাগিয়ে কোনো একটি জিনকে অকার্যকর করা যায়। আর এভাবে এলসিএসভিপি-২ জিনটিকে অকার্যকর করা হলে তা লিচু গাছে কুঁড়ির সুপ্ততা আনার গতি কমিয়ে দেয়। এতেও পরিষ্কার হয়, গাছের ফলন ও বৃদ্ধির মৌসুম নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি আছে মূলত এ জিনটির হাতে। আবার যে কৌশলে জিনের তথ্য ডিএনএন থেকে আরএনএ’তে রূপান্ত হয়, তেমন একটি ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর এলসিএসএমওএস-১ নামের আরেকটি উপাদানের ওপর প্রভাব খাটাতে পারে এলসিএসভিপি-২। পরের ওই ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টরটিও কিন্তু কুঁড়ির সুপ্ততা নিয়ন্ত্রণে জড়িত।
এদিকে অ্যাবসিসিক অ্যাসিড হলো উদ্ভিদে থাকা এমন এক হরমোন যা উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার বৃদ্ধি এবং নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ড. রেন-ফাং ও তার দল এখন অ্যাবসিসিক অ্যাসিডের ওপর এলসিএসভিপি-২ ও এলসিএসএমওএস-১ জিন দুটির প্রভাব দেখানোর ব্যাপারটিও জেনেছেন।
ড. রেন-ফ্যাং চেং জানালেন, ‘কুঁড়ির সুপ্তাবস্থা বা ফুলের বিকাশের ক্ষেত্রে এলসিএসভিপি-২ এর যে দ্বৈত ভূমিকা দেখা যাচ্ছে তাতে, লিচুর ফল বেড়ে ওঠার সময় ভেতরকার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে। এই জ্ঞান পরবর্তীতে উন্নত শস্য ব্যবস্থাপনার জন্য অপরিহার্য হবে।’
তিনি আরও জানান, এলসিএসভিপি-২ কীভাবে কুঁড়ির সুপ্ততা এবং ফুল ফোটার সময়কাল নিয়ন্ত্রণ করে সেটা পুরোপুরি ব্যাখ্যা করার ফলে এখন লিচুতে এই প্রক্রিয়াগুলোর উন্নত নিয়ন্ত্রণ কৌশলও তৈরি করা যেতে পারে। এতে করে আরও উন্নত ফলন ও ফলের গুণমান বাড়ানো সম্ভব হবে।
লিচুর মতো চিরহরিৎ অন্য প্রজাতির গাছ নিয়ে গবেষণাকাজেও উদ্যানতত্ত্ববিদ এবং কৃষি বিজ্ঞানীদের জন্য এ গবেষণা কাজে আসবে বলে মনে করছেন ড. রেন-ফাং।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপ-ক্রান্তীয় নানা ফসলের চাষেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে চীনের এ গবেষণা।
|| প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ
|| সম্পাদনা: শুভ আনোয়ার
মঙ্গলে রয়েছে ভূগর্ভস্থ জলাশয়!
মঙ্গল গ্রহের ভূপৃষ্ঠের নিচে একটি বিশাল ভূগর্ভস্থ জলাশয় থাকতে পারে চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে। প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস জার্নালে এ সংক্রান্ত একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১১ দশমিক ৫ থেকে ২০ কিলোমিটার গভীরে রয়েছে এ জলাশয়। যা ভূগর্ভস্থ শিলাগুলো ফাটলের মধ্যে লুকিয়ে আছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেণ এই জলাশয়ে পানির পরিমাণ এত বেশি যে এটি সম্ভবত মঙ্গল গ্রহের পুরোটাকেই একটা বিশাল মহাসাগরে পরিণত করতে পারে!
নাসা মঙ্গল গ্রহে একটা রোবট পাঠিয়েছিল যাকে মার্স ইনসাইট ল্যান্ডার বলা হয়। এই রোবটটা মঙ্গলের ভেতরে কী আছে, সেটা জানার জন্য বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি নিয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে একটি যন্ত্র ছিল ভূকম্প মাপার যন্ত্র। অর্থাৎ পৃথিবীর ভেতরে কী আছে, সেটা জানার জন্য মাটি খুঁড়ে দেখি। কিন্তু মঙ্গলে কেউ গিয়ে মাটি খুঁড়তে পারে না। তাই নাসা এই রোবটটাকে পাঠিয়ে মঙ্গলের ভেতরে কী আছে, সেটা জানার চেষ্টা করেছে। নাসার এই মার্স ইনসাইট ল্যান্ডার থেকে প্রাপ্ত ভূকম্প পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে এই আবিষ্কারটি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা মনে অনুমান করছেন প্রায় ৩ বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গল গ্রহে নদী, হ্রদ এবং এমনকি সমুদ্রও ছিল! কিন্তু আজকে সেই পানি কোথায় গেল? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ভাসান রাইট এই বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন যে মঙ্গলের পানি হয়তো অনেক আগে শুকিয়ে গিয়েছে।
মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল খুব পাতলা হওয়ায়, এই পানি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে উড়ে গিয়ে হারিয়ে গেছে। তবে ভাসান রাইট মনে করছেন এই পানি সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়নি। এটা হয়তো মঙ্গলের মাটির নিচে চলে গেছে। তার নতুন অনুসন্ধানটি ইঙ্গিত করে যে পানি মঙ্গল গ্রহের ভূত্বকের মধ্যে প্রবেশ করেছে।
তবে, মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল পাতলা হওয়ায়, এটি মনে করা হয় যে এটি পৃষ্ঠের জল হারিয়ে ফেলেছে। নতুন আবিষ্কারগুলি ইঙ্গিত দেয় যে জলটি মঙ্গলের পৃষ্ঠের নিচে চলে গেছে। মঙ্গল গ্রহে পানির চক্র কীভাবে কাজ করে, সেটা বুঝলে মঙ্গলের আবহাওয়া, মাটি আর ভেতরের অংশ কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে সেটাও ভালোভাবে বোঝা সম্ভব হবে।
|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার
অডিও সম্পাদনা- নাসরুল্লাহ রাসু
স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী