বন্ধুরা, গত বছরের যুব দিবসের সময় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিশেষ করে চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি উঠান নামক প্রকল্পের জন্য অংশগ্রহণকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চিঠি লিখে তাঁদের উত্সাহ দেন। এই বিজ্ঞান-প্রযুক্তি উঠান কেমন প্রকল্প, যা নিয়ে দেশের শীর্ষনেতাও চিন্তাভাবনা করেন? চীন ছাড়া এই প্রকল্প বিদেশের জন্য কিভাবে উপকারী? আজকে এ বিষয়ে কথা বলবো।
বেইজিংয়ে অগাস্ট মাসে মধ্যাহ্নের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ছিল, মালাউইয়ান ছাত্র ফিরি এবং তার সহপাঠীরা চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষামূলক ক্ষেত্রে সয়াবিনের বৃদ্ধি পরিদর্শন করছিলেন।
বেশ কিছু দিন আগে, তিনি তার নিজ শহর থেকে চীনে ফিরে আসেন এবং সয়াবিনের বৃদ্ধিতে উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাবের তথ্য সংগ্রহ করতে মাঠে ছুটে যান। তিনি বলেছিলেন, এটা তার পড়াশোনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
ফিরি বলেন, "এই সব জিনিস যা আমরা দেখি, আমরা পরীক্ষা করি যে, চিকিত্সাগুলো কাজ করছে কিনা এবং তারপরে আমরা দেখবো পরের বার এটি এড়াতে আমাদের কী করা উচিত। আমাদের এটি কী রোগ তা পরীক্ষা করতে হবে এবং আমরা এটি রেকর্ড করবো।”
ত্রিশ বছর বয়সী ফিরি একজন কৃষিবিদ। তিনি বলেছিলেন যে, মালাউইতে ২ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই ক্ষুদ্র কৃষক। ফসলের রোগ ও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদ্ধতির অভাবের পাশাপাশি আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির অভাবে, অনেক কৃষক নিজেদের খাওয়ার মতো পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করতে পারত না।
ফিরি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্জিত জ্ঞানের মাধ্যমে সবুজ কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধির আশা করেন।
ফিরি বলেন ‘যদি আমরা মাটি পরীক্ষা করি এবং ফলাফল পাই, আপনি দেখতে পাবেন যে, একটি গ্রামে তাদের শুধুমাত্র নাইট্রোজেন প্রয়োজন। কিন্তু আমরা তাদের বিশুদ্ধ নাইট্রোজেন দিতে পারি না। কারণ আমাদের কাছে শুধুমাত্র কম্পাউন্ড সার আছে। তাই, যদি আমরা নিজেই তা তৈরি করতে পারি, তাহলে তা সাহায্য করতে পারে।"
তথ্য সংগ্রহ শেষ করার পর, ফিরি তার সহপাঠীদের ভুট্টার বৃদ্ধির মূল্যায়ন করতে তার উচ্চতা এবং ডাঁটার বেধ পরিমাপ করতে সাহায্য করেন।
এটি ছিল মালাউই কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় ভুট্টা বিশেষজ্ঞ লিরার পরীক্ষামূলক প্রকল্প। তিনি ও ফিরি উভয়েই একটি সমবায় স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রোগ্রামে যোগদান করেছিলেন, যা "চীন-আফ্রিকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উঠান" নামে পরিচিত।
লিরা বলেন যে, মালাউইতে ভুট্টা প্রধান ফসল, কিন্তু হেক্টর প্রতি ফলন মাত্র ১৩০ থেকে ২০০ কিলোগ্রামের মধ্যে। গত বছর, তিনি মালাউইতে ফিরে গিয়েছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখা কৌশলগুলো প্রয়োগ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। ফলাফল প্রত্যাশার চেয়ে অনেক ভালো।
লিরা বলেন, "আমরা গত বছর কৃষকদের কাছে অপ্টিমাইজেশনের এই প্রযুক্তিটি চালু করেছি। আমরা দেখেছি যে, একটি খুব ভাল পরিবর্তন হয়েছে। কারণ, আমরা তাদের আগের ফলনের থেকে তাদের ফসলের ফলন তিনগুণ এবং দ্বিগুণ করেছি। তাই এই প্রযুক্তি উচ্চ ফলন অর্জন করা কৃষকদের জন্য খুবই ভালো এবং যদি এটি অব্যাহত থাকে তবে কৃষকরা খাদ্য নিরাপত্তা পেতে পারে, যা দেশের উন্নয়নের জন্য ভালো হতে পারে।
