আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ৫ সেপ্টেম্বর বেইজিংয়ে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার ফোরাম-২০২৪ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মূল ভাষণের প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন যে, এটি চীন ও আফ্রিকার মধ্যে গভীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন প্রেরণার উৎস।
সি তাঁর ভাষণে বলেন যে, চীন ও আফ্রিকার যৌথ প্রচেষ্টা গ্লোবাল সাউথে আধুনিকায়নের ঢেউ নিয়ে আসবে এবং মানবজাতির জন্য তা একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের সম্প্রদায় গড়ে তুলতে নতুন অধ্যায় উন্মোচন করবে।
তিনি চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এমন সমস্ত আফ্রিকান দেশ এবং চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কৌশলগত সম্পর্কের স্তরে উন্নীত করার প্রস্তাব করেন।
তিনি আরও প্রস্তাব করেন যে, চীন-আফ্রিকা সম্পর্কের সামগ্রিক বৈশিষ্ট্যকে নতুন যুগের জন্য অভিন্ন ভবিষ্যতসহ একটি সকল পরিস্থিতির উপযোগী চীন-আফ্রিকা সম্প্রদায়ে উন্নীত করা হবে।
আফ্রিকার নেতাদের সঙ্গে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি সম্মেলনে বক্তৃতায় ও সামাজিক গণমাধ্যমে চীন-আফ্রিকা সম্পর্কের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “চীন-আফ্রিকা অংশীদারিত্ব দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার একটি স্তম্ভ। আজ বেইজিংয়ে, আমি এই সহযোগিতার জন্য জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি এবং বিশ্বব্যাপী আর্থিক স্থাপত্যের গভীর সংস্কারের জন্য জোর দিয়েছি যাতে উন্নয়ন নিশ্চিতে কেউ পিছিয়ে না থাকে।”
তুরস্কের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক গবেষণা বিষয়ক ফাউন্ডেশনের গবেষক ডেনিজ ইস্তিকবাল বলেন, সি’র ভাষণ চীন-আফ্রিকা সম্পর্কের গভীরতা ও ক্রমবিকাশকে প্রতিফলিত করেছে।
ইস্তিকবাল আরো বলেন, “আফ্রিকান দেশগুলোর সাথে চীনের সম্পর্ককে কৌশলগত সম্পর্কের দিকে উন্নীত করার প্রস্তাব করার মাধ্যমে এবং নতুন যুগের জন্য একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎসহ একটি সর্ব-মৌসুমী চীন-আফ্রিকা সম্প্রদায় হিসাবে অবস্থান করে, চীন একটি দীর্ঘমেয়াদী, স্থিতিস্থাপক এবং বহুমুখী সম্পর্কের উপর জোর দিচ্ছে।”
এই গবেষক মনে করেন, প্রেসিডেন্ট সি’র আধুনিকীকরণ প্রস্তাবগুলো বৈশ্বিক বিষয়ে আফ্রিকার জন্য একটি প্রধান অংশীদার হিসাবে তার ভূমিকাকে দৃঢ় করার চীনের অভিপ্রায়কে নির্দেশ করে, যেখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস এবং দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার ভিত্তিতে সম্পর্ককে আরও গভীর করবে।
তাঁর অভিমত, “চীন, আফ্রিকার সাথে তার সম্পর্কের ওপর যে কৌশলগত গুরুত্ব দেয়, তা পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলাদা।”
নাইরোবির ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক এক্স.এন. ইরাকি বলেছেন যে, বক্তৃতাটি মূল বিষয়গুলির উপর খুব মনোযোগী ছিল।
তিনি বলেন, সি’র বক্তব্য, যেমন “আধুনিকীকরণ একটি অবিচ্ছেদ্য অধিকার”, এবং “সুষম ভারসাম্যপূর্ণ উপাদান এবং আধ্যাত্মিক অগ্রগতি আধুনিকীকরণের একটি উচ্চ উদ্দেশ্য”- দেখায় যে চীন আফ্রিকাকে বোঝে।
৪৮ গ্রুপ ক্লাবের চেয়ারম্যান এবং লন্ডন এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের সিইও জ্যাক পেরি বলেন, তার কোম্পানি বৈশ্বিক দারিদ্র্য মোকাবেলা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রেসিডেন্ট সি’র ভাষণে ঘোষিত ভবিষ্যত পরিকল্পনাগুলোকে নতুন প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনের উদ্দীপনা হিসেবে দেখে।
কেপ টাউনের নেলসন ম্যান্ডেলা স্কুল অফ পাবলিক গভর্ন্যান্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কার্লোস লোপেস বলেন, বহুপাক্ষিকতার প্রতিরক্ষায় চীন-আফ্রিকান স্বার্থকে একীভূত করার ক্ষমতার মধ্যে সি’র বক্তৃতার তাৎপর্য রয়েছে।
তিনি বলেন, সবুজ পরিবর্তন, ডিজিটাল অগ্রগতি এবং প্রযুক্তিগত রূপান্তরের উপর ফোকাস, টেকসই ও আধুনিক প্রবৃদ্ধির পথের দিকে কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
কেনিয়ার আফ্রিকা পলিসি ইনস্টিটিউটের চীন-আফ্রিকা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ডেনিস মুনেনে বলেন, “সি’র বক্তব্য আন্তরিকতা, বাস্তব ফলাফল, বন্ধুত্ব এবং সৎ বিশ্বাসের প্রকৃত নীতির উদাহরণ দেয়। পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং অভিন্ন সুবিধার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, সি’র ভাষণ একটি আফ্রিকান নবজাগরণের স্বপ্নকে পুনরুজ্জীবিত করেছে।”
আফ্রিকা যাতে সত্যিকারের আধুনিকায়নের অভিজ্ঞতা লাভ করে তা নিশ্চিত করার জন্য, প্রেসিডেন্ট সি’র ১০টি অংশীদারিত্বমূলক কর্মপরিকল্পনা ঘোষণার কথা উল্লেখ করে মুনেনে বলেন, এটি দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক চীন-আফ্রিকা সহযোগিতায় বিপ্লব ঘটাবে।
মাহমুদ হাশিম
সিএমজি বাংলা, বেইজিং।