গত বছর, ফিরি এবং অন্য পাঁচ সহপাঠী মালাউইয়ের একটি গ্রামে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছিল। তারা বলেন, প্রকল্পের মূল কাজ হল প্রযুক্তিবিদ ও কৃষকদের একসঙ্গে কাজ করা। শুধুমাত্র এই প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার মাধ্যমে এবং কৃষকদের কাছে প্রযুক্তি কীভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তা বোঝার মাধ্যমেই প্রযুক্তি সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়িত হতে পারে।
ফিরি বলেন, "আপনি দেখতে পাচ্ছেন, কৃষকরা কতটা খুশি ছিল, তাদের ক্ষেত থেকে উচ্চ ফলন পাওয়া যায়।", ফসল কাটার আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার জন্য গর্বিতভাবে ফটোগুলো দেখিয়েছেন।
গত নভেম্বরে, মালাউই তিনটি নতুন "বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উঠান" প্রতিষ্ঠা করেছে। শেখা ও অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হওয়ার সাথে সাথে, ফিরি মালাউইয়ের কাসুঙ্গু জেলার লিসাসাদজিতে উঠান প্রকল্পের প্রধান হন এবং তিনি তার দেশে আরও বেশি অবদান রাখার প্রত্যাশা করেন।
ফিরি বলেন, "আমাদের নিজস্ব সার তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে এসে, এই তৃতীয় বছর, আমি আশা করছি যে আমি যদি সার তৈরি করা শিখতে পারি, তাহলে এটি আমাদের দেশের জন্য সাহায্য করতে পারে।"
২০১৯ সালে চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চালু করা চীন-আফ্রিকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উঠানের লক্ষ্য আফ্রিকায় একদল কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন প্রতিভা গড়ে তোলা, যারা শুধু আধুনিক কৃষি উৎপাদন তাত্ত্বিক জ্ঞানই রাখে না বরং কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক ব্যবহারিক দক্ষতাও রাখে।
অনুশীলনের সাথে তাত্ত্বিক অধ্যয়নের সমন্বয়ে একটি অনন্য চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে, ফিরি ও লিরার মতো বিদেশি শিক্ষার্থীরা তাদের প্রথম বছর চীনে কৃষি তত্ত্ব এবং দক্ষতা অধ্যয়ন করেন এবং তাদের নতুন অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগ করার জন্য তাদের দেশে ফিরে যান। তাদের তৃতীয় বছরে, তারা তাদের পড়াশোনা শেষ করার জন্য চীনে ফিরে আসে।
শিক্ষার্থীদের কৃষি প্রযুক্তি আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করার জন্য, বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের উত্তর চীনের হ্যবেই প্রদেশের ছুই চৌ জেলার কৃষি বেসের কৃষকদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়, যেখানে তারা সরাসরি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।
আজ পর্যন্ত, বিশ্ববিদ্যালয়টি মালাউই, জাম্বিয়া ও তানজানিয়া সহ সাতটি আফ্রিকান দেশে "বিজ্ঞান প্রযুক্তির উঠান" তৈরি করেছে। প্রকল্পটি ৯১জন কৃষি পেশাদার ব্যক্তি লালন করেছে। যাদের মধ্যে ৩৬জন ইতিমধ্যে স্নাতক হয়েছে। অনেকে তাদের দেশে কৃষি উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য তাদের নতুন জ্ঞান ব্যবহার করার কাজ বেছে নিয়েছে।
উঠান প্রকল্পের দায়িত্বশীল ব্যক্তি, চীনের নর্থওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ ও পরিবেশ ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক চিয়াও সিয়াও ছিয়াং বলেন, "আমরা আফ্রিকার বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উঠানের মডেল স্থানীয়করণ এবং প্রয়োগের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিয়েছি। ভবিষ্যতে, আমরা কৃষকদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি উঠানের ধারণা সমর্থন করবো এবং আমাদের কাজকে আরও বিস্তৃত করবো। আফ্রিকান দেশগুলো আফ্রিকায় কৃষি বোঝেন, গ্রামীণ এলাকা ভালোবাসেন এবং কৃষকদের যত্ন নেন এমন উচ্চ-মানের প্রতিভা লালনের পাশাপাশি আরও আফ্রিকান দেশে এই ধারণাটি প্রচার এবং প্রয়োগ করার চেষ্টা করবো।”
(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)